Daily
‘ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো’ আর লাগে কিনা জানা নেই। তবে বিভিন্ন হিন্দু পুজো পার্বণ হোক বা বিয়ের অনুষ্ঠান। কুলোর বিকল্প পাওয়া কিন্তু প্রায় অসম্ভব। কুলোর প্রচলন তো আর আজ থেকে নয়। এইতো আর দুটো দিন পরেই ছট পূজো। পুণ্যার্থীরা দলে দলে হাতে কুলো সাজিয়ে যাবে পুজো আরাধনার উদ্দ্যেশ্যে। স্বাভাবিকভাবেই এই কুলোর চাহিদা এই সিজনে দাঁড়িয়ে আকাশছোঁয়া। আর এই
তবে এই বছর প্রথম না। প্রায় প্রতিবছর কালীপুজোর পর পরই সামান্য কিছু আয়ের আশায় তারা একত্রিত হয় এইখানে। একজন দুজন নয়। বিভিন্ন জেলার প্রায় জনা ত্রিশেক শিল্পীকে দেখা যাবে এখানে কুলো তৈরি করতে। বর্তমানে এই হস্তশিল্পের ওপর ভিত্তি করেই তাদের জীবিকা যাপন।
বাংলার কুটির শিল্পের অন্যতম একটি উপাদান হল বাঁশ। কেউ কেউ নদীয়া, কেউ বা মুর্শিদাবাদ, কেউ আবার হুগলি। প্রত্যেকে নিজেদের গ্রাম থেকে এই বাঁশ সংগ্রহ করে এনে এখানে এসে এই কুলো প্রস্তুত করে।
এই কুলোর এক বড় অংশের খোদ্দের হলো বিহারী সম্প্রদায়ের মানুষজন। সিজনের উপর ভিত্তি করে অন্যান্য জিনিসের মতো এই কুলোরও দাম ওঠানামা করে। আর দুদিন বাদেই ছট পূজো হওয়ার কারণে এটাই এখন এই কুলো বিক্রির আসল সিজন। স্বাভাবিকভাবেই এখন বাজারে চাহিদা বেশ ভালো থাকায় ৫০-৬০ টাকা দরে তারা এইগুলো বিক্রি করছেন।
গত বছরের তুলনায় এবারে বাজারে দাম কিছুটা বাড়ায় আশাবাদী তারা প্রত্যেকেই। কিন্তু জিনিসের দামের ক্রমশ বৃদ্ধি, তাদের কপালে এখনও চিন্তার ভাঁজ তৈরি করে রেখেছে।
শুধু শেওড়াফুলিই নয়। বেলুড় সহ আসেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে তাদের থেকে হোলসেল প্রাইসে এই কুলো কিনে নিয়ে গিয়ে তাদের এলাকায় বিক্রি করছেন।
বেদে সম্প্রদায়ের মানুষজন বাঁশ জড়িত হস্তশিল্পের সাথে প্রায় সারা বছরই নিযুক্ত থাকেন। এক সময় তাদের নির্দিষ্ট কোন স্থায়ী এলাকা ছিল না। ছিল না নিজের বাড়ি ঘরও। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন তাদের নির্দিষ্ট এলাকা তৈরি হয়েছে। কমবেশি প্রত্যেকেই হয়েছেন স্বাবলম্বী। এই শিল্পই তাদের কাছে এখন জীবিকা। বিশেষ করে এই ছট পুজোর সময় বিশ্রামেরও সুযোগ পান না তারা। সামান্য কিছু লাভের আশায় কুলো তৈরি করতে কার্যত রাত দিন এক হয়ে যায় তাদের। আগের বার করোনার রেশ সঠিক ভাবে না কাটায় অন্যান্য জিনিসের মত এরও চাহিদা কমেছিল। কিন্তু এই বছর পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক। যার কারণে বাড়তি লাভের আশা দেখছেন এই বেদে সম্প্রদায়ও।
সুব্রত সরকার
হুগলি