Daily
পূর্বসূরীদের পথকেই বেছে নিলেন উত্তরসূরী। জ্যোতি বসু থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সবাই ছুটে গিয়েছেন মার্কিন মুলুকে। রাজ্যের স্বার্থে। লগ্নি টানার জন্য। তবে পূর্বসূরিরা পুরোপুরি সফল না হলেও উত্তরসূরী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্ষেত্রে অনেকটাই সফল। অন্তত পরিসংখ্যান তো সে কথাই বলছে।
২০১০-১১ অর্থবর্ষে রাজ্যে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বিশেষত আমেরিকার বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৯.৫ কোটি ডলার। আর ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে রাজ্যে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৬০.৮০ কোটি ডলার।
সম্প্রতি আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের বার্ষিক সভায় আলাদা করে গুরুত্ব পায় পশ্চিমবঙ্গ। বণিকসভার ভার্চুয়াল মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ও শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেখানে বণিকসভার কর্তাদের আলোচনায় বারবার ঘুরেফিরে আসে ডেস্টিনেশন বেঙ্গল-এর নাম। তারপরই চূড়ান্ত হয় মুখ্যমন্ত্রীর আমেরিকা সফরের পরিকল্পনা। এই বণিকসভার আহ্বায়ক এদেশে নিযুক্ত আমেরিকান রাষ্ট্রদূত। ফলে পুরো সফরটাই হবে সরকারি মোড়কে।
তৃতীয়বার ক্ষমতায় বসে রাজ্যে বেশি করে কলকারখানা স্থাপন করে কর্মসংস্থানের হারকে বৃদ্ধি করে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে নজির তৈরি করাটাই রাজ্য সরকারের আশু লক্ষ্য। সেই দিক থেকে আরো বেশি করে আমেরিকান কোম্পানিগুলিকে রাজ্যে নিয়ে আসতে পারলে রাজ্য সরকারের জনভিত্তি ও জনপ্রিয়তা এ রাজ্যে আরো সুদৃঢ় হবে।
কগনিজেন্ট থেকে কোকাকোলা। পেপসি থেকে অ্যামাজন। ওয়ালমার্ট থেকে ফ্লিপকার্ট। একের পর এক আমেরিকান কোম্পানি এ রাজ্যে সরকারি শিল্প তালুকে যেভাবে নিজেদের কারখানা সম্প্রসারণ করছে তাতে রাজ্যে কর্মসংস্থান নিয়ে তৈরি হচ্ছে উজ্জ্বল সম্ভাবনা।
পেপসি এখনো পর্যন্ত এ রাজ্যের সরকারি শিল্প তালুকে তিনটি কারখানা তৈরি করেছে। কোকাকোলার একটি নরম পানীয় এখনই রাজ্য থেকে তৈরি হচ্ছে। অ্যামাজন এ রাজ্যে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সাতটি লজিস্টিক হাব গড়ে তুলছে। ওয়ালমার্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ফ্লিপকার্ট তৈরি করছে বিরাট লজিস্টিক হাব। শুধু পেপসি, কোকাকোলা, অ্যামাজন আর কগনিজেন্ট মিলিয়ে এ রাজ্যে কর্মসংস্থান হয়েছে ৬৩ হাজার মানুষের।
আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্স ‘অ্যামচেম’ পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্র করে উত্তর পূর্ব ভারত সহ নেপাল, ভুটান এমনকি বাংলাদেশের বাজারকেও পাখির চোখ করছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই বিরাট বাজার দখলের লক্ষ্যে কোম্পানীগুলির কাছে পশ্চিমবঙ্গ হাব হলে একদিকে যেমন কোম্পানিগুলির মুনাফা বাড়বে তেমনি রাজ্যে স্থাপিত হবে একের পর এক কল কারখানা। যা শেষ পর্যন্ত রাজ্যে কর্মসংস্থানের মানচিত্রটি বদলে দেবে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর আমেরিকা সফরে কোম্পানিগুলির কাছে রাজ্যের এ প্রভূত সম্ভাবনার কথাই তুলে ধরতে চান।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য এক ঢিলে দুই পাখি মারা। একদিকে রাজ্যে বিনিয়োগ টানা আর অন্যদিকে রাজ্যে বেকারত্বের কমিয়ে কর্মসংস্থানের চালচিত্রটাই বদলে দেওয়া। এখন মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন কত তাড়াতাড়ি বাস্তবায়িত হয় সেটাই দেখার।
ব্যুরো রিপোর্ট, বিজনেস প্রাইম নিউজ।