ক্লাবগুলোকে অনুদান কাড়ি কাড়ি। এদিকে চাকরির বাজারে অভাব ভারী। কারণ নতুন নিয়োগ হলে বেতন দেওয়ার মতো নাকি পর্যাপ্ত ফান্ড নেই রাজ্যের কোষাগারে। কাজেই নিয়োগ কমাও, কোষাগার বাঁচাও। নেপথ্যে, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্যাপারটা কী, পরিষ্কার হল না তো? বলছি শুনুন তবে…

রাজ্যের কোষাগারে টান। অগত্যা নিয়োগে হ্রাস। নির্দেশ খোদ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অন্যদিকে, আবার তিনি এক্কেবারে দিলদরিয়া। দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে একেবারে মুক্তহস্তে অনুদান দিচ্ছেন দিনে। অনুদানের অঙ্কটা জানা আছে? হ্যাঁ ঠিকই! ৮৫ হাজার টাকা। একটি ক্লাবের জন্য বরাদ্দ তাঁর ৮৫ হাজার টাকা। ভাঁড়ে মা ভবানীর দশার জন্য নিয়োগে হ্রাস অথচ অনুদানের অঙ্ক এক ধাক্কায় ১৫ হাজার টাকা কীভাবে বাড়িয়ে দিলেন তিনি? প্রশ্নে সরব বিরোধীরা।

একদিকে তিনি দিলদরিয়া। অন্যদিকে ঠিক তার উল্টোটা। মুখ্যমন্ত্রীর অদ্ভুত সিদ্ধান্তে অবাক রাজ্যবাসী। বছরের পর বছর বাড়ছে অনুদানের অঙ্ক। দুর্গাপুজোতে কোনরকম খুঁত রাখতে চান না তিনি। পুজোয় কোলকাতা এবং তাঁর পাশ্ববর্তী অঞ্চল ঢেলে সাজবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা বলে নিয়োগে হ্রাস কেন? পশ্চিমবঙ্গের বুকে বেকারত্ব যখন একটা জ্বলন্ত সমস্যা, তখন রাজ্যের ক্যাপ্টেনের এমন সিদ্ধান্ত ঠিক কতটা বিচক্ষন সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

বাজেট নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ। আর এরই মধ্যে আবার রাজ্য সরকারী চাকরিতে নিয়োগ কমানোর মন্তব্য রীতিমত রাতের ঘুম উড়িয়েছে অনেকের। খাদ্য, স্বাস্থ্য, প্রশাসনিক দপ্তরসহ রাজ্য সরকারের একাধিক দপ্তরে নাকি নিয়োগ কমাতে হবে। খুব প্রয়োজনে বড়োজোর ৫০% নিয়োগ করা যেতে পারে। তবে তার বেশি একেবারেই নৈব নৈব চ। যে রাজ্যে একটা চাকরির জন্য হাজার হাজার শিক্ষিত বেকাররা গান্ধীমূর্তির পাদদেশে বসে আন্দোলন করেন, সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কোষাগারে অভাবের অজুহাতে নিয়োগ রাশ টেনে ক্লাব কমিটিগুলোকে ৮৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার ঘোষণা কীভাবে করতে পারেন?

প্রসঙ্গত, আপনাদের জানিয়ে রাখা প্রয়োজন। এই মুহূর্তে কোর্টে এসএসসি। মামলার জেরে বিপর্যস্ত একটা গোটা প্রজন্ম। চাকরির জন্য হাহাকার গোটা দেশে। রাজ্যে সম্প্রতি চাকরি হারিয়েছেন একটা বড়ো অঙ্কের শিক্ষক। রাজ্য সরকারী দপ্তরে শূন্য পদের লিস্টি দেখলে মাথা ঘুরে যাবে আপনাদের। আর এত কিছু সত্ত্বেও নিয়োগ নেই? রাজ্যে চাকরি নেই। ফলে অন্য রাজ্যই ভরসা। আর দেশের হিসেবেও চাকরির বাজার যে রকম দিন দিন অনিশ্চিত হচ্ছে, সেখানে পড়াশুনো করে চাকরি করার সহজ স্বপ্ন দেখতে ভুলছেন পড়ুয়ারা।

অন্যদিকে, রাজ্যের ৩০ হাজার ক্লাবকে ৮৫ হাজার টাকা করে অনুদান দিলে কত টাকা হয়- একবার নিজেরাই হিসেব করে ফেলুন তাহলে। বিষয়টা হচ্ছে, ক্লাবগুলোকে ৮৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হলেও কিন্তু দুর্গাপুজোতে চাঁদা তোলার রীতিটা এখনও বহাল। মানে ৮৫ হাজার প্লাস সেই চাঁদার টাকা। আর এদিকে একটা চাকরির ওপর ডিপেন্ড করে গোটা একটা পরিবার। তাই খরচা ঠেকাতে আর কোষাগার বাঁচাতে এখন নিয়োগে রাশ টানাটাই ঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে তিনিই আবার ১০ লক্ষ শুন্যপদ থাকার কথা ঘোষণা করেছিলেন। প্রসঙ্গত, রাজ্যকে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে সম্প্রতি নাকি আলিপুর চিড়িয়াখানার বেশ খানিকটা জমি বিক্রির পথে হাঁটতে চাইছেন রাজ্য সরকার।

এদিকে রাজ্যের অর্থমন্ত্রক বরাবরই বলে এসেছে যে, মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বসার পর নাকি রাজ্যের লক্ষ্মী লাভ রয়েছে। রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে। যদি তাই হয়- তাহলে কোষাগারে ভাঁড়ে মা ভবানীর দশা হল কীভাবে? আর কোষাগারে ভাঁড়ে মা ভবানী দশা হলে ক্লাবগুলোর জন্য বরাদ্দ অনুদান এক ধাক্কায় ১৫ হাজার হাজার বাড়িয়ে দেওয়া হল কেন? আর সবটা যদি সঠিক সিদ্ধান্তই হয়, তাহলে রাজ্য নিয়োগে রাশ টানছে কেন? কেন বারবার চাকরিক্ষেত্রকেই টার্গেট করা হচ্ছে? আর কেনই বা বেকারত্বের সমস্যাকে আরও চওড়া করা হচ্ছে? তাছাড়া এই সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক বলে আপনাদের মনে হয়- জানান আমাদের কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।