Trending
কৃষ্ণনগর বললেই সবার আগে মাথায় আসে পলাশির যুদ্ধের কথা। আর পলাশির যুদ্ধ বললে সবার আগে মাথায় আসে একটা শব্দ- যা হালফিলের বঙ্গ রাজনীতিতে খুব ঘুরপাক খাচ্ছে। আর সেটা হল মীরজাফর, গদ্দার। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কয়েকবার মীরজাফর শব্দটি মুখে এনেছেন। সেটা অবশ্যই কার দিকে ইঙ্গিত করেছেন বলার প্রয়োজন নেই, তবে বিজেপির বহু মাথারা মনে করেন কৃষ্ণনগরের গদ্দার নাকি নিজেই এবারের তৃণমূল প্রার্থী। তিনিই নাকি দেশের সঙ্গে গদ্দারি করেছেন। কিন্তু তারপরেও কি তৃণমূলের পায়ের মাটি ছিটেফোঁটা নড়বড়ে হয়েছে?
এই কৃষ্ণনগর ছিল বামেদের দুর্গ। একবার এখানেই পদ্ম ফুল ফুটিয়েছিলেন বিজেপির জুলুবাবু বা সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়। তবে সময়ের নিয়মে এই বাম দুর্গ ভেঙেছে। আর পায়ের মাটি শক্ত হয়েছে তৃণমূলের। আজ কৃষ্ণনগরে নির্বাচন হলে বামেদের বা কংগ্রেসীদের বিগত দিনের ছবিটা একেবারেই পরিষ্কার হয় না। বরং তাঁরা এখন রয়ে গেছেন একেবারে তৃতীয় বা চতুর্থ সারিতে। আর প্রথম এবং দ্বিতীয়তে রয়েছে তৃণমূল এবং বিজেপি। তৃণমূলের হয়ে এই লোকসভা নির্বাচনে যিনি দাঁড়িয়েছেন, তাঁর মত হেভিওয়েট প্রার্থী কিন্তু বঙ্গ রাজনীতিতে মেলা ভার। তিনি মহুয়া মৈত্র। যাকে নিয়ে মুখ্য বিরোধী দল বিজেপির আঙুল বারবার উঠেছে। আর মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে লড়ছেন বিজেপির প্রার্থী অমৃতা রায়, যিনি কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের রাজবধূ। আর সিপিএমের হয়ে লড়াই করছেন এস এম সাদি। তবে সবথেকে অবাক করা বিষয় হল, এবারের বাম প্রার্থী সেভাবে ভোটযুদ্ধে তেমন একটা এক্স ফ্যাক্টর হয়ে ওঠেন নি এই অমৃতা-মহুয়ার মুখোমুখি ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হবার কারণে। ফলে প্রশ্ন উঠছে কার হাতে যাবে কৃষ্ণনগর? তবে তার আগে জেনে নেওয়া যাক কৃষ্ণনগরের বিধানসভা কেন্দ্রগুলি কি কি? তেহট্ট, চাপড়া, কৃষ্ণনগর উত্তর, কৃষ্ণনগর দক্ষিণ, পলাশিপাড়া, নাকাশিপাড়া এবং কালীগঞ্জ। যদি ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকাই তাহলে কৃষ্ণনগরে মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ লক্ষ ২৪ হাজার ৮৬৬। গ্রামীণ ভোটার রয়েছেন ৮৭.৩% এবং শহুরে ভোটার রয়েছেন ১২.৭%।
যদি ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচন দেখি, সেখানে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হয় তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে। আর পিছনে চলে যায় বামেরা। ৬৫ হাজারের বেশি ব্যবধানে জয়লাভ করেছিলেন তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র। আর ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যায়। এদিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতেও গ্রেফতার পলাশিপাড়ার বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। পলিটিক্যাল এক্সপার্টরা বলছেন, এই লোকসভা নির্বাচনে জোড় টোক্কর হবে মহুয়া মৈত্র এবং অমৃতা রায়ের মধ্যে। কিন্তু এগিয়ে থাকবে কে? অমৃতা রায় যার সেই অর্থে কোন পলিটিক্যাল কেরিয়ার নেই, তিনি কি আদৌ পারবেন মহুয়ার মত পোড় খাওয়া প্রার্থীর সঙ্গে টক্কর দিতে? ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ঝুলিতে আসে ৪০.৫% ভোট, তৃণমূলের কাছে আসে ৪৫.৩ শতাংশ ভোট আর সিপিএমের কাছে আসে ৮.৯ শতাংশ ভোট। তাহলে এবার কি হবে? মহুয়ার ম্যাজিক দেখবে কৃষ্ণনগর নাকি অমৃতা রায়ের হাত ধরে বিজেপি নিজের উত্থানকে চমকপ্রদ করবে নাকি বিজেপি এবং তৃণমূলের লড়াই-এ সিপিএম এক্সফ্যাক্টর হয়ে উঠবে? কৃষ্ণনগরবাসী ভোট দেবেন কিসের নিরিখে? শুধু প্রার্থী দেখে নাকি রাজ্য সরকারের দেওয়া প্রকল্পগুলো মাথায় রেখে? সেই উত্তর দেবে সময়। তবে বঙ্গ রাজনীতির আলোচনায় থাকা এবারের অন্যতম ক্রুশিয়াল কেন্দ্র যে কৃষ্ণনগর সেটা নতুন করে বলার আর কিছু নেই।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ