Story
দেবস্মিতা মণ্ডল, গাইঘাটাঃ ওরাও গোপিনী। তবে ওরা সকলে কৃষ্ণসখী কিনা তা জানা নেই। তবে ওরা যে সকলে গোপিনী, এ কথা ১০০% খাঁটি। গোপিনীরা যে এযুগে গো পালন করে স্বনির্ভর হয়েছেন, খুঁজে পেয়েছেন জীবনে বেঁচে থাকার নতুন রসদ, তা ওদের কথাতেই পরিষ্কার।
বাড়ির গোয়ালে পোষ্য স্নেহে পালিত গরুর অতিরিক্ত দুধ বিক্রি করে দুটো পয়সার মুখ দেখছেন এখানকার গ্রামের মহিলারা। জানতে পারছেন, গো পালনের নিত্য নতুন টেকনিক। যে টেকনিক ব্যবহার করে দুটো বাড়তি পয়সা ব্যাঙ্কে জমাচ্ছেন এখানকার মহিলারা।
আজ আপনাদের নিয়ে যাব উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার বেড়ী ১ নং মহিলা দুগ্ধ উৎপাদক সমবায় সমিতিতে। এই সমিতি ইছামতীর দুগ্ধ উন্নয়ন সমবায় সমিতির সহযোগী হিসেবে কাজ করে চলেছে। ১৯৯৪ সাল থেকে।
আগে গ্রামের মহিলারা বাড়ির বাড়তি দুধ ঘোষেদের কাছে বিক্রি করলেও পেতেন না ন্যায্য দাম। তাই অভাবও মিটত না ঘরের। উল্টে মাপে ছিল কারচুপির বিস্তর অভিযোগ। সে সব দিন এখন অতীত। গাইঘাটা ব্লকের মহিলাদের এখন আশাভরসার স্থল এই সমিতি।
সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে দুধের গুণগত মান যাচাই করে বিক্রি করতে আসা উপভোক্তার সামনে দেখিয়ে দিয়ে দাম নির্ধারণ করে সমিতি। এন্ট্রি হয় খাতাতেও। যার এক কপি থাকে সমিতিতে আর আরেক কপি থাকে উপভোক্তার কাছে।
যার দুধে ল্যাক্টো ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকবে তার দুধ বেশি দামে বিক্রি হবে, এটাই এখানকার রীতি। তারপর প্রতি দশ দিন অন্তর টাকা চলে যায় উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। সমিতির সাইনবোর্ডেও রয়েছে স্বচ্ছতার দায়বদ্ধতারই কথা।
কাজের পদ্ধতিও খুবই সুন্দর এখানে। উপভক্তারা লাইন দিয়ে এক এক করে সমিতির ঘরে ঢোকেন। সেখানে দুধ প্রথমে ওজন করা হয়। ওজনও হয় কম্পিউটার কাঁটায়। তারপর সেই দুধের নমুনা মেশিনে দিলেই মেশিন দেখায় উপভোক্তার নাম, দুধের পরিমাণ আর তার দাম।
শুধু সমিতিতে গ্রামের মহিলারাই নন, যারা একটু বড় করে খামারে গো পালন করেন, তাঁরাও এই সমিতিতে এসে দুধ বিক্রি করেন। দুধ বিক্রির পাশাপাশি সমিতি থেকে উপভোক্তাদের পরামর্শও দেওয়া হয়। দেওয়া হয় কতটা পরিমাণ খাদ্য গরুকে দিতে হবে। এবং তা কী পরিমাণে দিতে হবে। আর এই পরামর্শ আসে জেলার কৃষি বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র থেকে।
ছায়া সুনিবিড় গাইঘাটা ব্লকের পরিবর্তনের রঙটাই ধরা পড়ছে এই গ্রামের পথেঘাটে।
সবিতা সর্দার, কালিদাসি মণ্ডলরা যে সত্যি সত্যিই এ যুগের গোপিনী হয়ে উঠেছেন এই গ্রামের সেটাই ঘুরে দেখলেন আমাদেরই প্রতিনিধি।