Trending
এবার কি বিশ্বে মোবাইল ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিতে জোরালো কামড় বসাতে চাইছে ভারত? নতুন বছরের নতুন প্রতিশ্রুতি। প্রতিশ্রুতি ভারতকে আত্মনির্ভর করা নিয়ে। আশা দেখছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর সেই আশা পুরণে আসরে নেমেছে ইলেক্ট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক। লক্ষ্য কি? রেকর্ড অঙ্কের মোবাইল রফতানি। সেখান থেকেই কোষাগারে বিশাল অঙ্ক ঢোকানো। বিষয়টা আরেকটু খোলসা করে বলা যাক।
আমরা সকলেই জানি, মোবাইল রফতানিতে ভারত কোনদিনই উল্লেখযোগ্য ছাপ রাখতে পারেনি গ্লোবাল মার্কেটে। ২০১৪ সালে মোদী যখন প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসলেন তখন ভারত মোবাইল রফতানি করত না। রফতানির র্যাঙ্কিং-এ শূন্য অবস্থানে থাকত ভারত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ধীরে ধীরে মোবাইল রফতানিতে নিজের অবস্থান পাকা করছে ভারত। তার মধ্যে অ্যাপল এবং স্যামসাং-এর মোবাইল রফতানি করে ভারত উল্লেখযোগ্যভাবে গ্লোবাল মার্কেটে ভালো রকম ছাপ রাখে। একটি তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, এই দুই সংস্থার মোবাইল রফতানি করে ভারত নিজের কোষাগারে ঢুকিয়েছিল প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মোবাইল রফতানির বাজারকে এটুকুতেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছেন না। এবার তিনি লক্ষ্য রাখছেন, যদি মোবাইল রফতানির বাজারকে ১ লক্ষ কোটি টাকায় ছুঁইয়ে দেওয়া যায়। তার মাধ্যমে ভারত অবশ্যই নিজের একটা জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য ভারতকে ২জি, ৩জি এবং ৪জি-র জন্য বাইরের দেশের পরিকাঠামোর ওপর অনেকটাই নির্ভর করতে হত। আর যে কারণে ৫জি-র পরিকাঠামো নির্মাণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন। সেক্ষেত্রে অবশ্য মোদীর স্বপ্নপূরণে হাত বাড়িয়ে দেয় রিলায়েন্স। তারা ৫জি পরিকাঠামো শুধু নির্মাণই করেনি। দেশের বেশ কয়েকটি শহরে ৫জি পরিষেবা চালু করেও দিয়েছে। এখন বিষয়টা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী চাইছেন বিশ্ব বাজারে ধীরে ধীরে টেলিকম ইন্ডাস্ট্রি নিজের জায়গা পাকা করে নিক। যা শুধু দেশবাসীর কাছেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে না, বরং গোটা বিশ্বে ইন্ডিয়ার টেলিকম ইন্ডাস্ট্রি নতুন পথ দেখাবে। এখন সেটাই করতে চাইছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর লক্ষ্যপূরণে যোগ্য সঙ্গত দিতে আসরে নামছে ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক। আপাতত কিভাবে সরকার দেশে ইলেকট্রনিক সামগ্রী নির্মাণে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে, সেই দিকটাই খতিয়ে দেখতে চাইছে সরকার। জানালেন, ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর।
বর্তমানে ভারতে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন ৬০৬ মিলিয়নের কিছু বেশি মানুষ। সাম্প্রতিক একটি তথ্য বলছে, ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছুঁয়েছে ৫.৪৮ বিলিয়নে। এদের মধ্যে শুধু স্যামসাং-এর স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১.০৩৩ বিলিয়ন। আবার অন্যদিকে অ্যাপল আইফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছুঁয়েছে ১.২ বিলিয়ন। যদিও অতি সাম্প্রতিক একটি তথ্য হারিয়ে দিয়েছে সেই সংখ্যাকেও। জানা যাচ্ছে, ২০২২ সালের শেষে আইফোন বিক্রির সংখ্যা পৌঁছে গেছিল ২.২ বিলিয়ন ইউনিটে। বর্তমানে ভারত দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন ম্যানুফ্যাকচারার। শুধুমাত্র ভারতেই স্মার্টফোনের চাহিদা ২০২৬ সালের শেষের দিকে পৌঁছে যেতে পারে ৪০ কোটিতে। বলা হচ্ছে, দেশে ৫জি লঞ্চ হবার পর স্মার্টফোনের চাহিদা বাড়বে আরও ৮০%। ফলে ২০২৬ সালের মধ্যে ৩১০ মিলিয়ন ইউনিট মোবাইল তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্র। বর্তমানে দেশে রয়েছে ১০টি মোবাইল তৈরির সংস্থা, রয়েছে ৬টি ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্ট মেকার্স। ২০১৪-১৫ সালে যেখানে ভারত ৬ কোটি মোবাইল প্রোডিউস করত, সেখানে ২০২০-২১ সালে সংখ্যাটা এক ধাক্কায় বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ কোটিতে। এই পরিসংখ্যান দেখেই স্বাভাবিকভাবে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, ভারত কিভাবে ইলেকট্রনিক সামগ্রী নির্মাণে উল্লেখযোগ্য ছাপ রাখছে এবং ভবিষ্যতেও রাখবে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর আশা বাস্তবায়িত হবার জন্য খুব একটা কাঠখড় পোড়াতে হবে না বলেই মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। প্রতিবেদন শেষ করছি এখানেই।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ