Trending
বিরোধী স্বরকে চেপে দেবার ট্র্যাডিশন বিজেপি সরকারের আমলে নতুন নয়। আগেও লোকসভায় আমরা দেখেছি বিরোধী শিবির ইন্ডিয়া জোটের নেতা রাহুল গান্ধীর মাইক কিভাবে বন্ধ করে দেওয়া হত। এবার সেটাই হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। গেছিলেন নীতি আয়োগের বৈঠকে। কিন্তু পাঁচ মিনিটের মধ্যে মাইক বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়লেন তিনি। এই ধরণের ঘটনায় তিনি যথেষ্ট অপমানিত। তাই বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করলেন, বেরিয়ে এলেন সেই বৈঠক ছেড়ে। কিন্তু এনডিএ সরকার তো আর এমনি এমনি মাইক নিশ্চয়ই বন্ধ করে নি। তাহলে কি মমতার গলায় এমন কিছু কথা উঠে আসছিল যা এড়াতে চাইছিল বিজেপি? কী এমন আপত্তি থাকতে পারে বিজেপি শিবিরের?
নীতি আয়োগের বৈঠক ডাকার কথা যখন প্রকাশ্যে আসে, তখন বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার সাত জন মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বাজেটে বঞ্চনার তীব্র অভিযোগ তুলেছিলেন। ফলে তাঁরা আগেই বয়কট করেন নীতি আয়োগের বৈঠক। তারপরেও অবশ্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে নীতি আয়োগের বৈঠকে তিনি উপস্থিত থাকবেন এবং তুলে ধরবেন অভাব, অভিযোগের কথা। সেই মত শনিবার রাইসিনায় হাজির হন তিনি। কিন্তু অদ্ভুতভাবে দেখা যায়, কিছুক্ষণের মধ্যেই মমতা রাষ্ট্রপতি ভবন ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। এই প্রসঙ্গে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলে মমতা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বলেন, মাইক বন্ধ করে তাঁকে অপমান করা হয়েছে। অন্য কয়েকজন ২০ মিনিট মত বলার সুযোগ পেলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাঁচ মিনিট বলারও সুযোগ পান নি। মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর সেই কারণে বঞ্চনার প্রতিবাদে তিনি বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। মাইক এভাবে বন্ধ করে দেওয়াটাকে মমতা বলেছেন, তাঁকে অপমান করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিরোধীদের মধ্যে একমাত্র মমতাই নীতি আয়োগের বৈঠকে হাজির ছিলেন। কিন্তু তাঁকে বলতেই দেওয়া হল না। তার আগেই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হল। তিনি যে আর কোনদিন নীতি আয়োগের বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন না, সেই কথাও জানিয়ে দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাইরে এসে মমতা কী অভিযোগ করলেন শুনে নিন-
বাইটঃ মমতা
এর আগেও বিজেপির তরফ থেকে মাইক বন্ধ করে দেবার ট্র্যাডিশন আমরা লক্ষ্য করেছি। কংগ্রেসের সাংসদ রাহুল গান্ধীর মাইক একাধিকবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাহলে কি এবার মোদী সরকার অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের কথা শুনতেও রাজি নন? মমতা দিল্লি যাবার আগে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বাজেট বঞ্চনা নিয়ে বড়সড় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, এবারের বাজেটে বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে। শুধু বাংলা বলে নয়। যে সকল বিজেপি বিরোধী রাজ্য রয়েছে, প্রত্যেকটি রাজ্যই এবারের বাজেটে বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ইকোনমিক ব্লকেড, পলিটিক্যাল ব্লকেড, বাংলা সহ বিভিন্ন রাজ্যকে টুকরো টুকরো করার পরিকল্পনা এই সব কিছুর বিরুদ্ধেই তিনি কণ্ঠ চড়িয়েছেন। চরম নিন্দা জানিয়েছেন। মমতা বলেছিলেন, বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পারছেন যে, ঐ দলের অনেক নেতা বাংলা-বিহার-ঝাড়খণ্ড এবং অসমকে ভাগ করার পরিকল্পনা করছে। এই রাজ্যগুলোকে ভাগ করা মানে গোটা দেশকেই ভাগ করা। এই বিষয়টাকে তিনি একেবারেই সমর্থন করেন না। তাই মুখ্যমন্ত্রী বলেই ছিলেন যে, বাংলা ভাগের যে দাবি তোলা হচ্ছে তারই প্রতিবাদ জানাতে নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি। একইসঙ্গে বলেছিলেন যে, বৈঠকে কিছু বলতে দিলে তবেই বলবেন না-হলে প্রতিবাদ করবেন। দেখা গেল, মমতার অনুমানে খুব ভুল ছিল না। মাত্র পাঁচ মিনিট বলার পরেই বন্ধ করে দেওয়া হয় মমতার মাইক। আর সেই প্রতিবাদ জানাতেই নীতি আয়োগের বৈঠক ছাড়েন তিনি। এবার বলি কে কে এই বৈঠক বয়কট করেছিলেন সেটা। কর্ণাটকের সিদ্দারামাইয়া, তেলেঙ্গানার রেবন্ত রেড্ডি, হিমাচল প্রদেশের সুখবিন্দর সিং সুখু, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন, আপ নেতা এবং পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান, কেরলের সিপিএম নেতা পিনারাই বিজয়ন বৈঠক বয়কট করেছিলেন। হেমন্ত সোরেনের উপস্থিত থাকার কথা শোনা গেলেও তিনি ছিলেন না। কিন্তু সবথেকে অবাক করা বিষয় হল, নীতি আয়োগের বৈঠকে গরহাজির ছিলেন নীতিশ কুমার নিজে! তবে কেন্দ্রের তরফ থেকে জানানো হচ্ছে যে, মমতার মাইক বন্ধ করার দাবি নাকি একেবারেই সত্যি নয়। বিপথে চালিত করা হচ্ছে। কেন্দ্রের দাবি কতটা সত্যি, যাচাই করে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো। সংস্থার তরফ থেকে বলা হয়েছে, মমতা নাকি নিজের বৈঠকে সময় পেরিয়ে যাবার পরেও কথা বলছিলেন। তারপরেও কিন্তু তাঁকে সতর্ক করার জন্য কোন রকম ঘণ্টা বাজানো হয় নি। পিআইবি-র বক্তব্য জনমানসকে ভুল পথে চালিত করা হচ্ছে। অনেকেই আবার এর মধ্যে মমতার পূর্বপরিকল্পিত প্ল্যান খুঁজে পাচ্ছেন। তাঁরা অনেকেই বলছেন যে, মমতা বলেছিলেন নীতি আয়োগের বৈঠকে কিছুক্ষণ থাকবেন। বলতে দিলে তিনি বলবেন, না হলে প্রতিবাদ করবেন। বিষয়টা কি তাহলে সেরকমই দাঁড়াল? মমতার প্ল্যান নাকি মোদীর চাল?
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ