Market
লাইফ ইনশিওরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া বা এলআইসি। ১৯৫৬ সালে সংস্থাটি তৈরি হয় ভারতের জীবন বীমা আইন পাশ হওয়ার পরে। তারপর কেটে গিয়েছে ৬৬ বছর। সুনাম এবং বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করার পাশাপাশি আজ এলআইসি পৌঁছে গিয়েছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। কোটি কোটি সাধারণ মানুষের ভরসার জায়গা তৈরি হওয়ায় এলআইসি দেশের বৃহত্তম জীবন বীমা সংস্থায় পরিণত হয়েছে। ভারত সরকারের অধীনস্থ এই সংস্থাটি সরকারের খরচের ২৪ শতাংশেরও বেশি জোগান দিয়ে থাকে। আজ সেই এলআইসির অংশীদারিত্ব বিক্রি করে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন? আর বিক্রি করা হলে আদৌ কি উদ্বেগের কোন কারণ থাকবে?
কেন্দ্রে মোদী সরকার আসার পর থেকেই বেসরকারিকরণের ধূম উঠেছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অংশীদারিত্ব বাজারে বিক্রি করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। লক্ষ্য কেন্দ্রীয় কোষাগার ভরাট করতে হবে। ২.১ লক্ষ কোটি টাকা দিয়ে কোষাগার ভরাট করার জন্য যে সকল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির দিকে হাত বাড়িয়েছে সরকার, তার মধ্যে অন্যতম এলআইসি। মনে করা হচ্ছে, এলআইসির ৬ থেকে ৭ শতাংশ শেয়ারও যদি সরকার বিক্রি করে দেয়, সেক্ষেত্রে সরকারের কোষাগারে এক ধাক্কায় ঢুকতে পারে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। সরকার বলছে, এর ফলে আরও নির্ভরযোগ্য জায়গায় পৌঁছবে সংস্থার আর্থিক স্থিতিশীলতা। এমনকি এলআইসি যদি তাদের আইপিও বাজারে ছাড়ে সেক্ষেত্রে তার বাজার মূল্য পৌঁছে যেতে পারে ১০ লক্ষ কোটি টাকায়। বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এত বিশাল অঙ্কের আইপিও এর আগে কোনদিন বাজারে তেমন আসেইনি। ইতিমধ্যে এলআইসির আইপিও ছাড়া নিয়েও তৈরি হচ্ছে ব্যপক উন্মাদনা। কিন্তু একইসঙ্গে জমা হচ্ছে উদ্বেগ। কেন?
বর্তমানে এলআইসির নেট ভ্যালুয়েশন প্রায় ১৫ লক্ষ কোটিরও বেশি। শাখা রয়েছে ২ হাজার মতন। গোটা দেশে এজেন্ট রয়েছে ১৩ লক্ষের বেশি বৈ কম নয়। এলআইসির অধীনে রয়েছে এনডাউমেন্ট প্ল্যান, মানি ব্যাক প্ল্যান, পেনশন প্ল্যান, মাইক্রো ইনশিওরেন্স প্ল্যানের মত এমন একাধিক প্ল্যান। আর এই প্রতিটা প্ল্যানেই দেশের বিরাট সংখ্যক মানুষ ইনভেস্ট করে থাকেন। তার মানে পরিষ্কার যে, আজ এলআইসি যেভাবে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করে নিয়েছে সেদিক থেকে দেখতে গেলে অংশীদারিত্ব বিক্রির খবর পেলে উদ্বেগ তৈরি হবে পলিসি হোল্ডারদের মধ্যে। কিন্তু সরকার বলছে অন্য কথা। সরকারের মতে এলআইসি শেয়ার ছাড়লে বীমা গ্রাহকরা সস্তায় শেয়ার কিনতে পারবেন। যা তাঁদের অনেকটাই স্বস্তি দেবে। একইসঙ্গে এলআইসি আইপিও ছাড়লে বহু বিনিয়োগকারীর কাছে সেটাই তুরুপের তাস হয়ে যাবে। বর্তমানে এলআইসি-তে বিদেশি বিনিয়োগের কোন জায়গা না থাকলেও শোনা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার সংস্থার ২০% শেয়ার ছেড়ে দেবে বিদেশি পুঁজির বিনিয়োগের জন্য। শোনা যায়, এলআইসিতে বিদেশি বিনিয়োগে আগ্রহ ছিল নাকি চিনের। কিন্তু সেই পথ আপাতত বন্ধ রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, হয়ত এই মাসের মধ্যেই এলআইসি ছাড়তে চলেছে আইপিও। সেক্ষেত্রে একদিকে শেয়ার বাজার জুড়ে যেমন তৈরি হবে উন্মাদনা। তেমনই আবার পলিসি হোল্ডারদের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ বাড়ার সম্ভাবনা। কিন্তু যত যাই হোক। অর্থশাস্ত্র এবং গণিতশাস্ত্রের সুন্দর কম্বিনেশনের দরুন এলআইসিকে নিয়ে সরকার থেকে সাধারণ মানুষ প্রত্যেকেরই মনে তৈরি হয়েছে আশা, ভরসা। এখন পরিস্থিতি কোনদিকে দাঁড়ায়? সেটাই দেখার।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ