Story
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ তো লেগেই থাকে। আর বাঙালির উৎসব মানেই আনন্দ, বেচাকেনা। রাস উৎসবেও সেই ছবিটাই ফুটে ওঠে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা রাস মেলা আসলে সেই সময় বহু মানুষের আর্থিক উন্নতিতে সঙ্গ দেয়।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ময়নার রাস। জেলার অন্যতম ঐতিহ্যের স্মারক। ৪৬১ বছরের প্রাচীন। তবু আজো ফিকে হয়নি ময়না রাস নিয়ে মানুষের উন্মাদনা। প্রায় এক সপ্তাহব্যপী এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে বসে রাস মেলা। যেখানে শুধু মেদিনীপুর নয়। আশেপাশের অন্যান্য জেলা থেকেও মানুষ আসেন। ভিড় জমান। এই সময় জেলার গ্রামীণ অর্থনীতি অনেকটাই মজবুত হয়। একইসঙ্গে দেখা যায় সম্প্রীতির ঐতিহ্য। একসময় স্থানীয় ময়নাগড় রাজবাড়ীর তত্ত্বাবধানে এই রাস উৎসব হলেও বর্তমানে তা এলাকার হিন্দু-মুসলমানদের তত্ত্বাবধানেই হয়। এই রাস নিয়েই বিজনেস প্রাইম নিউজকে সরাসরি জানালেন ময়নাগড়ের বাহুবলীন্দ্র রাজপরিবারের সদস্য সিদ্ধার্থ বাহুবলীন্দ্র।
তবে এইবারে সেই উন্মাদনায় একটু হলেও ভাটা এনেছে করোনা। অতিমারি পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই ময়না রাস মেলা কমিটির তরফ থেকে রাস মেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে প্রাচীন রীতি মেনে পালন করা হচ্ছে নৌ- রাসযাত্রা। চলবে ভোগ বিতরণ। পালন করা হবে প্রাচীন সমস্ত রীতিনীতি। সুরক্ষা বিধি মেনে হবে নৌ- রাসযাত্রা। একাদশীর ভোরে ময়না গড়ের বাহুবলীন্দ্র রাজপরিবারের কুলদেবতা শ্যামসুন্দর জিউর রাস যাত্রা শুরু হয়েছে। এই দিন থেকেই পরপর আট দিন ভোরে গড়ের মূল মন্দির থেকে নৌকা সহযোগে গড়ের বাইরে রাসমঞ্চে নিয়ে আসা হয় কুলদেবতাকে। আবার সন্ধের আগে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে মন্দিরে। আর পূর্ণিমার দিন নিয়ম মেনে সুসজ্জিত নৌকায় করে গড়ের পরিখায় নৌবিহার করেন শ্যামসুন্দর জিউ। এখানেও থাকবে সরকারি স্বাস্থ্য বিধি। আগত পুণ্যার্থীদের যাতে সঠিক দূরত্ব বজায় রাখা যায় সেজন্য আছে পুলিশ ও ভলেন্টিয়ার।
তবে যাই হোক, রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে বহু মানুষ অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেকটাই লাভবান হন। এবার মেলা না হওয়ায় বেচাকেনা সেই অর্থে বন্ধই থাকবে। ফলে আশেপাশের জেলা থেকে যে বহু মানুষ আসতেন, মেলায় যেতেন, সেই ছন্দ করোনা আবহে কোথাও যেন কাটল। তবে মেলা না হলেও রাস উৎসব যেন সবদিক থেকে দর্শনার্থীদের জন্য এক মিলন ক্ষেত্র। সম্প্রীতির, শান্তির।
প্রসূন ব্যানার্জী
পূর্ব মেদিনীপুর