Agriculture news
ফুলের দর কত সেটা দেখতে পাচ্ছেন নিশ্চয়ই। কখনই ভাববেন না যে দুর্গা পুজোয় দাম বেশি ছিল আর লক্ষ্মী পুজোয় দাম তো কম। একেবারেই সেটা নয় কিন্তু। দুর্গা পুজোয় দাম যা ছিল, লক্ষ্মী পুজোয় দাম তার থেকে কম, সেটা ঠিক। কিন্তু গণ্ডগোল যে সেখানেও। কীই রজনীগন্ধা, কী বেল আর কীই বা গাঁদা, দোপাটি। যে দাম লক্ষ্মী পুজোর জন্য দেখছেন, সেটাও অনেক বেশি। আর এই মূল্যবৃদ্ধির যন্ত্রণা থেকে রেহাই নেই ফুল চাষিদের। রেহাই নেই আমজনতার। মানে লক্ষ্মী পুজোর দিনে একটা সংশয়, উৎকণ্ঠা- কারণ শুধু ক্ষতির বহর বেড়ে চলা। তাহলে কি সুরাহা নেই? উত্তর খুঁজতে বিজনেস প্রাইম নিউজ পৌঁছে যায় ফুল চাষিদের কাছে। কিন্তু আশার কথা শোনা গেল কই? আর হঠাৎ কেন ক্ষতির বহর?
ফুল কৃষিপণ্য হিসেবে স্বীকৃত নয়। তাই ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়াটাও সম্ভব নয়। তা সে প্রকৃতির মর্জি হোক বা যাই হোক। এবারে দেরিতে ঢুকেছে বর্ষা। ফলে বর্ষার সময়ে যে ফুল হবার কথা সেই ফুলের চাষ ভালোরকম বিঘ্নিত হয়েছে। তারপরেই নিম্নচাপের ধুম। ফলে হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর- মানে যে সকল জেলাগুলি ফুল চাষের জন্য রাজ্যে ফার্স্ট লিস্টে থাকে, সেই জেলাগুলিতেই নিম্নচাপের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ে ফুল চাষ। আর এখন উৎসবের মরশুম। তাই ফুলের চাহিদা বেশি থাকে এই সময়। কিন্তু জোগানে ব্যপক অভাব দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। অতএব ফুলের দর বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকটা। এই মূল্যবৃদ্ধির অঙ্কটা কিছুটা অস্বাভাবিক তো বটেই। লক্ষ্মী পুজোর উদ্যোক্তাদের খরচ না হয় বাড়বে। তবে দিনের শেষে সবদিক থেকে ক্ষতির মুখে পড়বেন চাষিরাই। কারণ প্রথমত, চাষ করার সময় যে ক্ষতি হয়েছিল সেই ক্ষতিপূরণ এখন তাঁরা পাবেন না। আর দ্বিতীয়ত, কিছু ব্যবসায়ীরা যেসকল জায়গা থেকে সামান্য হলেও ফুল পাওয়া যাচ্ছে, সেখান থেকে চড়া দামে কিনে মুনাফা লুটছেন। এই অভিযোগ কিন্তু একেবারেই হেলাফেলা করার নয়। ক্যামেরায় এই অভিযোগ তুলেছেন সারাবাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক।
জেলায় ক্ষুদ্র ফুল চাষির সংখ্যা অনেক। নিম্নচাপের বর্ষণে ফুলের জমি জলমগ্ন হয়ে যায়। যেটুকু ফুল হয়েছিল, সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ফলে নষ্ট হওয়া জমিতে ফুলের চাষ আবার কি করে হবে? আর করলেও তো সেটা খরচসাপেক্ষ।
পদ্মের দাম যেখানে দূর্গা পুজোয় ছিলো পার পিস ৪০-৫০ টাকা সেখানে লক্ষ্মীপুজোর একদিন আগে কোলাঘাট, দেউলিয়ার বাজারে ফুল বিক্রি হয়েছে ৩৪-৪০ টাকায়। কারণ একটাই। উৎপাদন কম। পদ্ম, দোপাটি, গোলাপ, বেল, জুঁই, গাঁদা, অপরাজিতা, জবার আগুন দামে মাথায় হাত পড়েছে ফুল চাষিদের। অন্যান্য রাজ্যে যে ফুল পাঠানোর কথা, সেখানেও ছেদ পড়েছে। ফলে বাজারজাত হয়নি কিছুতেই। অতি বর্ষণের ক্ষতির শিকার হয়েছেন ফুল চাষিরা। তাহলে কি ক্ষতিপূরণ পাওয়া সম্ভব?
ধনদেবীর আরাধনায় মেতেছেন আমবাঙালি। মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদে পরিবারে সুখ, সমৃদ্ধি আরও বিকশিত হবে। সেই কারণে ঘরে ঘরে শুরু হল লক্ষ্মীপুজো। কিন্তু ফুল ছাড়া কি দেবতার পুজো হয়? আর সেই ফুল যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে জমিতে নিয়ে এলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যাদের সব ফুল নষ্ট হয়ে গেল, আজ তাঁরাই শুধু ক্ষতির বহর গুনছেন। নাহ, লক্ষ্মী দেবী এদের উপর যেন প্রসন্ন হলেন না। ঈশ্বর নাকি সরকার? এই বিষয়টা সরকারের নজরে আসা উচিৎ। চাষি সে যতই ক্ষুদ্র হোক, আজ তাঁদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গ্রামীণ অর্থনীতি জোরদার হয়। গ্রামের অর্থনীতি মজবুত হলে দিনের শেষে রাজ্যের ইকোনমি মজবুত হবে। কিন্তু…দরজায় তো কড়া নাড়ছেন তাঁরা। সরকার তাকাচ্ছে কই? এই প্রতিবেদন ভালো লাগার নয়। তাই শেয়ার করুন, ব্যপকভাবে। সঙ্গে সাবস্ক্রাইব করুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
প্রসূন ব্যানার্জী
পূর্ব মেদিনীপুর