Trending
দূর থেকে যাহা চকচক করে, তাহাই কিন্তু সোনা নয়। বন্ধুরা, কেন বললাম তার আগে একটা প্রশ্নঃ আপনি কি আগের মতন কি টাকা জমাতে পারছেন? সঞ্চয় করার ক্ষমতা আগের মতন কি রয়েছে? মনে হয় না। দায়ী কে মূল্যবৃদ্ধি। আলপিন থেকে এলিফ্যান্ট সব জিনিসের রেকর্ড হাই প্রাইস। আর এটাই বদলে দিতে পারে নির্বাচনের পাশা। হতে পারে মোদী জমানায় সবথেকে বড় ব্যর্থতা। আর সেটাকে হাতিয়ার করতে পারে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। ইন্ডিয়া ভার্সেস ভারত- নির্বাচনী যুদ্ধ ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। এতে খুঁটি শক্ত হবে রাহুল গান্ধীর। আর মাটি আলগা হবে নরেন্দ্র মোদীর। ভাবছেন তো টাকা না সঞ্চয় করতে পারার পেছনে মোদী ফেলিওর কেন? সেটাই বলব আজকের প্রতিবেদনে।
এই মুহূর্তে ভারতে রাজনৈতিক শিবিরের যা অবস্থা, সেখানে মরনপ্রাণ লড়াই চালাচ্ছে ইন্ডিয়া। এগেন্সট ভারত। এই ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স মোদী জমানায় কোন না কোন ফাঁক দেখতে পাচ্ছে। আর সেটাকেই ইস্যু তৈরি করছে। কিন্তু একইসঙ্গে আমাদের এটাও দেখতে হবে, ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স যে যে শূন্যস্থান পূরণ করছে, সেদিকেই নজর দেওয়া উচিৎ মোদী গভর্নমেন্টের। ভারতবাসী কোনদিনই এক পক্ষে কথা বলে না। কারণ আমার, আপনার মত ভারতবাসী দিনের শেষে সুরাহা চায়। সেটা রেলে যাত্রী পরিষেবা হতে পারে আবার ঘর বানানোর কাঁচামাল হতে পারে। দেশের প্রত্যেকটি সেক্টর যদি সমানভাবে আমজনতার কথা না ভেবে নিজের পলিসি ঠিক করে তাহলেই গণ্ডগোল। তখনই আজকের হিরো, কাল ভিলেন হয়ে যাবে। সত্যি বলতে কি, ভারতবাসীর মধ্যে এই ইউনিটি কোন সরকারকেই স্বস্তিতে থাকতে দেয় না। সরকার আরামকেদারায় থাকবে আর দেশবাসী কষ্ট পাবে সেটা কি করে হবে বন্ধুরা?
জনমোহিনী পলিসি নিয়ে এলেও অনেক ক্ষেত্রে ল্যাক থেকে যায়। পলিসি মেকারদের গলদ নাকি নেতা মন্ত্রীদের থিঙ্কিং-এ সেই গলদ রয়েছে? দেখুন, ইন্ডিয়া বা ভারত যাই বলুন না কেন, দেশের ইকোনমি ফিফথ লারজেস্ট ইকোনমি। এদিকে জনসংখ্যায় প্রথম। তাও সেটা সবথেকে সুবিধের কারণ ইয়ং পপুলেশন। একটা সময় যা চিনের ছিল, আজ সেটা ভারতের। ভারত সরকার তো এটাকেই হাতিয়ার করেছে। মোদী ঘনঘন ভিজিট করছেন একের পর এক দেশ। যে দেশগুলোয় আগে কোন ইন্ডিয়ান পিএমের পা পড়েনি, সেখানে মোদী ছুটে চলেছেন। উদ্দ্যেশ্য একটাই। দেশে বিনিয়োগ নিয়ে এসো। কিন্তু বিনিয়োগ আনলেই কি কর্মসংস্থানে সুনামি আসবে? সেটা হচ্ছে কোথায়? এক শ্রেণির মানুষের হাতে টাকা নেই। আর অন্য শ্রেণির মানুষের হাতে প্রচুর টাকা। তারাই এমপ্লয়ার হিসেবে উঠে আসছেন। সেই মতন এমপ্লয়ি পাচ্ছেন। তারপরেও প্রশ্ন থাকছে, তাহলে কেন বেকারত্ব। তাহলে কেন মূল্যবৃদ্ধি। তাহলে কেন আমজনতার কর্মসংস্থান নিয়ে তৈরি হচ্ছে প্রবল ধোঁয়াশা। এমনই আরও বহু কেন রয়েছে। যাকে হাতিয়ার করছে ইন্ডিয়া। আর ধীরে ধীরে ব্রহ্মাস্ত্রের ছুঁচলো দিক এগিয়ে যাচ্ছে মোদী সরকারের দিকে।
মোদী পিছু হটেন নি আর ভবিষ্যতে সেটা হওয়াও বেশ কঠিন। অনেক বিজ্ঞের মতে, আগামী ইলেকশনে মোদীই প্রধান মুখ এবং মন্ত্রী। তবে কংগ্রেস হয়ত মোদী ম্যাজিকে কিছুটা হলেও কালি ছিটিয়েছে। ফলে এনডিএ এবং ইন্ডিয়ার গ্যাপ কমবে নির্বাচনের ফলাফলে। তাহলে কি মানুষের মগজ এবার ঘুরছে একেবারে অন্যদিকে? দেশের ইনফ্রাস্ট্রাকচার, কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ করতে গিয়ে সরকার রাজকোষের পাশাপাশি ধারের অঙ্ক বাড়িয়ে চলেছে। আর সেটাই হয়ত ব্যাকস্ট্যাব করতে পারে মোদী গভর্নমেন্টকে। কংগ্রেস দাবি জানিয়েছে, গুজরাতে ক্রমশ ধার বাড়ছে। বাংলার ধারও কম নয়। তবু ধার করে কি আর নিজের ধার ধরে রাখা যায়? ভোঁতা হয় থোঁতা মুখ। কারণ মোদী বারবার টার্গেট করেছেন মুখ্য বিরোধী দল কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলোকে। যে রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় নেই সেই সকল রাজ্যেই ধারের অঙ্ক বেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একে বলে ক্ষুদ্র ঋণ। একটা তথ্য দিচ্ছে মাইক্রো ফিনান্স ইন্সটিটিউশন নেটওয়ার্ক। তারা বলছে, বাংলায় একটি শিশু জন্মালে তার মাথায় ঋণের বোঝা চেপে বসে ৫৩ হাজার টাকার বেশি। এরপরেই রয়েছে কেরালা। সেখানে মাথাপিছু ঋণ ৪৬ হাজার টাকা ক্রস করে গেছে। ক্ষুদ্র ঋণের পরিমাণ বাড়ছে মানে, সেই রাজ্যে ভালো কাজের পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছে না। কাজের পরিকাঠামোয় কোন আমূল বদল না এলে তখন দিনের শেষে মাথা পিছু ধার বাড়বেই। এই ধার সরকার করে। অনেকেই বলছেন, পোস্ট কোভিড সিচুয়েশনে আনএমপ্লয়মেন্টের হার ব্যপক বেড়েছে। ফলে ক্ষুদ্র ঋণের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। তার মানে ধার মেটাতে আবার ধার! বিষয়টা কেমন গোঁত্তা খাবার মত হচ্ছে না! পুঁজির এতো অভাব কেন? ব্যবসা-বাণিজ্য নেই? মোদী বলছেন আছে, তাহলে রাজ্যে কোথায়? হালফিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পেন, সৌদি ঘুরে এলেন। বললেন বিনিয়োগ আসবেন। যেমন দেশ, তেমন রাজ্য। নেতামন্ত্রীদের বক্তব্যকে অবহেলা আমরা করি না। কিন্তু তারা যদি তাদের পলিসি ইমপ্লিমেন্টে অবহেলা করেন, তাহলে আমি, আপনি কোথায় গিয়ে দাঁড়াব? মানুষ প্রশ্ন করবেই। আর সুরাহা দিতে হবে সরকারকেই।
মুশকিল হচ্ছে, মোদীজি এই সুরাহা দিতেই ব্যর্থ। ব্যর্থ কারণ ১৯৭৬-৭৭ সালের পর মানুষের হাতে সঞ্চয় এভাবে কমেনি কোনদিন। ২০০৬-০৭ সালে একবার এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তবে সেটাকে সামাল দেওয়া গিয়েছিল। এখন সাধারণ মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি আগে যেখানে সংসার খরচ সামাল দেবার পরেও টাকা জমাতে পারত, সেটা আজ কমে গেছে। গৃহস্থের দেনার বোঝা বাড়তে বাড়তে পৌঁছে গিয়েছে ৩৭.৬ শতাংশে। গত বছরের থেকে বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশের বেশি। আর এটাই কিন্তু মোদীর গদি টলিয়ে দিতে পারে। কারণ দিনের শেষে ভাই টাকা চাই। যে দেশে ভরাট রাজকোষ, সেই দেশে আর কে করে অসন্তোষ? কিন্তু এখন সেই অবস্থাটাই তো আর নেই। সাধারণ ফ্যামিলি যদি সঞ্চয় না করতে পারেন, তাহলে ধার করতেই হবে। না…না ধারের টাকা সঞ্চয় করছেন না। ধারের টাকা দিয়ে সংসার সামলাচ্ছেন। আচ্ছা একটা প্যারামিটার সেট করা যাক। দেশে তিন ধরণের মানুষ থাকেন। গরীব, মধ্যবিত্ত এবং ধনী। গরীব মানুষ দিন আনে দিন খান। সুতরাং টাকা জমানো তাঁদের পক্ষে অসম্ভব। ধনীরা আবার সঞ্চয় করেন আয়ের অনেকটা অংশ। কিন্তু ভারতে ধনী কোথায়? আর রইলেন মধ্যবিত্ত। এদের হাত ধরেই কিন্তু জিডিপির ওঠানামা বেশিই ডিপেন্ডেন্ট। কারণ মধ্যবিত্তরা আরনিং-এর মাত্র ৩০-৫০% সঞ্চয় করেন। সেই সঞ্চয় এখন ক্রমশ কমছে। যেদিকে জলের স্রোত, মনে করা হচ্ছে নেক্সট ফিনান্সশিয়াল ইয়ারে এই জমানোর হার নেমে আসবে একেবারে ৪ শতাংশে। একটা পরিসংখ্যান দিয়ে বলা যাক।
২০২১-২২ সালে গৃহস্থের মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল ১৬.৯৬ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে কমে হল ১৩.৭৬ লক্ষ কোটি টাকা। এই যে সঞ্চয়ের হার্ড ল্যান্ডিং হয়েছে, এই ট্রেন্ড বজায় থাকলে কিন্তু হার্ড ল্যান্ডিং হবে। আর সেটা মানে ক্র্যাশ। সঞ্চয় না বাড়লে কত বিপদ বলুন দেখি। না পারবেন কেনাকাটা করতে- যেমন মোবাইল, ল্যাপটপ, গাড়ি, বাড়ি আর না পারবেন কোথাও বিনিয়োগ করতে। দেশের মানুষের লগ্নি কমলে তার এফেক্ট পড়বে শেয়ার বাজারে। তার এফেক্ট পড়বে দেশের ইন্ডাস্ট্রিয়াল খাতে। তার এফেক্ট পড়বে দেশের ইকোনমিতে। তার এফেক্ট পড়বে আমার-আপনার হেঁশেলে।
ঐ কারণেই তো বলছি, যা দেখছেন তার সবটাই কি বিশ্বাস করা যায়? কোথায় কাজ? ইয়ং পপুলেশনকে বিভিন্ন সেক্টরে ইনভল্ভ করানোর জন্য সরকারের তরফ থেকে সেই ড্রাইভিং ফোরস কোথায়? কোথায় বিভিন্ন টেকনোলজি নিয়ে এসে সাধারণ মানুষদের আরও কর্মক্ষম করে তোলা? আবার শুধু কর্মক্ষম করলেই হল না। কাজের বাজারটাও তৈরি করতে হবে। শুধু ফিফথ লারজেস্ট ইকোনমির বাঁশি বাজিয়ে কোন লাভ নেই। যতদিন না সাধারণ মানুষের সঞ্চয় বাড়ছে, হতাশা কেটে মানুষ কাজকম্মো করে সুখে দিন কাটাচ্ছেন, যতদিন না বিদেশি কোম্পানিগুলো ভারতে বিনিয়োগ করে ম্যাসিভ কিছু চেঞ্জেস আনছেন, ততদিন পর্যন্ত এই প্রবলেম থেকে যাবেই। আর গদিতে যে সরকারই থাকুক, বিরোধীরা এই ইস্যুকে হাতিয়ার করবেই। যেটা এখন করছে ইন্ডিয়া। মানে দিনের শেষে চাপে রয়েছে সেই ভারত এবং ভারতবাসী। এনডিএ জোট বা মূলত বিজেপি সরকার যদি মূল্যবৃদ্ধি না কমাতে পারেন তাহলে যে সত্যিই মোদীর গদি টলমল করবে। আর এই কারণেই বললাম, দূর থেকে যাহা চকচক করে তাহাই কিন্তু সোনা নয়।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ