Trending
নৌকাডুবি হয়েছে আদানি সাম্রাজ্যের। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরেই। অভিযোগ, বিশ্বের তৃতীয় ধনীতম ব্যক্তি শেয়ার বাজারে কারচুপি করে নিজের সাম্রাজ্যকে এভাবে ডালপালা ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন। হিন্ডেনবার্গের চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট আদানিকে টেনে নামিয়ে দিয়েছে অনেকটাই। আজ তিনি বিশ্বের প্রথম কুড়িজনের মধ্যেও নেই। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আদানি কিভাবে নিজের ভবিষ্যৎ প্ল্যানিং করবে সেটা আগামী ঠিক করবে। তবে হ্যাঁ, এর মধ্যেও একটা বিষয়। আদানি কিন্তু আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ফের শেয়ার বাজারে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে আদানির শেয়ার। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে যে, আদানির সঙ্গে মোদীর খুঁজে পাওয়া সম্পর্ক। সুতো ধরে টান দিলে দেখা যাচ্ছে যে, আদানির ভবিষ্যৎ যতই দোলাচলে থাকুক না-কেন, মোদী জমানায় আদানির সম্পত্তির পরিমাণ এতোটাই বেড়েছে যে সেটা রূপকথার থেকে কোন অংশে কম নয়। তাই আজকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা যাক আদানির সেই বিশাল সাম্রাজ্য নিয়ে। মানে, আদানির নিজের কত ব্যক্তিগত সম্পত্তি রয়েছে বা আর কী কী রয়েছে- সেটা নিয়েই কথা বলব। তার সঙ্গে মোদী জমানায় যে আদানীর দারুণ উত্থান হয়েছে সেটা নিয়েও বলব দু’চার কথা।
বিলাসবহুল বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি, সঙ্গে রয়েছে বিমান এবং জাহাজ। আর কি চাই বলুন তো? আদানি- যার কিনা একটা সময় তেমন দানা-পানি ছিল না, তিনি নিজের চেষ্টায় নিজের সাফল্য তুলে ধরতে পেরেছিলেন। কিন্তু তখনো আদানি এমন একজন বিজনেসম্যান ছিলেন, যাকে আমজনতা সেভাবে চিনতই না। ব্যপারটা হল, মোদী সরকার আসার পর থেকেই আদানি যেন ধীরে ধীরে মানুষের কাছে পরিচিতি পেতে শুরু করলেন। তারপর একেবারে বিশ্বের তৃতীয় ধনীতম ব্যক্তির শিরোপা। অতিমারি সময়ে আদানির সম্পত্তি যেভাবে বেড়েছে, সেটা বিল গেটস, ইলন মাস্কের মত বিত্তবানদের লজ্জায় ফেলে দিতে পারে। আর অম্বানির কথা তো ছেড়েই দিলাম। এভাবে হঠাৎ উত্থান আদানিকে নিয়ে বিশ্ব বাজারে অনেকের মনে প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছিল। আজ শে আদানির শেয়ারে রক্তক্ষরণ অব্যাহত থাকলেও, আদানির ব্যক্তিগত সম্পত্তির তালিকা কিন্তু দীর্ঘ। আসুন, আগে সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।
২০২০ সালে আদানি একটি প্রাসাদের সমান অট্টালিকা কেনেন দিল্লিতে। ৩.৪ একর জমি জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এই অট্টালিকা। দাম পড়েছে ৪০০ কোটি টাকা।
আহমেদাবাদে মিঃ আদানির নিজস্ব একটি অট্টালিকা রয়েছে। বলতে গেলে এটাই আদানির নিত্যদিনের বাসভবন। এখানেই সপরিবারে থাকেন আদানি। এই অট্টালিকার বাজারমূল্য কত- সে ব্যপারে জানা যায় না কিছুই।
আদানি গ্রুপের হাতে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাইভেট জেট। রয়েছে হেলিকপ্টার। তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বোম্বার্ডিয়ার, হকার, বিচক্র্যাফট। মিঃ আদানি এই সকল প্রাইভেট জেটেই দেশে-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করেন। জানা গিয়েছে, আদানি গোষ্ঠীর হাতে সবচেয়ে কম দামি যে বিমানটি রয়েছে তার দাম ১৫ কোটি টাকার বেশি। এছাড়াও আদানি সবচেয়ে বেশি যে হেলিকপ্টারে যাওয়া পছন্দ করেন তার নাম অগাস্টা ওয়েটল্যান্ড এডব্লু ১৩৯। ঘণ্টায় ৩০০ কিমি বেশি চলতে পারে এই হেলিকপ্টার।
প্রাইভেট জেট, হেলিকপ্টার ছাড়াও আদানি বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়ির মালিক। তার মধ্যে অন্যতম লাল ফেরারি এবং বিএমডব্লু ৭। লাল ফেরারি গাড়িটির দাম প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। এছাড়া আদানি নিজের জন্য কিনেছেন রোলস রয়্যালস ঘোস্ট। এই গাড়ির দাম প্রায় সাড়ে ছ’কোটি টাকা মতন।
আদানি গোষ্ঠীর হাতে রয়েছে ১৭টি জাহাজ। মূলত ব্যবসার জন্য এই জাহাজগুলি সমুদ্রপথে হামেশাই ঘোরাফেরা করছে এক দেশ থেকে অন্য দেশে। জানা গিয়েছে গোটা দেশে ১৩টি জাহাজবন্দর রয়েছে এখন আদানি গোষ্ঠীর হাতে।
আর এগুলো ছাড়াও আদানির হাতে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত কয়লা খনি কারমাইকেল। এটি দেশের বৃহত্তম কয়লাখনিও বটে। জানা গিয়েছে, আগামী তিন বছর ধরে এই খনিটি বছরে ১০ মিলিয়ন টন কয়লা জোগান দেবার ক্ষমতা রাখবে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের আগে আদানির সম্পত্তির পরিমাণ যা ছিল সেটা কিন্তু তেমন একটা চোখে পড়ার মত নয়। দেশের বিরোধী দলগুলো ইতিমধ্যেই মোদীর সঙ্গে আদানির বন্ধুত্বের বিষয়টা নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। ইতিমধ্যেই আদানির সম্পপতির জাতীয়করণ হওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন ইয়েচুরি। অন্যদিকে রাহুল গান্ধী একের পর এক প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তাঁর একটা প্রশ্ন ইতিমধ্যেই চরম অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে বিজেপি সরকারকে। ২০১৪ সালে আদানির সম্পত্তি যেখানে ছিল ৮ বিলিয়ন ডলার মতন, ২০২২-এ সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১৪০ বিলিয়ন ডলার। কিভাবে সম্ভব? এই প্রশ্নই ছুঁড়েছেন তিনি। একইসঙ্গে অভিযোগ তুলেছেন, আদানি এবং মোদীকে বহুবার বিদেশ সফর করতে দেখা গেছে। এমনকি মোদী নিজেও আদানি লেখা প্রাইভেট প্লেন থেকে হাসিহাসি মুখে ছবি দিয়েছেন। তাহলে কি বিরোধীদের অভিযোগ সত্যি বলেই ধরে নিতে হবে? বিজেপি সরকারের হাত মাথায় থাকার কারণেই কি আদানি সাম্রাজ্যের বেলুন এতো উঁচুতে উঠেছিল? হিন্ডেনবার্গ তো সেই বেলুনেই সূচ ফুটিয়ে দিল। জানা গিয়েছে, আদানি গ্রুপ ৯ লক্ষ ৭৩ হাজার ৪০১ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তবে ঐ শুরুতেই যেটা বললাম। আদানি গ্রুপের শেয়ার কিন্তু ফের বাড়ছে। যদিও এখনো পর্যন্ত আদানি আগের মত বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গাটা এখনো তৈরি করতে পারেননি। তবে হ্যাঁ, জানা যাচ্ছে যে নিজের রেপুটেশন অক্ষত রাখার কারণেই আদানি গোষ্ঠী নাকি একটি ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণের অঙ্ক পরিশোধ করতে পারবেন সময়ের আগেই। অঙ্কটা কত জানেন? প্রায় ৫০ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ইতিমধ্যে আরবিআই-এর গভর্নর শক্তিকান্ত দাস নিজেও ভরসা জুগিয়েছেন যে, আদানি গোষ্ঠীর জন্য ভারতীয় ব্যাঙ্কিং সেক্টর সেভাবে টলোমলো হবে না। কারণ, তিনি মনে করেন ভারতের ব্যাঙ্কিং সেক্টর যথেষ্ট শক্তিশালী রয়েছে। তবু যত যাই হোক, ভয়ভীতি কাজ তো করেই।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ