Daily
একেই বলে উলটপুরাণ। ক্ষমতায় বসার আগে যে তীর ছুঁড়ে ছিলেন এবার সেই তীরেই বিদ্ধ হলেন নরেন্দ্র মোদি। তাও ক্ষমতায় বসার সাত বছর পর।
নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তখন দিল্লিতে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। কারণে অকারণে তৎকালীন বিজেপির এই পোস্টার বয় নরেন্দ্র মোদি মনমোহন সিংহের সরকারকে নীতি পঙ্গুত্বের সরকার বলে প্রায় তোপ দাগতেন।
নরেন্দ্র মোদির মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ ছিল, এই সরকারের কোন মেরুদন্ড নেই। কোনো নীতি নেই। কোন শক্তি সামর্থ্য নেই। তাই ভারতের লোকের কষ্টের টাকা আজ কালো টাকা হয়ে আটকে রয়েছে সুইস ব্যাংকে। সেই কালো টাকা উদ্ধারের কোনো ক্ষমতাই নেই মনমোহন সিংহের।
মনমোহন সিংহের অর্থনীতি থেকে বিদেশনীতি। পাকিস্তান থেকে কাশ্মীর সবই ছিল মেরুদণ্ডহীন। বিজেপি যদি কেন্দ্র নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে তবে সবার প্রথমে সরকারের নীতি পঙ্গুত্বতা দূর করে বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা উদ্ধার করবে। বিদেশে এত পরিমাণ কালোটাকা গচ্ছিত আছে যে, যদি তা ভারতবর্ষে প্রতিটা লোকের মধ্যে বন্টন করা হয় তবে একেক জন গরিব ভারতীয়র ভাগ্যে জুটবে ১৫ লক্ষ টাকা।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মনমোহন সিংহের সরকার বদলে গিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসীন হন নরেন্দ্র মোদি। পার হয়ে গেল সাত সাতটা বছর। বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা উদ্ধারের পরিবর্তে শুধু সুইস ব্যাংকে গচ্ছিতের পরিমাণ পরিমাণ হল বিগত ১৩ বছরের মধ্যে রেকর্ড। মোট ২০,৭০০কোটি টাকা।
কেন্দ্রে এখন ক্ষমতায় মোদি। আর বিরোধী আসনে কংগ্রেস। কংগ্রেস তাই দাবি তুলেছে, মনমোহন সিংহের সরকার না হয় মেরুদণ্ডহীন ছিল। কিন্তু ৫৬ ইঞ্চির মোদি সরকারের কালো টাকা উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল? কেন সুইস ব্যাংকের বিরুদ্ধে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করতে পারলেন না মোদিজি? তবে কি মোদিজীর সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের গায়ে শুধুমাত্র পাকিস্তানের নাম লেখা আছে?
শিবসেনা, তৃণমূল, আপ সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি আজ বলতে শুরু করেছেন এগুলি ছিল মোদিজীর নির্বাচনী জুমলা। মোদীজি বুঝতে পারেননি নিজের অস্ত্রে নিজেই শেষ পর্যন্ত ঘায়েল হবেন।
করোনার সময় অর্থনীতি যখন সংকুচিত, কর্মহীন প্রায় দেড় কোটিরও বেশি মানুষ। মাথাপিছু আয় যখন ভারতে ক্রমশ সংকুচিত অবস্থায় ঠিক তখনই কংগ্রেস এই প্রশ্ন তুলে মোদীজিকে ঠিক কি বার্তা দিতে চাইলেন? এটা আদৌ মোদিজীর নির্বাচনী জুমলা না অন্য কিছু তা কিন্তু প্রমাণ করতে হবে স্বয়ং নরেন্দ্র মোদিকেই। নতুবা কুঁচকে যাওয়া মোদী বেলুনে যে হাওয়া দেওয়ার মত লোক পাবেন না বিজেপির এই পোস্টার বয়।
ব্যুরো রিপোর্ট, বিজনেস প্রাইম নিউজ।