শীতের হাওয়া বইতে শুরু করলেই আমবাঙালির খাদ্য তালিকায় উঠে আসে জনপ্রিয় মোয়া। জয়নগরের। কলকাতা থেকে ক্যানিং। রাজ্যের সর্বত্র তো বটেই। এমনকি দেশীয় স্তর ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক স্তরেও জয়নগরের মোয়া সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়িয়েছে তার পপুলারিটি। একদিকে যেখনে মোয়ার এই হিমালয়সমান জনপ্রিয়তা, শুধু মোয়ার উপর দাঁড়িয়ে যেখানে ব্যবসার অঙ্ক পৌঁছে যায় কয়েক কোটি টাকায়। সেখানে মোয়া ব্যবসায়ীদের গলায় শোনা যাচ্ছে অসন্তোষের সুর। কিন্তু কেন?

২০০৭ সাল থেকে জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় দরবার করেছিলেন মোয়া ব্যবসায়ীরা। মিলেছে সেই স্বীকৃতিও। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নতি হয়নি পরিকাঠামোর। ফলে কার্যত ধুঁকছে মোয়া শিল্প।

মোয়ার মান বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন আধুনিক মানের প্যাকেজিং মেশিন। একইসঙ্গে প্রয়োজন ব্যবসায়ীদের আধুনিক প্রশিক্ষণ। আর এই দুয়ের সমস্যার কারণে এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মোয়া পাঠানো বেশ খরচসাপেক্ষ হয়ে উঠছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হত না। যদি মোয়া ব্যবসাকে সরকারি উদ্যোগে আধুনিকীকরণের কাজ ভালোভাবে করা সম্ভব হত। একটা সময় এই জয়নগরে মোয়া হাব তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। নেওয়া হয়েছিল আধুনিক প্যাকেজিং মেশিন বসানোর উদ্যোগ। কিন্তু সবই আজ বিশ বাঁও জলে। ফলে মোয়া ব্যবসায়ীদের সমস্যা আটকে রইল সেই তিমিরেই।

মোয়া তৈরির অন্যতম প্রধান উপকরন কনকচূড়া ধানের খই। মূলত শীতের সময় এই ধানের ফলন হয় সবচেয়ে বেশি। বিষফোঁড়ার মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ক্রমশই কমেছে ধানের ফলন। ফলে ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে উঠছে এই ধান চাষে। অনীহা দেখা দিচ্ছে কৃষকদের মধ্যেও। আর একদিকে ধান তো অন্যদিকে খেজুর রস। নজিরবিহীনভাবে কমেছে খেজুর রস সংগ্রহকারী শিউলির সংখ্যা। গাছ কমার পাশাপাশি শিউলির অভাবের জন্যই ভাটা নামছে জোগানে।

করোনার আবহ রয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে ঠাণ্ডার অভাব। শীতের কামড় জোরালো না হলে ভালো হবে না মোয়া। একদিকে জোগান কম। অন্যদিকে ব্যবসাতেও ভাটা। সব মিলিয়ে মোয়া বিক্রেতারা ব্যবসা আগেরমত জোরদার নয়।

জয়নগরের আইডেন্টিটি মোয়া। এমনিতে একটি মোয়া তার স্বাদে এবং গুণে মান ধরে রাখে চার থেকে পাঁচ দিন। এর বেশি সময় লাগলে নষ্ট হয়ে যায় মোয়ার মান। তাই মোয়া ব্যবসায়ীদের এখনই আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজন যেমন রয়েছে। তেমনি প্রয়োজন রয়েছে পরিকাঠামোর সার্বিক উন্নতি। আর তাহলেই সবদিক থেকে মোয়া ব্যবসার পালে আবারো লাগবে হাওয়া। ব্যবসায়ীরা আবারো ফিরবেন স্বমহিমায়। রাজ্যের সমস্ত বাজারে ছড়িয়ে পড়বে বাংলার খুব কাছের এই মিষ্টি। জয়নগরের মোয়া। এখন সরকার কিভাবে এই মোয়া ব্যবসার চাকা আরও দ্রুত ঘোরাতে পারেন, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন মোয়া ব্যবসায়ীরা।

দীপান্বিতা দাস
দক্ষিণ ২৪ পরগনা