Trending
মোবাইলে রয়েছে সোনা! তবে শুধু মোবাইল বলেই নয়। ল্যাপটপ, কম্পিউটারেও রয়েছে এই হলুদ ধাতুর ছোঁয়া। সত্যিই সোনার চাহিদা যখন সবসময় গোটা বিশ্বে ঊর্ধ্বমুখী, যখন সোনা কেনার জন্য পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে দোকানে দোকানে ভিড় বাড়ান, সেই সোনাই নাকি থাকে আমার, আপনার স্মার্ট ফোনে! শুনতে একটু অবিশ্বাস্য ঠেকলেও এটা সত্যি। কিন্তু জানেন কি, যেভাবে দিনে দিনে গোটা বিশ্ব বাড়ছে ই-বর্জ্যের পরিমাণ, তাতে বছর শেষে কতখানি সোনা পাওয়া সম্ভব? আসুন, আজকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা যাক সোনার গয়না নয়। বরং ইলেকট্রনিক গুডসে সোনার ব্যবহার এবং একই সঙ্গে ই-বর্জ্যের সোনার পরিমাণ কত, সেটা নিয়ে এক বিশেষ প্রতিবেদন।
ইদানিং মোবাইল খারাপ হলেই নতুন মোবাইল কেনায় আগ্রহ বাড়ে সাধারণ মানুষের। শুধু মোবাইল বলেই নয়। বাতিলের খাতায় থাকে ল্যাপটপ, কম্পিউটারের মতন এমন অনেক ইলেকট্রনিক গুডস। এর ফলে দিনে দিনে বাড়ছে ই-বর্জ্যের পরিমাণ। শুধু ভারত বলে নয়। ই-বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ছে গোটা বিশ্ব জুড়েই। একটি সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, বিশ্ব জুড়ে বছরে ই-বর্জ্যের পরিমাণ পৌঁছে গিয়েছে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মেট্রিক টনের মতন। আর যে-কারণে এই ই-বর্জ্য থেকে পাওয়া সোনার পরিমাণ খুব একটা কম থাকে না। মোবাইল বা ল্যাপটপে সোনা কেন থাকে, তার পেছনে রয়েছে এক চেনা-পরিচিত বিজ্ঞান।
আমরা সকলেই জানি, সোনা ধাতু হিসেবে দারুণ বিদ্যুৎ পরিবাহী। আবার সোনায় মরচেও ধরে না। সোনার ক্ষয়ও নেই। আর যে কারণে স্মার্ট ফোনের যে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বা আইসি রয়েছে সেখানে সোনা ব্যবহার করা হয়। সোনার এই কানেক্টরগুলি দ্রুত ডেটা আদান-প্রদানের জন্য সবথেকে ভালো কাজ করে। তবে হ্যাঁ। সেই ব্যবহৃত সোনার পরিমাণ থাকে নেহাতই অল্প। হিসেব বলছে, একেকটি মোবাইল থেকে প্রায় ৪০-৫০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত সোনা পাওয়া যায়। এভাবেই যদি ৪১টি বাতিল ফোন উদ্ধার করা হয়, তাহলে সেখান থেকে সোনা পাওয়া যাবে ১ গ্রাম মতন। এমনটাই জানাচ্ছে, রাষ্ট্রসংঘের তরফ থেকে পেশ করা ইলেকট্রনিক ওয়েস্ট সংক্রান্ত একটি গবেষণায়। আজকের দিনে ১ গ্রাম সোনার দাম প্রায় ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা মতন। আর এভাবেই টন টন ই-বর্জ্য থেকে সংগ্রহ করা সোনা দিয়েই চলে কোটি কোটি টাকার কারবার। মনে করা হচ্ছে, বছরে যে পরিমাণ ই-বর্জ্য তৈরি হয়, সেখান থেকে উদ্ধার করা সোনার ভ্যালু দাঁড়াতে পারে প্রায় চার হাজার কোটি টাকায়। এবার এখানেই একটা বিষয়। ব্রিটেনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, যে-হারে সোনা প্রতিদিন ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে সোনার পরিমাণ গোটা বিশ্বে কমতে বাধ্য। তাই ই-বর্জ্য থেকে সোনা সংগ্রহের দিকে ঝুঁকতে বলা হয়েছে ঐ গবেষণায়। তবে এটাও ঠিক যে ই-বর্জ্য থেকে সোনা সংগ্রহ করা বেশ কঠিন একটা বিষয়। সঠিক পদ্ধতিতে না-করা গেলে সেক্ষেত্রে বাতাসে অনেক বেশি পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড মিশতে পারে। এমনিতেই বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, বছরে শুধুমাত্র ই-বর্জ্য থেকে পাওয়া সোনা সংগ্রহ করা যায় প্রায় ৩০০ টন মতন। কিন্তু তার জন্য সুনির্দিষ্ট কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলছেন গবেষকরা। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, মিউরিয়াটিক অ্যাসিড, মিথাইল হাইড্রেটের মত রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় সোনাকে আলাদা করার জন্য।
যত দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার। আর প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে গেলে প্রয়োজন পড়ছে ইলেকট্রনিক গুডসের। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ই-বর্জ্যের পরিমাণ। আর এটাই বর্তমানে পরিবেশকে যথেষ্ট ক্ষতির মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। বিজ্ঞানীরা চিন্তা করছেন, কিভাবে এই ইলেকট্রনিক গুডসের রিসাইকেল করা সম্ভব। সোনা সেই প্রাচীনকাল থেকেই অন্যতম দুষ্প্রাপ্য এবং মূল্যবান ধাতু। তাই যথেচ্ছে সোনা উত্তোলন না-করেই যদি এই ই-বর্জ্যের সোনাকেই ব্যবহার করা যায় তাহলে সেটাই পরিবেশের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন একটা পজিটিভ দিক তুলে ধরবে, তেমনি সোনা উত্তোলনের ট্র্যাডিশনও অনেকটা আটকানো সম্ভব হবে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ