Story
শীত নামলে পরিযায়ী পাখিদের ভিড় দেখা যায় সাঁতরাগাছির ঝিলে। পাখিপ্রেমীদের জন্য এই সময়টা হয়ে ওঠে স্বর্গরাজ্য। কিন্তু আপনি কি জানেন হাওড়ায় যেমন রয়েছে সাঁতরাগাছির ঝিল তেমনি উত্তর ২৪ পরগনাতে রয়েছে মেদিয়া কঙ্কণা বাওড়। যেখানে শুধু পাখি নয়। মাছের নেশাতে দূর দূর থেকে মানুষ ভিড় জমান এখানে। এলাকায় তৈরি হয় এক ছোটখাটো উৎসবের মেজাজ।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার স্বরূপনগর থানার মেদিয়া কঙ্কণা বাওড়। অশ্বক্ষুরাকৃতি এই বাওড়ের একদিকে রয়েছে মেদিয়া, পাড়ুই, ও তেঁতুল গ্রাম। অন্যদিকে রয়েছে গোবরডাঙ্গা থানার রঘুনাথপুর, খাটুরা গ্রাম ও গোবরডাঙ্গা পুরসভা। ২৬৭ একর জমি নিয়ে তৈরি হয়েছে এই জলাশয়। আর এই জলাশয়ের দুই পাড়েই বহু মৎস্যজীবী পরিবারের বাস। যারা এই কঙ্কণা বাওড় থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।
তবে এই বাওড় থেকে মাছ ধরার অধিকার শুধুমাত্র এলাকার মৎস্যজীবীদের থাকলেও বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে টিকিট কেটে সাধারণ মানুষরা নেশার টানে মাছ ধরতে পারেন। একটা টিকিটের মূল্য ১২০০ টাকা। সঙ্গে রয়েছে আনুষঙ্গিক খরচ। কেউ যে টাকা খরচা করেন তার চেয়ে বেশি মূল্যের মাছ সংগ্রহ করেন। কেউ আবার দিনের শেষে সামান্য মাছ পেয়েই ধরেন বাড়িড় পথ। আর শুধু সাধারণ মানুষরাই নন। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মৎস্য শিকারিরা এই বাওড়ে আসেন মাছ ধরার জন্য।
বাওড়ে এই মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে যে ছোটখাটো উৎসবের মেজাজ তৈরি হয় সেকথা জানালেন এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারাই। যাদের কাছে বহুকাল ধরে এই ছবিটা বেশ পরিচিত।
তবে মৎস্যশিকারে বাধা না থাকলেও পাখি শিকারের উপর রয়েছে কড়া নিষেধাজ্ঞা। বনদফতরের পক্ষ থেকেও পাখি শিকার না করার জন্য রাখা হয়েছে সাইনবোর্ড। নভেম্বরের শুরু থেকেই পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। ক্রমেই ভিড় বাড়তে থাকে পাখিদের। আগে পাখি শিকারিদের উৎপাত থাকলেও এখন স্থানীয় বাসিন্দা এবং সরকারের নজরদারির জন্য সেই উৎপাত অনেকটাই কমেছে।
একদিকে পাখি, অন্যদিকে মাছ। শীতের মরশুমে উত্তর ২৪ পরগনার এই কঙ্কণা বাওড় যেন মৎস্যশিকারি এবং পাখিপ্রেমীদের জন্য হয়ে উঠেছে স্বর্গরাজ্য। কেউ আসেন নেশার টানে। কেউ বা অবসর সময় কাটানোর জন্য। টিকিটের দাম একটু চড়া হলেও বাওড়ের প্রকৃতির কাছে সবই ফিকে। আর সেই কারণেই শীত নামলে মানুষের ঢলও নামে এখানে। কয়েকদিনের জন্য বেশ চাঙ্গা হয় কঙ্কণা বাওড় কেন্দ্রিক অর্থনীতি।
দেবস্মিতা মণ্ডল
উত্তর ২৪ পরগনা