উত্তরাখণ্ডের ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স পর্যটনের মানচিত্রে খুবই জনপ্রিয় একটি জায়গা। তবে চাইলেই তো আর উত্তরাখণ্ডের এই ফুলের উপত্যকা ঘুরে আসা সম্ভব হয় না। তাই যারা ফুলপ্রেমী, তাদেরকেও বাংলা হতাশ করেনি। কারণ ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স দেখার যা আনন্দ, সেই একই আনন্দ পর্যটকরা পেয়ে যেতে পারেন, যদি তাঁদের গন্তব্য হয় পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া।

পাঁশকুড়ার ঘোষপুর পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম দোকান্ডা। যাকে অনেকে ক্ষীরাই বলে থাকেন। এই গ্রামের পূর্ব দিকে বইছে কংসাবতী। আর এই কংসাবতীর চরেই প্রায় দু’শো বিঘা জমিতে চাষ হয় ফুলের। আজ বলে নয়। বিগত কয়েক পুরুষ ধরে জেলার স্থানীয় ফুলচাষিরা এই ফুল চাষ করে আসছেন। যে কারণে শীতের মরশুমে এই গোটা এলাকাই ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। গাঁদা, অ্যাস্টার, চন্দ্রমল্লিকা, চেরি সহ নানা ধরনের বাহারি ফুল ফোটে। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। এমনকি দোকান্ডা আর পশ্চিম কোল্লার মধ্য দিয়ে চলে গিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথ। যে রেলপথের উত্তর দিকের চরে বিঘার পর বিঘা জমি জুড়ে রয়েছে চন্দ্রমল্লিকার বাগান। আর দোকান্ডার পশ্চিমে কিছুটা দূরে রয়েছে ক্ষীরাই স্টেশন। ফি বছর হাজার হাজার পর্যটক এই সময়ে ফুলের টানে ভিড় জমান এখানে। হঠাৎ করেই কয়েক বছর হল ক্ষীরাই যেন পর্যটকদের কাছে ঘুরে আসার নতুন ঠিকানা হয়ে উঠেছে।

এদিকে হঠাৎ করেই পর্যটকদের ফেভারিটের তালিকায় ক্ষীরাই উঠে আসায় শীতের মরসুমে সবাই একবার না একবার এই গ্রামে ঢুঁ মেরে আসেন। কিন্তু রয়েছে সামান্য কিছু সমস্যা। পাঁশকুড়ার এই ছোট্ট গ্রামটিতে পর্যটকরা আসায় খুশি যেমন পাঁশকুড়াবাসী তেমনি কিছুটা হলেও পর্যটকদের সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। কারণ এলাকায় এখনো পর্যন্ত স্থায়ী কোন বাথরুম বা পানীয় জলের কোনরকম ব্যবস্থা করা হয়নি। এই এলাকায় আগেই দাবি উঠেছিল স্থায়ী ভাবে পানীয়জল ও বাথরুম তৈরীর। কিন্তু করোনা হাজির হওয়ায় সেই কাজ থমকে যায়। তবে পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে এখানে সমস্ত রকমের সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন পাঁশকুড়ার কাউন্সিলর সেক সমিরুদ্দিন।

ফুলের শহর হিসেবে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া শহরের নাম বহুযুগ আগে থেকেই সুপরিচিত।রাজ্যে ফুল উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটা বেশিরভাগ অংশই পাঁশকুড়ার ফুল চাহিদা মেটায়। তবে পাঁশকুড়ায় যুগের পর যুগ ধরে ফুলের চাষ হয়ে থাকলেও সম্প্রতি কয়েকবছর ফেসবুক, ইউটিউবের সৌজন্যে এই দোকান্ডা গ্রাম এখন সারা বিশ্ববাসীর কাছে সুপরিচিত। এই বছরেও ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের পা পড়ছে এখানে। তবে এই মুহুর্তে যারা ফুলের উপত্যকায় আশা নিয়ে আসছেন, এই মুহুর্তে তাদের হতাশ হয়েই ফিরতে হচ্ছে। এবছর বৃষ্টি,বন্যা হওয়ায় চাষে অনেকটাই ব্যঘাত ঘটেছে। তাই কিছুটা দেরীতেই ফুলের গাছ লাগাতে বাধ্য হয়েছেন কৃষকেরা। যদিও মনে করা হচ্ছে পর্যটকদের খুব বেশি হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ দশ, পনেরো দিনের মধ্যেই বাংলার ফুলের উপত্যকা সেজে উঠবে রংবাহারি ফুলে।

প্রসূন ব্যানার্জী
পূর্ব মেদিনীপুর