Trending
এগিয়ে চলেছে ভারত। ইন্ডিয়ান ইকোনমিকে দুর্দান্ত একটা বুম দেবার জন্য মোদী সরকার দিয়েছে একের পর এক মাস্টারস্ট্রোক। হ্যাঁ, ৮ বছরে মোদী সরকারের মাস্টারস্ট্রোকগুলো হয়ত নিজের দেশের মধ্যেই প্রচুর বিরোধিতা তৈরি করেছে। কিন্তু সত্যি বলতে কি, আপনি মানুন বা নাই মানুন। মোদী সরকারের আমলে ইন্ডিয়ান ইকোনমি মজবুত হচ্ছে ভালোরকম। ২০১৪ সালে যেখানে ভারতের ইকোনমি বিশ্বের দশম বৃহত্তম অর্থনীতি ছিল, সেখানে ২০২৩-এ ভারতের ইকোনমি ৫ নম্বর র্যাঙ্কিং-এ চলে আসবে। আইএমএফ থেকে বিশ্বব্যাঙ্ক- আজ তারাও মেনে নিয়েছে, ভারতের ইকোনমি যদি এভাবে বাড়তে শুরু করে তাহলে নিশ্চয়ই খুব তাড়াতাড়ি মানে ২০২৭ সালের মধ্যেই ইন্ডিয়ান ইকোনমি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ইকোনমিতে পরিণত হবে। তাই আসুন, আজকের প্রতিবেদনে ২০১৪ থেকে যে ৮টি মাস্টারস্ট্রোক মোদী সরকার দিয়েছে, সেগুলো নিয়েই ছোট্ট করে আলোচনা সেরে নেওয়া যাক।
১। GST (GOODS & SERVICE TAX)
১ জুলাই ২০১৭। কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করল জিএসটি বা গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স। জিএসটি আসলে কী? খায় না মাথায় দেয় গোছের ভাবনা তৈরি হল দেশবাসীর মধ্যে। এমনকি বিরোধী নেতারাও সরব হলেন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু ধীরে ধীরে দেখা গেল যে সাধারণ মানুষের মধ্যে জিএসটি নিয়ে যখন আগ্রহ আরও বেশি করে তৈরি হল, তারপর থেকে দেশে ট্যাক্স পেয়ারের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করল। মাত্র ৫ বছরের মধ্যে ইউনিফায়েড ইনডিরেক্ট ট্যাক্সেশন সিস্টেমের আওতায় আনা হয় ১.৩ মিলিয়ন ট্যাক্স পেয়ারকে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের কোষাগারে প্রতি বছর রেকর্ড অঙ্কের জিএসটি ঢুকছে। যা দেশের ওভারঅল ডেভেলপমেন্টের জন্য ব্যবহার করছে ভারত সরকার। এমনকি ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরেও জিএসটি শাপে বড় হয়ে এসেছে।
২। MAKE IN INDIA
অনেক খরচ হয়েছে ইমপোর্ট বাবদ। এবার যা হবে নিজের দেশে। অর্থাৎ, এখানেই তৈরি করো, এখানেই বিক্রি করো। প্রয়োজনে এক্সপোর্ট করো। অর্থাৎ বিপুল কর্মসংস্থানের রাস্তা তৈরি হবে। তাই ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে পিএম মোদী মেক ইন ইন্ডিয়া-র ঘোষণা করেন। যেখানে ২৫টা সেক্টরের ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট বাড়ানোর দিকে তিনি নজর দেন। সেই সময় মেক ইন ইন্ডিয়া নিয়েও কম কাটাছেঁড়া করা হয়নি। কিন্তু দেখা গেল, এটাই ইন্ডিয়ান ইকোনমিকে বুম করতে সাহায্য করল অনেকটা।
Ease of Doing Business: 134 (2014) 63 (2020)
Global Competitiveness Index: 72 (2014) 43 (2021)
Global Innovation Index: 76 (2014) 50 (2021)
Logistic Performance Index: 54 (2014) 35 (2021)
এগুলো ছাড়াও এফডিআই ভারতে খুব ভালোরকম বৃদ্ধি পেয়েছে। মেক ইন ইন্ডিয়াকে সাকসেসফুল করার জন্য ভারত সরকার বেশ কিছু স্কিম নিয়ে এসেছে। তার মধ্যে স্কিল ইন্ডিয়া, স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া, ডিজিটাল ইন্ডিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা কোন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ নয়। ভালো রেজাল্ট পেতে গেলে সময় লাগে। আশা করা যায়, মেক ইন ইন্ডিয়াও সাকসেসফুল হবে খুব তাড়াতাড়ি।
৩। UPI
ইউপিআই বা ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস। বলা যেতে পারে, ইউপিআই ভারতে ডিজিটাল ইকোনমিতে কার্যত বিপ্লব এনে দিয়েছে। ব্যবহার করা একেবারে সহজ, নো ঝঞ্ঝাট-ঝামেলা, হ্যাপা নেই ব্যাঙ্কে দাঁড়ানোর। সবকিছু হয়ে যায় একটা ক্লিকে। সুতরাং ট্রানজাকশন করা যাবে যেকোন সময় যে কোন দিন ২৪ ঘন্টা। ডিজিটাল পেমেন্টের এই ট্রানজাকশনে ভারত আজ বিশ্বে এক নম্বর। প্রতি মাসে ইউপিআই-এর মাধ্যমে ১২-১৩ লক্ষ কোটি টাকার ট্রানজাকশন হয়ে থাকে। প্রতি সেকেন্ডে ইউপিআই ট্রানজাকশন হয় ২,৩৪৮। আজ ছোট থেকে ছোট জিনিসও কেনাকাটার জন্য মানুষ ভরসা রাখছেন ইউপিআই ট্রানজাকশনের ওপর। আর এটাই ভারতকে ই-কমার্স মার্কেটে বিশ্বের ফাস্টেস্ট ই-কমার্স মার্কেটের জায়গা করে দিয়েছে।
৪। PLI SCHEME
ভারতকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বানানোর কাজে উঠেপড়ে লেগেছে মোদী সরকার। এক্সপোর্ট নির্ভর ইকোনমির জন্য এটা দুর্দান্ত একটা মাস্টারস্ট্রোক বললেও কম বলা হয়। পিএলআই স্কিম চালু করা হয় ১ এপ্রিল ২০২০। পিএলআই অর্থাৎ প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেন্টিভ স্কিম। এই স্কিমের মাধ্যমে বিশ্বের তাবড় তাবড় কোম্পানিকে ভারতে নিয়ে আসার জন্য কোমর বেঁধেছে কেন্দ্র। অর্থাৎ কোন কোম্পানি যদি ভারতে ম্যানুফ্যাকচার করতে চায়, তাহলে ভারত সরকারের তরফ থেকে তাকে ইনসেন্টিভ দেওয়া হবে। মাত্র দু’বছরের মধ্যেই পিএলআই স্কিমের দরুন ইন্ডিয়ান ইকোনমি ভালোরকম ফায়দা নিচ্ছে। এর ফলে ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানিগুলো ভারতে আসার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে। তার অন্যতম উদাহরণ অ্যাপল। প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার অ্যাপলের মোবাইল এক্সপোর্ট করেছে ভারত। ভবিষ্যতেও সেটা আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
৫। JAN DHAN
জনধন প্রকল্প নিয়ে তেমন একটা কথা না-হলেও এর সুফল পাচ্ছেন দেশের গরিব মানুষরা। তাঁদেরও মোদী সরকারের প্রতি আস্থা তৈরি হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় এনে করোনা অতিমারির সময় ভারত সরকার কৃষক, গরিব মানুষদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েছে। এর ফলে বিপদের সময় সাধারণ মানুষদের অনেকটা সুবিধে হয়েছে বলে জানা গেছে। এই জন ধনের মাধ্যমে ভারতে ৪৬ কোটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫৬% মহিলা। প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনার মাধ্যমে ৫.৪ কোটি হোল্ডাররা ডিরেক্ট বেনিফিট পেয়েছেন।
৬। BANKING REFORMS
মোদী সরকার সরকারি ব্যাঙ্কগুলোর জন্য বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে ভেতরে। যার দরুন ভালোরকম সুবিধে হচ্ছে ব্যাঙ্কগুলোর। মোদী সরকার আসার আগে ব্যাঙ্কগুলোয় এনপিএ বা নন-পারফর্মিং অ্যাসেট অনেক বেশি ছিল। কিন্তু এখন ব্যাঙ্কের এনপিএ অনেকটাই নিচের দিকে। ইকোনমিক সার্ভে করে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫-১৬ সালে ফোর আর মানে- রেকগনিশন, রিক্যাপিটালাইজেশন, রেজোলিউশন এবং রিফর্মের দিকে অনেকটা বেশি নজর দেওয়া গেছে। ফলে ব্যাঙ্কের এনপিএ এখন অনেকটাই তলানিতে এসে গিয়েছে।
৭। GATI SHAKTI
একটা সময় ছিল যখন রাস্তা তৈরি করার পর ফের সেই রাস্তা ভেঙে দেওয়া হত। পাইপলাইন বা রাস্তার আন্ডার কনস্ট্রাকশন কোন কাজের জন্য রাস্তা তৈরি করে ফের ভেঙে দেওয়া? বিপদে পড়তেন দেশের সাধারণ মানুষ। আর তাই ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্টের জন্য ভারত সরকার নিয়ে এলো গতিশক্তি প্রকল্প। গতিশক্তি প্রকল্পের আওতায় ভারত সরকার রেলওয়ে, রোড-হাইওয়েজ, শিপিং নেভিগেশনের মত বহু বিষয়কে আনা গিয়েছে এক ছাতার তলায়। ফলে ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে সেটা দুর্দান্ত একটা প্রোজেক্ট হতে চলেছে।
৮। AATMANIRBHAR BHARAT
আর সবশেষে আত্মনির্ভর ভারত। গেম চেঞ্জার ফর ওভারঅল ইন্ডিয়া। এই আত্মনির্ভর ভারতের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এই আত্মনির্ভর ভারতের আওতায় ভারতের ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রত্যেকটা সেক্টরকে নিয়ে এসেছেন পিএম মোদী। কারণ, ভারতকে বিশ্ববাজারে কমপিটিশন করতে গেলে আত্মনির্ভর হতেই হবে। অন্তত সেটাই মনে করছেন পিএম মোদী। এর মাধ্যমে দেশের তৈরি পণ্যের কদর বাড়বে বিশ্ব বাজারে।
পিএম মোদীর যে ৮টি মাস্টারস্ট্রোকের কথা আজ বললাম, এগুলো নিয়ে প্রচুর আলাপ, আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক চলতেই পারে। কিন্তু গ্লোবাল মার্কেটে ইন্ডিয়ান ইকোনমিকে বুম করানোর জন্য এই মাস্টারস্ট্রোকগুলোর কোন অবদান নেই সেটা বলা মনে হয় ঠিক নয়। আপনিও কি একমত? আপনার কি মনে হয় যে ভারত সরকারের এই ৮টি মাস্টারস্ট্রোক সত্যিই ইন্ডিয়ান ইকোনমিকে অনেকটা সাহায্য করছে?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ