Market
Introduction:
কেঁপে উঠল জাপান। আতঙ্ক তৈরি হল সাধারণ মানুষের মধ্যে। একইসঙ্গে আতঙ্কের শিকার ব্রিটেনবাসী। না, না ভুল ভাববেন না। এই আতঙ্কের কারণ ভূমিকম্প নয়। বরং বিশ্বজুড়ে চলা মূল্যস্ফীতি। তার জেরেই কেঁপেছে দুই দেশের অর্থনীতি। বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। আজকের প্রতিবেদনে তুলে ধরব মূল্যস্ফীতির কারণে জাপান বা ব্রিটেনের কি হাল, সেটাই। একইসঙ্গে বলব, অর্থনীতির সংকট আজ এই দুটি দেশের কতটা গভীরে যাচ্ছে।
Economic Crisis in UK:
সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার বালিতে দু’দিন ব্যাপী চলল জি-২০ শীর্ষ বৈঠক। পরের বছর এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ভারতে। সেটা অন্য বিষয়। কিন্তু এবারের জি-২০ বৈঠকে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো একটি দুর্দান্ত বার্তা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, অবিলম্বে এই যুদ্ধ বন্ধ করা না-গেলে গোটা বিশ্ব অগ্রগতির পথে বাধাপ্রাপ্ত হবে। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ যে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির জন্য দায়ি সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু তারও আগে অতিমারির এক দীর্ঘমেয়াদি ছাপ থেকেই গিয়েছে। আর যে কারণে এই মূল্যস্ফীতি যে ইংল্যান্ডের মত দেশের আভ্যন্তরীণ সোশিও-ইকোনমিক স্ট্রাকচারকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দেবে, সেটা আর নতুন কি। আর এই কারণেই, ব্রিটেনবাসীর অবস্থা বেশ খারাপ। আয়ের থেকে ব্যয়ের বহর বাড়ছে ঋষির দেশে। একটি মার্কিনী প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টে উঠে এসেছে ভয়াবহ এক তথ্য। যেখানে বলা হয়েছে, ব্রিটেনে পরিবারপিছু আয় কমছে নজিরবিহীনভাবে। সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, যুক্তরাজ্যে আজ পরিবার পিছু আয় কমছে বছরে ৭ হাজার ৪০০ ডলার মতন। ব্রিটেনে খাবারের মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে, প্রায় ১১ শতাংশ মতন। ফলে, সেই দেশে সমস্ত খাবারের দাম একধাক্কায় অনেকটাই বেড়েছে। দ্য গার্ডিয়ানের একটি রিপোর্ট থেকে সেটা আরও স্পষ্ট। ২০২০ সাল থেকেই জাপানে কফি এবং স্ন্যাকসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ২৬% মতন। ডিম, কফি, চা, চাল, দুধের মত একাধিক খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি আজ কাবু করে দিয়েছে ব্রিটেনকে। এমনকি সেই দেশে শিশুখাদ্যের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকটাই।
Economic Crisis in Japan:
পশ্চিমপ্রান্তে যখন মূল্যস্ফীতির এই অবস্থা, তখন থরহরি কম্পন জাপানেও। জিডিপির সংকোচন জাপানের আর্থিক পরিকাঠামোর ভিত অনেকটাই কাঁপিয়ে দিয়েছে। যেটা জাপানের জন্য সত্যিই কিছুটা হলেও ছিল অপ্রত্যাশিত। ফলে জাপানের অর্থনীতিতে পড়েছে এক নেতিবাচক প্রভাব। জানা যাচ্ছে, চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে জাপানের জিডিপির সংকোচন হয়েছে প্রায় ১.২ শতাংশ মতন। মূল্যস্ফীতির প্রভাব এতটাই গভীর হয়েছে যে জাপানের মুদ্রা ইউয়ানের ভ্যালু ডলারের নিরিখে পড়েছে নিচের দিকে। এর ফলে বেড়েছে আমদানি ব্যয়। আর সেটাই সরাসরি ছাপ ফেলেছে জাপানবাসীর আয়ে। মানে সংসার চালাতে গিয়ে কার্যত হিমশিম খাচ্ছেন জাপানের সাধারণ মানুষ। এর জন্য অবশ্য জাপানের বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আমেরিকা ধারাবাহিকভাবে সুদের হার বাড়িয়ে গিয়েছে। ফলে, বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণের জায়গা হয়ে উঠেছে ডলার। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমেছে ইয়েন থেকে। কারণ জাপানে সুদের হার শূন্যের প্রায় নিচেই ছিল। কিন্তু জাপানের অর্থনীতিবিদদের একাংশ আবার সম্পূর্ণ অন্য একটি বিষয় তুলে ধরছেন। তাঁদের বক্তব্য, ইয়েন যদি ডলারের থেকে একটু দুর্বল হয়েও পড়ে, তবে সেটাও জাপানের আর্থিক দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও কাটাতে পারবে। কারণ, বিদেশি বিনিয়োগকারিদের মধ্যে তখন জাপানে বিনিয়োগ করার ব্যপারে আগ্রহ তৈরি হতে পারে। এখানেই বলে রাখা দরকার, ডলারের নিরিখে জাপানি ইয়েনের যে পতন সেটা জাপানের গত ৩২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ফলে, তেল থেকে খাদ্যপণ্য সকল জিনিসের দাম আজ জাপানে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও জাপান সরকার নিজেদের অর্থনীতিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে মরিয়া। তার জন্য পর্যটনের দিকে আলাদা করে গুরুত্ব দিচ্ছে জাপান সরকার। একইসঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে ভারসাম্য আনার কাজটাও যে কিভাবে করা যেতে পারে সেটা নিয়ে কাটাছেঁড়া করছে জাপান গভর্নমেন্ট। এখন কত তাড়াতাড়ি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান এবং ব্রিটেন নিজেদের অর্থনীতিকে মজবুত করতে পারে, সেটাই দেখার।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ