Daily

ভাষার মৃত্যু মানে একটি জনজাতির সমাপ্তি। আর জনজাতির সমাপ্তি মানে সংশ্লিষ্ট জাতি থেকে পাওয়া শিক্ষার মৃত্যু। যা একদিক থেকে অপূরণীয় ক্ষতি বলে মনে করছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো অরণ্যবাসী মানুষদের দীর্ঘদিনের জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা। তাই সেই মানুষগুলোর ভাষা যদি হারিয়ে যায় তাহলে কার্যত আয়ুর্বেদ শাস্ত্র বা ভেষজ শাস্ত্রের অনেকটা অংশ ফাঁকা থেকে যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকার প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সাইন্স পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এমনই একটি রিপোর্ট যেখানে স্পষ্ট, ভাষার মৃত্যু নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে এখনও পর্যন্ত উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকাতে ১২৪৯৫ টি ওষধি গাছের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। কিন্তু যার ব্যবহার সম্পর্কে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেকটাই অন্ধকারে। কারণ এই সকল ওষধি গাছের গুণাগুণ এবং তার ব্যবহার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রয়েছেন একমাত্র আদিবাসী মানুষেরাই। এরমধ্যে ৭৫% গাছের গুণাগুণ জানা আছে কেবলমাত্র একটি উপজাতির। যাদের ভাষা হারিয়ে গেলে সেই গাছটির ব্যবহার সম্পর্কে আর কোনরকম সূত্র খুঁজে পাবেনা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান। সর্বোপরি, উপজাতি মানুষের ভাষা নিয়ে কোনরকম আলোচনা বা ভাষা শিক্ষা করা হয় না বলে সেই সকল ভাষা এবং গাছের ব্যবহার কী তা পুনরুদ্ধার করা আগামী দিনে কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে।
উল্লেখ্য, ইউনেস্কোর তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে প্রতি চার মাসে একটি করে ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় বিপন্ন হচ্ছে চারটি করে ভাষা। বর্তমানে পৃথিবীতে সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে তিন হাজারের মত ভাষা যার অধিকাংশের কোন লিখিত রূপ নেই। কিন্তু এটাও ঠিক কয়েক হাজার বছর ধরে চলে আসা এই সমস্ত ভাষার কারণেই এমন বহু ব্যাধি আছে যার উপশম করা সম্ভব হয় গাছের ভেষজ গুণ ব্যবহার করে। সেই সকল গাছের গুনাগুন এবং তার চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে একমাত্র ওয়াকিবহাল এই উপজাতি মানুষগুলো। তাই ভাষা সংকট সত্যি করেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য অশনিসংকেত নিয়ে আসছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
ব্যুরো রিপোর্ট