বাংলার ঘরে উপস্থিত ১৪২৯। নববর্ষ মানে উৎসবের মেজাজটাই ধরা পড়ে আমবাঙালির ঘরে ঘরে। তবে আজ বিজনেস প্রাইম নিউজের উদ্দ্যেশ্য নববর্ষের মেজাজকে ক্যামেরাবন্দি করা নয়। বরং বাংলার ব্যবসা-বাণিজ্যের ছবিটাকে তুলে ধরাই হল প্রধান লক্ষ্য। আর যে কারণে বিজনেস প্রাইম নিউজের প্রতিনিধির ক্যামেরায় ধরা পড়ল ভরা ব্যবসার একটুকরো ছবি। যেখানে ক্রেতা থেকে বিক্রেতা, সাধারণ দোকান থেকে শপিং মল সর্বত্রই দেখা গেল উচ্ছ্বাস। বিকিকিনির উচ্ছ্বাস।

একটা সময় ছিল যখন চৈত্র সেল উপলক্ষ্যে মানুষের ঢল নামত কলকাতার বাজারে। দূর দূর থেকে ট্রেনে করে তাঁরা পৌঁছে যেতেন কলকাতার বিভিন্ন নামিদামি মার্কেটে। পয়লা বৈশাখ হচ্ছে বাঙালির মুখ্য উদ্দ্যেশ্য। আর চৈত্র সেল সেই উদ্দ্যেশ্য পূরণে বছর বছর অনুঘটকের কাজ করে আসছে। তাই বৈশাখকে আমন্ত্রণ জানানোর আগে বাংলার ব্যবসা-বাণিজ্যের ছবিটা কিন্তু সর্বত্রই বেশ উজ্জ্বল থাকে। কিন্তু এই বছরে আমাদের প্রতিনিধি পৌঁছে গিয়েছিলেন, কলকাতা নয়। বরং কাঁচড়াপাড়ায়। এমনিতেই কাঁচড়াপাড়ার মার্কেটকে কলকাতার মার্কেটের সঙ্গে নিশ্চিন্তে তুলনা করা যায়। কারণ আগে কাঁচড়াপাড়ার বড় মার্কেট বলতে আগে ছিল হকার্স কর্নার এবং আনন্দ বাজার। কিন্তু এখন স্টাইল বাজার, প্যান্টালুনস, এম বাজার, এক্সপ্রেস বাজার, স্ট্রেনস, বিশাল, অ্যাডিডাস, ম্যাক্স, গ্রেট ইস্টার্ন, রিলায়েন্স ডিজিটাল, প্রিয় গোপাল বিষয়ী, আদি মোহিনী মোহন কাঞ্জিলাল, শ্রীনিকেতন– কী নেই সেখানে। বৈশাখ আসার আগে এই সব দোকানে যে ভিড় চোখে পড়ল তাতে কাঁচড়াপাড়ার মার্কেটকে কলকাতার মার্কেটের দারুণ এক রেপ্লিকা বললেও মনে হয় খুব একটা বাড়াবাড়ি করা হবে না। ফুটপাথ ঘেঁষা দোকান হোক বা এসি শপিং মল। ক্রেতার ঢল দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়।

বিগত দুটো বছরে করোনার ভীতি এবং লকডাউনের কঠোর আঁটসাঁট বিধি নিয়মের গেরোয় পড়ে হাসি মিলিয়ে গিয়েছিল ক্রেতা থেকে বিক্রেতা সকলের। পেট্রোপণ্যের ঘনঘন মূল্যবৃদ্ধি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামে ছেঁকা লাগে বাঙালির পকেটে। তাই গেল দু’বছর ক্রেতাদের খরচ করার ভয় বিক্রেতাদের পয়লা বৈশাখের আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছিল ঠিকই। এই বছর একেবারে পাল্টে গেল গোটা দৃশ্যটাই। জনজোয়ারে ভাসল কাঁচড়াপাড়া। একইসঙ্গে ব্যপক উচ্ছ্বাস ধরা পড়ল ফুটপাথের বিক্রেতা থেকে একেবারে শপিং মলের বিক্রেতাদের গলাতেও। যেভাবে মূল্যবৃদ্ধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ক্রেতারা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী জিনিস কিনতে কাঁচড়াপাড়ার মার্কেটে ভিড় করলেন তা এককথায় লাজবাব।

সাধারণ বিক্রেতারা যারা দিন আনি দিন খাই করেই বছরের ৩৬৫টা দিন বিকিকিনির দিকে তাকিয়ে থাকেন, তাঁরা তো বটেই। এমনকি শপিং মলেও ক্রেতাদের ঢল হাসি ফুটিয়েছে যথেষ্ট। ব্যবসার ছবিটা যে সেখানেও জ্বলজ্বল করছে।

সুদূর কৃষ্ণনগর, এবং দূরবর্তী ব্যারাকপুর থেকে ক্রেতারা আসেন কাঁচরাপাড়ায় মার্কেট করতে। স্টেশনের কাছেই একসঙ্গে সব ধরনের সামগ্রী মিলে যাওয়ায় এখন আর ক্রেতাদের কলকাতায় বেশি ছুটতে হয় না। তাই ভিড় প্রায় সারাবছরই কম বেশি থাকে। আর চৈত্র তো সবাইকেই ছাপিয়ে যায়। ক্রেতাদের মুখেও লেগে থাকে হাসি।

একদিকে মুদি মাছ-মাংস ফল সবজি পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সংকটাপন্ন সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে নববর্ষকে স্বাগত জানাতে কাঁচরাপাড়ার পোশাক বাজারে মানুষের ঢল। পয়লা বৈশাখ মানেই বাঙালির ঘরে ফেরে চেনা উৎসবের মেজাজ। তাই ক্রেতা হোক বা বিক্রেতা- সব বাঙালির মুখে সারা বছর লেগে থাকুক হাসি। এটাই তো চায় বিজনেস প্রাইম নিউজ। বাংলার পালে লাগুক ব্যবসার হাওয়া। ছোট, বড় নির্বিশেষে সকল বাঙালি ব্যবসায়ীর শ্রীবৃদ্ধি হোক। তবেই তো সার্বিকভাবে গোটা রাজ্যের আর্থিক উন্নতি হবে লাগামছাড়া। ব্যবসার চাকা আরও সক্রিয় হোক। জীবন হোক অর্থবহ।

সুব্রত সরকার
কাঁচড়াপাড়া