Story
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে ধুঁকছে জুট মিল। প্লাস্টিক শিল্পের রমরমা বাজারের জন্য পাটশিল্পের নাভিশ্বাস উঠছে ভালোরকম। আর ঠিক এমন একটা সময়েই ভরসা যোগাচ্ছে পাটের বিনুনি শিল্প। যে শিল্প কয়েক হাজার মানুষের বেকারত্ব ঘুচিয়েছে। দেখিয়েছে আয়ের দিশা।
নদীয়ার হরিণঘাটার পাঁচ হাজার শ্রমজীবী মানুষ বিনুনির সৌজন্যে স্বল্প হলেও আয়ের দিশা পেয়েছেন। এগিয়ে এসেছেন আবদুল্লা মন্ডলের মতন উদ্যোক্তা। যিনি একটা সময় প্রথাগত চাষ করতেন। কিন্তু লাভের মুখ তেমন একটা দেখতে পেতেন না। সেই ভাবনা থেকেই হাতে তুলে নেন সোনার তন্তু। লাল পাট বাজার থেকে কিনে গ্রামীণ মূলত মহিলাদের দিয়ে বিনুনি বানিয়ে তা বড় ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন।
এমনিতে খোলাবাজারে পাটের দাম এম এস পি থেকে অনেকটা বেড়েছে। বিনুনির কাজে মূলত লাল পাট প্রয়োজন হয়। তার চাহিদাও বেড়েছে। আর পাটের সার্বিক দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিনুনি শিল্পের কিছুটা ভূমিকা তো আছেই। এমনটাই জানালেন জেসিআইয়ের নগরউখড়া শাখার ম্যানেজার সুব্রত বসু রায় চৌধুরী।
এই বিনুনি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সালেয়া বিবি, আশালতা তরফদার বা আলী হোসেন মন্ডলরা এখন অনেকটাই নিশ্চিন্ত। যাদের অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী, আজ তাঁদের হাতেই উঠে এসেছে সোনার পাট। বিনুনি বুনে আজ তাঁরা কিছুটা হলেও ভালো আছেন। আগে যেখানে সারাবছর কাজ জুটত না, আজ সারা বছর কাজ পাওয়ায় অভাব আর তাড়া করে বেরাচ্ছে না।
পরিবেশবান্ধব পাট চাষের সুদিন নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী কৃষিবিভাগের হরিণঘাটা ব্লকের এডিএ ডক্টর প্রসূন ভৌমিক। তিনিও মনে করেন একটা সময় যে পাট চাষ থেকে ক্রমশই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন কৃষকরা। আজ বিনুনি শিল্পের দরুন আবারো পাট শিল্পে আসতে পারে জোয়ার। কারণ সার্বিকভাবেই চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ব্যবসায়ী আবদুল্লা মণ্ডল পাট কেনেন গড়ে ৬৫ টাকা কেজি দরে। প্রতিকেজি বিনুনি বুনতে পারিশ্রমিক নেন গড়ে ২৫ টাকা। বিক্রি করেন ৯০ টাকা কেজিতে। সমস্ত খরচ খরচা বাদ দিয়ে কেজিপ্রতি লাভের মুখ দেখছেন তিনি। আর তাঁকে কেন্দ্র করেই অভাব মিটছে অনেকের। তাই প্লাস্টিকের দৌরাত্ম্য থাকলেও যেভাবে পাটের দাপট বাড়ছে তাতে অনেকেই আশাবাদি পাট খুব তাড়াতাড়ি মানুষের মুখে ভাত তুলে দেবে।
সুব্রত সরকার
নদীয়া