Trending
মুম্বই থেকে দুবাই- দূরত্ব ২ হাজার কিমি। সময় লাগবে মাত্র ২ ঘন্টা। তবে একটা বিষয়। আপনি যদি ভাবেন, এই দূরত্ব বিমানপথে পেরনোর কথা বলছি তাহলে একেবারে ভুল ভাবছেন কিন্তু। কারণ প্লেন নয়, এই দূরত্ব পেরোবে ট্রেন। একইসঙ্গে শুধু যাত্রী নয়, পুরোদস্তুর ব্যবসায়িক স্বার্থে আরব সাগরের তলা দিয়ে ট্রেন ছুটে চলবে। শুনে ভিড়মি খেলেন নাকি? ভাবছেন, কিভাবে সম্ভব? অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার এই ব্লু প্রিন্ট নিয়েই তো কথা বলব আজকের প্রতিবেদনে।
অনেকেই বলেন, শুধু বলেন না বিশ্বাস করেন যে মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। মোদী জমানায় একেকটা মাইলফলক তৈরি হচ্ছে, সেখানে অস্বীকারের কোন জায়গা নেই। তারই একটা নমুনা এই আন্ডারওয়াটার রেল বা অ্যাকোয়া রেল। সমুদ্রগর্ভ দিয়ে ছুটে যাবার সময় যাতে বিন্দুমাত্র কোন জটিলতা তৈরি না হয় তার ব্লু প্রিন্ট রেডি করে ফেলেছে ইউএই। জলের তলা দিয়ে ট্রেন ছুটবে। তাও ২ হাজার কিমি পথ পাড়ি দেবে। সময় লাগবে ঐ দু’ঘন্টা মতন। তার মানে অন অ্যান অ্যাভারেজ ট্রেনের স্পিড থাকতে হবে ঘণ্টায় ১ হাজার কিমি মতন! তার মানে রেল ট্র্যাক থাকবে তো? সেখান দিয়েই তো উদ্দাম গতিতে ছুটে চলবে আন্ডারওয়াটার রেল! কিছুটা ফ্যান্টাসি গল্পের মতন ঠেকছে? না, মানে রেল ট্র্যাকের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় হাজার কিমি স্পিডে ছুটে যাওয়া, নট আ ম্যাটার অফ জোক। একটা প্লেন যেখানে ঘণ্টায় ৬০০ থেকে ১ হাজার কিমি গতিবেগে ওড়ে, সেখানে ট্রেনটা চলবেই ১ হাজার কিমি স্পিডে, অ্যাভারেজে। তাই পৌঁছনো যাবে ২ ঘণ্টায়, ফ্রম মুম্বই টু দুবাই। কিভাবে?
এই আল্ট্রাস্পিডে ট্রেন ছোটার টেকনোলজিটা কিন্তু মাথা ঘুরিয়ে দেবার মতন। কিরকম? আরব সাগরের নিচে স্থাপন করা হবে দুটো বিরাট পাইপ লাইন। নোনা জল এই পাইপ লাইনে প্রবেশ করবে না। সাগরগর্ভে পাইপলাইন যাতে নিজের জায়গায় স্টিক থাকে তার জন্য পাইপলাইন দুটো আটকে রাখা হবে কংক্রিটের তৈরি সারিবদ্ধ কতগুলো ভেসেল দিয়ে। আর এই ভেসেলগুলোর মধ্যেকার দূরত্ব এমনই হবে যাতে জাহাজের যাতায়াতে কোন প্রবলেম না হয়। আর এই পাইপলাইনের মধ্যে থাকবে রেলের ট্র্যাক। কিন্তু এই ট্র্যাক এমনভাবেই তৈরি করা হবে যেন মনে হবে রেল ছুটবে ভাসমান অবস্থায়। আবারও অবাক হলেন মনে হল! ইয়েস, ট্রেন নাকি ভাসমান অবস্থাতেই ছুটতে থাকবে, তার জন্য পাইপের ভেতর কোন হাওয়া থাকবে না। হাওয়া না থাকলে সেটা রেলের গতিপথে বাধাও তৈরি করবে না। ফলে গাড়ির ছুটতেও কোন অসুবিধা হবে না। কিন্তু ভাসমান ট্র্যাক…সেটা কী? সবই টেকনোলজির খেল। ম্যাগনেটিক লেভিটেশন- প্রযুক্তির এই খেল কিস্তিমাৎ করে দেবে। মাইনাস ৪৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ঠাণ্ডা করা ইলেকট্রো ম্যাগনেট রাখা হবে রেলপথ জুড়ে। আর এই ম্যাগনেট গোটা ট্রেনকে শূন্যে ভাসিয়ে একেবারে দৌড় করিয়ে ছাড়বে।
২০১৮ সালে প্রথম এই আন্ডারওয়াটার রেল প্রকল্পের কথা প্রকাশ্যে আসে। পেরিয়ে গিয়েছে মাঝে ৫টা বছর। অবশেষে তাগিদ দেখা গেল অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে গোটা বিশ্বের কাছে প্রযুক্তি এবং অর্থনীতির একটা এগজ্যামপল সেট করে দেবে ভারত এবং ইউএই। জানা গিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির জাতীয় উপদেষ্টা ব্যুরো ইতিমধ্যেই ব্লু প্রিন্ট তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে। ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট, টেকনোলজি এই সবকিছুর জন্য মধ্যপ্রাচ্যে ইউএই ভরসা। আর সত্যি বলতে কি, এই প্রোজেক্ট বাস্তবায়ন করতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের খরচ রয়েছে। ভয়ঙ্কর এক্সপেনসিভ এই প্রোজেক্টে তাই আর্থিকভাবে অনেকটা সাহায্য করবে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশ। তার মানে বিনিয়োগ তাদের, মেধা আমাদের? সেটা জানি না। তবে মধ্যপ্রাচ্য ভারত নিয়ে এখন একটু বেশিই স্পর্শকাতর। চিনের কাছ থেকে ধাক্কা খেয়েছে তারা। আমেরিকার সঙ্গে ওপরে ওপরে না হলেও তলে তলে ঠাণ্ডা সম্পর্ক বজায় রয়েছে। এদিকে যা ভবিষ্যৎ, তারপর কতদিন আর তেল বেচে বড় বড় বাড়ি বানানো সম্ভব? দামি গাড়িতে ঘোরা সম্ভব? প্রাকৃতিক জিনিস- একদিন সেই ভাঁড়ার শূন্য হয়ে পড়বে। তখন? সেই কারণে প্রয়োজন ব্যবসা, প্রয়োজন স্বার্থ। আর স্বার্থের খাতিরেই মুম্বই থেকে দুবাই রেলপথ তৈরির পরিকল্পনা। যদি পুরোটা খাতায় কলমে না হয়ে একেবারে বাস্তব হয়, তাহলে গোটা বিশ্বের কাছে মেসেজ পৌঁছে যাবে আজকের পৃথিবী জিও ইকনমির। শুধু ধর্মীয় ভাবাবেগ দিয়ে মাঠেঘাটে যুদ্ধ করতে নামলে পিছিয়ে পড়তেই হবে। থালা হাতে বসতে হবে রাস্তার ধারে। পাকিস্তানের কথাটা মাথায় এলো তো? সেটাই স্বাভাবিক। কারণ দেশটার ইকোনমি বাঁচিয়ে রেখেছে দুটি সেক্টর। তেল আর ট্যুরিস্ট। সুতরাং ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে এটা ভারত এবং ইউএই-র জন্য দুর্দান্ত একটা অ্যাম্বিশাস প্রোজেক্ট হতে চলেছে। এখানেই একটা ইনফরমেশন দিয়ে রাখি। আন্ডারওয়াটার রেল প্রোজেক্টের এই ভাবনাচিন্তা কিন্তু আনকোড়া একেবারেই নয়। কারণ ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের মধ্যে এই ধরণের একটা পরিষেবা রয়েছে। তবে বলতে দ্বিধা নেই যে, মুম্বই টু দুবাই আন্ডারওয়াটার রেল প্রোজেক্ট একেবারে অন্যভাবে হতে চলেছে। সেটা টেক্কা দেবে ইউকে এবং ফ্রান্সকে। ভারতের সঙ্গে ইউএই-র ট্রেড খুব শক্তপোক্ত। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের অঙ্কটা প্রায় ৭৩ বিলিয়ন ডলার মতন। খুব শীঘ্রই দুই দেশের মধ্যে অঙ্কটা ১০০ বিলিয়নের রেকর্ড ছুঁতে পারে। কম সময়ে যত বেশি পণ্য যাতায়াত করবে ততই ব্যবসা বাড়বে। এই আন্ডারওয়াটার রেলপথ ধরে মানুষের পাশাপাশি বিশুদ্ধ জল, তেল, ন্যাচারাল গ্যাসের মতন পণ্য আমদানি রফতানি করা হবে। সব মিলিয়ে মুম্বই থেকে দুবাই আন্ডারওয়াটার রেল প্রোজেক্ট যেন ইকোনমিতে বিগ বুম আনতে চলেছে। শুধু প্রশ্নটা হলঃ কবে এই প্রোজেক্ট কমপ্লিট হবে? সেটা জানা নেই এখনো। আপনাদের এই প্রোজেক্ট নিয়ে কী মতামত? জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন, শেয়ার করুন আর সাবস্ক্রাইব করুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ