Trending
ভারত পেল পরশপাথর। পরশপাথর অর্থাৎ সাদা সোনা আবারও। জম্মু-কাশ্মীরের পর রাজস্থান। এবারের খোঁজে পাওয়া গেল জেকে-র থেকেও অনেক বেশি। অতএব, বিশ্বমানচিত্রে খেল দেখানোর পথে ভারত। প্রয়োজন নেই চিন বা অন্য দেশের ওপর নির্ভরতা। অনেকগুলো কাটা কাটা বাক্য বলে ফেললাম। ঠিক বুঝলেন না তো? তাহলে খোলসা করে দিই পুরোটা।
বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়েছিলেন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক। দূষণ আটকাতে আজ ইভি গাড়ির চাহিদা বিশ্বব্যাপী প্রত্যেকটি দেশেই বাড়ছে। সরকার চাইছে নিজেদের দেশের আভ্যন্তরীণ বাজারে ইভি গাড়ির প্রচলন আরও বাড়ুক। কিন্তু তার জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভর হওয়া খুব প্রয়োজন। যেমন চিন। কারণ, ইভি গাড়ির ব্যাটারি তৈরিতে যে সাদা সোনার প্রয়োজন পড়ে। সাদা সোনা অর্থাৎ লিথিয়াম। ভারতে জম্মু-কাশ্মীরের পর সেই সাদা সোনার খোঁজ আবারও- একেবারে রাজস্থানে। এই রাজ্যের দেগানায় বিপুল পরিমাণ পরশপাথর হাতে উঠল জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার। মানে লিথিয়ামের। মনে করা হচ্ছে, এর ফলে দেগানার অর্থনীতিতে পরিবর্তন তো আসবেই। একইসঙ্গে দেশের অর্থনীতিতেও গেম চেঞ্জার হয়ে উঠতে চলেছে রাজস্থানে পাওয়া লিথিয়ামের খোঁজ। অনুমান, জম্মু-কাশ্মীরের থেকেও রাজস্থানে আরও অনেক বেশি পরিমাণ মজুদ রয়েছে লিথিয়াম। আর যে কারণে দেশের ৮০% চাহিদা পূরণ করা সহজেই সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
একটা ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারি তৈরির জন্য ১০ কেজি লিথিয়ামের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া মোবাইল, ল্যাপটপের মতন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস তো রয়েছেই। ভারতকে এসব কিছুর জন্য হাপিত্যেশ করেই এতদিন বসে থাকতে হত। কিন্তু এখন বদলে যেতে চলেছে সময়। মনে করা হচ্ছে, এখন যে পরিমাণ লিথিয়াম আমরা পেয়েছি, তারপর যদি ঠিকঠাকভাবে পুরোটা প্রসেস করে লিথিয়াম কাজে লাগানো যায়, তাহলে কিন্তু পরনির্ভরতা ভারত অনেকটাই কমিয়ে আনবে। সেই প্রভাব সরাসরি পড়বে দেশের বাজারে। কারণ, এর ফলে মোবাইল ল্যাপটপের মত ডিভাইসের দাম অনেকটা কমে আসবে। একইসঙ্গে ইভি সেক্টরে কিন্তু ভারত এগিয়ে যাবে বিশ্বগুরুর পথে।
বিশ্বগুরু…তাই কী? সেটা কি সম্ভব? আজ্ঞে সেটাও এতোটা সহজ নয়। কারণ আর অন্য কিছু নয়। ভারতের ঘাড়ে এখানেও নিঃশ্বাস ফেলছে চিন। লিথিয়াম মজুদের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে বলিভিয়া। এখানে মজুদ রয়েছে ২ কোটি টন মত লিথিয়াম। মুশকিল হচ্ছে, সেখানে লিথিয়াম উত্তোলন করার মতন টেকনোলজি নেই। চিন চুপিসারে সেই চুক্তি করে নিয়েছে। একেবারে উত্তোলন আর সেখান থেকে প্রসেস। স্বাভাবিকভাবেই, এখানেও ভারতের থেকে বিশ্ব মার্কেটে লিথিয়ামের জন্য চিন অনেকটাই হাত শক্ত করে রেখেছে। ভারতের হাত সেদিক থেকেও আলগা। সবথেকে বেশি লিথিয়াম এখন উৎপাদন করা হয় অস্ট্রেলিয়ায়। বিশ্বে লিথিয়াম উৎপাদনের প্রায় ৪৭%। চিলিতে হয় ৪৭% এবং চিনে হয় ১৫% মতন। মুশকিল হচ্ছে চিন লিথিয়াম প্রসেসের ৬০% বাজার নিজের দখলেই রেখে দিয়েছে। এবার ভারত যদি নিজেই সেই কাজটা নিজের দেশে করতে পারে, তাহলে এর থেকে বড় পাওনা আর কিইবা হতে পারে?
এবার বলি লিথিয়াম কোথায় কোথায় ব্যবহার করা হয়? মোবাইল, ল্যাপটপের মতন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে তো বটেই, একইসঙ্গে পেসমেকার, ঘড়ি বা খেলনাতেও ব্যবহার করা হয় সাদা সোনা। সাইকেলের ফ্রেম বা হাই স্পিড ট্রেন- সেখানেও লিথিয়াম ছাড়া গতি নেই। গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিতে লিথিয়ামের ব্যবহার রয়েছে। হাইড্রোজেন ফুয়েল রিজার্ভেশন বা ডিপ্রেশনের ওষুধের জন্য লিথিয়াম কার্বনেটের ব্যবহার রয়েছে। অর্থাৎ, বর্তমান পৃথিবী যেদিকে এগোচ্ছে, সেখানে লিথিয়াম সত্যিই যেন দিনে দিনে পরশপাথরই হয়ে উঠছে। তাই যে দেশে লিথিয়ামের খোঁজ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাবে এবং একইসঙ্গে ব্যবহার করার মত পরিকাঠামো তৈরি করা যাবে, সেই দেশের অর্থভাগ্য বদলাবেই। এখানেই জানিয়ে রাখি, ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বেশ কিছু বে-সরকারি কোম্পানি লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি তৈরির প্রস্তাব রেখেছে। কিন্তু সত্যিই কি ভারতে উত্তোলিত লিথিয়াম দেশকে ইকোনমিকালি একটা বড় জাম্প দিতে পারবে?
এখানেই একটা বিষয়। লিথিয়াম উত্তোলন করার জন্য বড় রকমের দূষণ তৈরি হবার আশঙ্কা থাকে। কারণ লিথিয়াম উত্তোলন করার জন্য যেমন প্রচুর পরিমাণ জলের প্রয়োজন তেমন প্রচুর পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে মেশে। ফলে একদিকে পরিবেশ বাঁচানোর জন্য যেমন লিথিয়াম আবশ্যিক, তেমনই লিথিয়াম প্রসেসিং-এর জন্য আবার বায়ু দূষণের আশঙ্কাও থেকে যায়। তবে ঐ আশায় মরে চাষা। কারণ খেয়াল রাখতে হবে, শুধু লিথিয়াম উত্তোলন করলেই তো হল না। একইসঙ্গে লিথিয়ামকে ব্যবহার করার জন্য সেই প্রযুক্তির ঠিকঠাক ব্যবহার হওয়াটা বিশেষ প্রয়োজন। আপাতত এইটুকুই। লিথিয়াম বা সাদা সোনা বা পরশপাথর সবই তো পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু ভারতের বাজারে সেটা কতটা সুফল দেবে?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ