Trending
দুর্ধর্ষ মরক্কো। ডিফেন্স থেকে মিডফিল্ড, স্ট্রাইকার, গোলকিপার- প্রত্যেকের স্ট্র্যাটেজিতে জাস্ট তাক লেগে গিয়েছিল গোটা বিশ্বের। আর যে স্ট্র্যাটেজির কারণে ট্র্যাজেডি নামে টুর্নামেন্ট জুড়ে। পর্তুগাল ভার্সেস মরক্কোর কোয়ার্টার ফাইনাল। যে পারফরম্যান্সের জেরে ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে মরক্কোর সর্বকালীন রেকর্ড। আগে যেখানে মরক্কো সর্বচ্চ সেকন্ড রাউন্ড অবধি পৌঁছতে পেরেছিল, সেখানে এইবার স্পেনকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেই রেকর্ড গড়েছিল তারা। প্রথমে বেলজিয়াম, তারপর স্পেন আর সবশেষে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো দুর্ভেদ্য প্রাচীর ভেঙে সেমিফাইনাল যাত্রা মরক্কোর ইতিহাসে তো বটেই, বিশ্বকাপ ২০২২কেও একটা অন্য মাত্রা দিয়েছে। বিশ্বকাপে লেখা হয়েছে মরক্কান রূপকথা। কিন্তু কোন স্ট্র্যাটেজিতে বাজিমাৎ করলো মরক্কো? কী ছিল মরক্কোর মাস্টারপ্ল্যান?
মরক্কো। প্রথম আফ্রিকান কান্ট্রি যা ফুটবল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। ১৯৭০-এর মেক্সিকান ওয়ার্ল্ডকাপে প্রথম মাঠে নামে মরক্কো। এরপরের বিশ্বকাপ খেলতে তাকে অপেক্ষা করতে হয় ১৯৮৬ অবধি। তারপর ১৯৯৪ আর ১৯৯৮ এর ফুটবল বিশ্বকাপে জায়গা করে নিলেও গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় দলটিকে। ২০০২,২০০৬,২০১০,২০১৪ বিশ্বকাপে বিদায় নিতে হয় চূড়ান্ত পর্ব থেকেই। তবে ২০১৮তে রাশিয়া বিশ্বকাপে অসাধারণ কামব্যাক ছিল মরক্কোর। কী এনার্জি, কী অসামান্য টিম গেম! কিন্তু এতকিছুর পরেও দুর্ভাগ্যজনকভাবেই বিদায় নিতে হয় টুর্নামেন্ট থেকে। এবারেও কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই সেমিফাইনালে দ্য ডার্ক হর্স অফ দ্য টুর্নামেন্ট, মরক্কো। যা মরক্কোর ভৌগলিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বেশ ভালোরকম প্রভাব ফেলবে বলে অভিমত ক্রীড়া বিশেষজ্ঞদের।
আসলে, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে একটা স্পেসিফিক পলিসি ফলো করে আসছিল মরক্কান ন্যাশানাল টিম। যেখানে তারা ইউরোপে বেড়ে ওঠা প্রবাসী মরক্কান প্রতিভাকে একজোট করে তুলছিল। এবারে ২৬ জনের মরক্কান স্কোয়াডে ১৪ জনই ছিল সেই প্রবাসী মরক্কান প্রতিভা। তার মানে কি দেশীয় প্লেয়ারদের উপরে আস্থা রাখতে পারেননি কর্মকর্তারা? না, তেমনটা একেবারেই না। এজাকি বাদু, মেহেদী বেনাতিয়া, আবদেররহমান মাহজুব, সালাহদিন বশির, আহমেদ ফারাজ, মুস্তাফা হাজি, নুরুদিন নেইবাৎ – কিংবদন্তীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু, মরক্কান ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল যেহেতু ইউরোপে প্রবাসী মরক্কান অধিবাসী রয়েছেন প্রায় ৬১ শতাংশ, তাই সেখান থেকে স্ট্রং ফুটবলার খুঁজে শক্তিশালী টিম গঠন করতে। ওয়ার্ল্ড কাপ যখন লক্ষ্য, তখন এসব স্ট্র্যাটেজি অ্যাপ্লাই করাতে কোন অন্যায় নেই। যদিও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর একাধিকবার সমালচনার মুখে পড়তে হয় মরক্কান ফুটবল ফেডারেশনকে। তবে, এতকিছুর পরেও প্রতিভা ও কার্যকারিতাকেই শীর্ষে রাখে মরক্কো।
গত তিন দশক ধরে আফ্রিকার সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক মানচিত্রে একটা বড় জায়গা দখল করেছে ফুটবল। মহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা যার উন্মাদনায় একজোট হয় গোটা মহাদেশ। একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, ২০২১-এ আফ্রিকা কাপ অফ নেশনস প্রায় ১৫৭ টি দেশে সম্প্রচার করা হয়, যার ৬৫ মিলিয়ন দর্শক ছিল শুধুমাত্র নাইজেরিয়াতেই। এছাড়াও টিকটক সহ আরও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রায় ২.৫ মিলিয়নের বেশি এনগেজমেন্ট পায় ইভেন্টটি। আর এইবছর ইউরোপীয় পাওয়ারহাউস বেলজিয়াম, স্পেন আর পর্তুগালের বিরুদ্ধে এই চাঞ্চল্যকর জয়, ইতিহাস তৈরি করেছে। আর এই জয় শুধু মরক্কোর নয়। হোস্ট কান্ট্রি কাতারেরও। কারণ এমন অসাধারণ ইতিহাস যে জমিতে লেখা হয়েছে, সেটা তো অবশ্যই কাতার। আর তার প্রভাব কাতারের ইকনমিতে পড়বে না? এমন আবার হয় নাকি?
এবারের ওয়ার্ল্ড কাপে যে সমস্ত টুইস্ট এসেছে, তা এর আগে ওয়ার্ল্ড কাপ হিস্ট্রিতে হয়েছে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এশিয়ান কান্ট্রি হিসেবে জাপানের অসাধারণ উত্থান, মরক্কোর জয়, সবমিলিয়ে এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ হয়ে উঠেছে আরও বেশি আকর্ষণীয়। আর এবার ফ্রান্সের মুখোমুখি হওয়ার পালা মরক্কোর। টিকিট টু ফিনালে কার ঝুলিতে ওঠে, এখন সেটাই দেখার। দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ