Daily
দেশে মোদি বিরোধী মুখ হিসেবে ইতিমধ্যেই পরিচিতি পেয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ইন্দিরা গান্ধী, জয়ললিতার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন পূর্ব ভারতের একমাত্র জন নেত্রী যার সর্বভারতীয় পরিচিতি আছে। আসমুদ্র হিমাচল ভারতের কোনায় কোনায় মানুষ জানেন নেত্রীর নাম। 2024 এ প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে এটাই হলো তৃণমূল নেত্রীর সবথেকে বড় ইউএসপি।
ইন্দিরা গান্ধীর মত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসতে পারেন পাটিগণিতের নিয়ম মেনে। বাংলার মেয়ে থেকে ভারতের মেয়ে হয়ে উঠতে পারেন বেশি কিছু সমীকরণের উপর নির্ভর করে।
সাম্প্রতিক পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ব্রিগেডের শোচনীয়’ হার, এক মহিলার অদম্য সংগ্রামের কাহিনী যেন তৃণমূল নেত্রীকে আরও একটু উসকে দিল বাংলা মেয়ে থেকে ভারতের মেয়ে হয়ে ওঠার সম্ভাবনাকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা এই সম্ভাবনার পিছনে নিছক পাটিগণিতের হিসাবকেই একমাত্র কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
প্রথমত, মোদি হে তো মুমকিন হ্যাঁয় এই আপ্তবাক্যে এখন চলছে ভাটার টান। তলানিতে যাচ্ছে ব্র্যান্ড মোদির ইমেজ। অন্যদিকে, কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতৃত্বের কাছে নেই কোন তুলে ধরার মতো নতুন মুখ। তা সত্ত্বেও কংগ্রেস মরিয়া দিল্লির তখত থেকে মোদি কে হাটাতে। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে গেরুয়া বাহিনীর উপস্থিতি শুধুমাত্র মাইক্রোস্কপেই দেখা যায়। অন্যদিকে উত্তরের রাজ্যগুলিতে বিজেপির অন্তর্কলহ কংগ্রেস সহ বিজেপি বিরোধী দলগুলোকে যুগিয়েছে বাড়তি অক্সিজেন। উত্তর প্রদেশ সহ গোবলয়ের রাজ্যগুলিতে কংগ্রেস, সমাজবাদী, বিএসপির মত দলগুলির শক্তি সঞ্চয় 2024 এর লোকসভা ভোটে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র সহ অন্যান্য রাজ্যগুলিতে কৃষক আন্দোলন নিয়ে বিজেপি এখন বেস ব্যাকফুটে।
কংগ্রেস ছাড়া শিবসেনা, আকালি, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, বহুজন সমাজ পার্টি, YSR কংগ্রেস , তেলেগু দেশম দলগুলোর কাছে কোন সর্বভারতীয় মুখ নেই প্রধানমন্ত্রিত্বের জন্য। কেরালায় শিবরাত্রির সলতে হয়ে থাকা বামেরা যে মমতার নেতৃত্বে কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে উৎখাত করতে বদ্ধপরিকর তারা তাদের কথাতেই পরিস্কার। কংগ্রেস সর্বভারতীয় দল হলেও রাহুল, সোনিয়া কিংবা প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে এখনই দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক পছন্দের তালিকায়, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার বিচারেও এগিয়ে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কংগ্রেস সহ সমস্ত আঞ্চলিক দলগুলির ওয়ান পয়েন্ট এজেন্ডা যেনতেন প্রকারে বিজেপিকে দিল্লি থেকে ক্ষমতাচ্যুত করা। সে ক্ষেত্রে 2024 এর নির্বাচনে যেখানে যে শক্তিশালী তাকেই সমর্থন করতে পারে মমতার নেতৃত্বাধীন এই ইন্ডিয়ান ফেডারেল ফ্রন্ট। সেক্ষেত্রে বিজেপির বিপক্ষে ওয়ান ইস টু ওয়ান নীতি প্রয়োগ করে ভোটের নামলে ভোট ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। কাজে লাগানো যাবে, আন্টি ইনকাম্বেন্সি হাওয়াকে। ফলে সহজেই ধরাশায়ী হবে বিজেপি। এমনটাই পাটিগণিত এর হিসাব বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সেক্ষেত্রে সর্বভারতীয় মুখ হিসেবে সব দলের নেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মুখ হিসেবেও তৃণমূল নেত্রীর প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসাটা হবে স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
তাই সাম্প্রতিক বাংলা জয়ের পর তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংগঠনিক রদবদল করে অভিষেককে নিয়ে আসলেন সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সংগঠন বিস্তারের কাজে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জহরলাল এর মৃত্যুর পর যেভাবে একদলীয় কংগ্রেস শাসনে বয়স্ক নেতাদের পিছনে ফেলে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী ঠিক সেভাবে বহুদলীয় গণতন্ত্রে সর্বভারতীয় গ্রহণযোগ্য মুখ হিসেবে পাটিগণিতের হিসাবেই প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিউরো রিপোর্ট, বিজনেস প্রাইম নিউজ।