Trending
জলের দরে মিলবে পেট্রোল
আমদানি নির্ভরতা কমবে অপরিশোধিত তেলের
অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে ১০ কোটি কর্মসংস্থান হবে
দিন বদলাবে চাষিভাইদের
হচ্ছে হবে করে অনেক হল। এবার সত্যিই হবে তো? দিন বদলানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেকদিন ধরে অনেক কথাই শুনে আসছি। হ্যাঁ! কিন্তু কাজের বেলায় হচ্ছে কোথায়? তাই নতুন করে কোন প্রতিশ্রুতির কথা শুনলে আশায় বুক বাঁধার চাইতে গোটা বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করাটা বেশি প্রয়োজনীয় মনে হয়। পেট্রোল মিলবে ১৫ টাকা প্রতি লিটারে। এমনটাই আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গডকড়ি। রাজস্থানে প্রতাপগড়ের মঞ্চ থেকে মন্ত্রীমশাইয়ের এহেন ঘোষণা, কার্যত শোরগোল ফেলে দিয়েছে গোটা দেশে। সেঞ্চুরি পার করা পেট্রোল কিনা এত সস্তায়? এটা সম্ভব? নাকি ২০২৪-এর নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ভারতের সাধারণ মানুষ আবারও কোন প্রতিশ্রুতিই পেল, যার বাস্তবায়ন আসলে অসম্ভব? সম্ভব কি অসম্ভব সেটাই বিশ্লেষণ করব আজকের প্রতিবেদনে।
স্পষ্টবক্তা হিসেবে মন্ত্রী নীতিন গডকরির বেশ নামডাক আছে। কথায় এক আর কাজে এক- এমন মানুষ তিনি নন। পাস্ট হিসেব অন্তত তাই বলছে। তাই এবারেও তার কথায় ভরসা করছেন অনেকেই। কিন্তু এই অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য তার কি প্ল্যান? সেটার একটা ব্রিফ দেওয়া যাক প্রথমেই।
অগাস্টে টয়োটা নতুন গাড়ি লঞ্চ করতে চলেছে। আর সেই গাড়ি চলবে কৃষকদের তৈরি করা ইথানলে। ইথানল তৈরি হয় আখ থেকে। আর ডিজেল বা পেট্রোলের সঙ্গে নির্দিষ্ট রেশিওতে ইথানল ব্লেন্ড করে গাড়ি চালানো হলে খরচ কমবে। এখন ৯০:১০ অনুপাতে ব্লেন্ড করা হয়। ভবিষ্যতে সেটাই ৬০:৪০ রেশিয়তে নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান রয়েছে। আর তখনই পেট্রোলের দাম ১৫ টাকা প্রতি লিটারে কমিয়ে আনা সম্ভব।
ইথানল পুড়লে অক্সিজেন তৈরি হয়। আর এই অক্সিজেনের দহনে গাড়ি সামনে এগোনোর এনার্জি পায় এবং অবশ্যই পরিবেশ দূষণও কম হয়। সোলার এনার্জির মতো এটাও রিনিউয়েবল এনার্জি সোর্স হওয়ায়, এনার্জি ঘাটতির চিন্তা থাকার কথা নয়। দিন দিন ইথানলের চাহিদা বাড়লে বেশি পরিমাণে আখের চাহিদা থাকবে। বাড়বে আখচাষির পরিমাণ। দিন বদলাবে খেটে খাওয়া চাষিভাইদের। আর এভাবেই অন্নদাতা থেকে ধীরে ধীরে শক্তিদাতা হয়ে উঠবেন তারা।
যে দেশের ৫০% ইকোনোমিক গ্রোথ কৃষিকাজ নির্ভর, সেই দেশের জন্য এই ধরণের ঘোষণা ডেফিনেটলি একটা ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া। কিন্তু প্র্যাক্টিকালি ভেবে দেখতে গেলে, এই আইডিয়া ইমপ্লিমেন্ট করা এই মুহূর্তে বেশ কঠিন। আপনারা নিজেরাই ভেবে বলুন না। আমাদের দেশের কোথাও তেল পাওয়া যায়? হ্যাঁ! আন্দামানে তেলের খোঁজ মিলেছে ঠিকই। কিন্তু সেটাও তো এখন রিসার্চ পর্যায়েই রয়েছে।
রাশিয়া ইরাক এবং সৌদি আরব হচ্ছে ভারতে অপরিশোধিত তেলের ত্রাতা। এই কিছুদিন আগেও রাশিয়া থেকে সস্তায় অপরিশোধিত তেল পাচ্ছিল ভারত। যা রিফাইন করে আবার বিশ্ববাজারে বিক্রি করছিল ভারত। এতই যখন দেশের মানুষকে সস্তায় পেট্রোল দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে সরকার, তাহলে তখন কেন সস্তায় পেট্রোল পেল না দেশবাসী? কেন দিনের পর দিন ১০০ টাকা, ১০২ তকা, ১০৫ টাকায় পেট্রোল কিনতে হল? সরকার সস্তায় তেল পেয়েও যখন পেট্রোলের দাম কমাল না, তখন আগামীতে পেট্রোলের দাম কমাবে- এর কি গ্যারান্টি আছে?
গোটা দেশ জুড়ে ইথানল ব্লেন্ডিং অয়েলের একটা ক্যাম্পেন চলছে এই মুহূর্তে। যেখানে বলা হচ্ছে ২০৩০ নয়। ২০২৫ এর মধ্যেই পেট্রোলে ইথানলের পরিমাণ ১০% থেকে ২০% এ নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সেটা একজিকিউট করতে হলে যে যে প্রতিবন্ধকতা আছে, সেগুলো কি ওভারকাম করার চেষ্টা করেছে সরকার?\
কৃষকদের সঙ্গে কি সুস্থ কোন আলচনায় বসা হয়েছে? কতটা বায়োফুয়েল তৈরি করতে হবে, সেই জন্য কত পরিমাণ আখ চাষ করতে হবে- সে বিষয়ে কি কোন টার্গেট দেওয়া হয়েছে? সরকারের কাছে তারা কীভাবে এই ফসল বিক্রি করবে সেই বিষয়ে কোন নির্দেশিকা কি প্রকাশ করা হয়েছে? মূল্যবৃদ্ধি বাড়ছে। কেন বাড়ছে? কারণ ট্র্যাভেল কস্ট বাড়ছে। কেন ট্র্যাভেল কস্ট বাড়ছে? কারণ জ্বালানির মূল্য বাড়ছে। আর এই সবটার সলিউশন যখন হাতের সামনে রয়েছে- যখন সেটা নিয়ে কেন দ্রুততা দেখাচ্ছে না সরকার? দেখুন মন্ত্রী নীতিন গডকড়ির পারফরম্যান্স নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। কারণ ১০০ ঘণ্টায় যে ১০০ কিমি রাস্তা তৈরি করতে পারে, সে অসাধ্য সাধন করতে পারে। প্রশ্ন উঠছে সিস্টেমের বিরুদ্ধে। যে ১৬ লক্ষ কোটি টাকার তেল ইমপোর্ট করে ভারত, সেই ১৬ লক্ষ টাকা তো নিজের দেশের কৃষকদের ডেভলপমেন্টের জন্যই কাজে লাগাতে অসুবিধেটা কোথায়? আর এত নবেল একটা প্রোজেক্ট- সেটা শুরু করতে এত দেরী কেন করা হচ্ছে? নাকি শুধু নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই মন্ত্রীমশাই এমন একটা ঘোষণা রাখলেন? কি মনে হয় আপনাদের,
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ।