Trending
বাংলাদেশের বুকেই জাপানের সংস্থা তৈরি করবে একাধিক গাড়ি। টয়োটা, সুজুকি বা মিৎসুবিশি- একের পর এক জাপানি সংস্থার হাত ধরে বদলে যেতে চলেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। হতে চলেছে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ। দেশের অর্থভাগ্যে জোয়ার তো আসবেই। একইসঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। বাংলাদেশ সরকার জাপানের এই বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছে। জাপানের কোম্পানিগুলো তাদের ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটকে ডালপালা ছড়িয়ে দেবার জন্য বেছে নিয়েছে বাংলাদেশকেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এতো দেশ থাকতে কেন বাংলাদেশকেই জাপান বেছে নিল? কেন কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে জাপান? কোন সমীকরণে জাপানের হাত ধরে চিরতরে বদলাতে চলেছে বাংলাদেশের গাড়ি বাজার? আসুন এই সব নিয়েই শুরু করি আজকের প্রতিবেদন।
৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান বাংলাদেশকে আর্থিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসরে নামেন। গ্রামবাংলা থেকে শহর- উন্নয়নের জোয়ারে ভাসাতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে। কিন্তু মুজিবর রহমানের মৃত্যু হলে উন্নয়নের স্বপ্ন অনেকটাই ধাক্কা খায়। বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনীতির দিক থেকে বিশ্বের ৩৫ নম্বর বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। কিন্তু বর্তমান সরকার সেই সমীকরণ বদলে ফেলতে চায়। যখন বাংলাদেশের ঠিক লাগোয়া দেশ আমাদের ভারত গোটা বিশ্বে সম্ভ্রমের জায়গা তৈরি করে নিয়েছে, তখন বাংলাদেশই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? গ্লোবাল মার্কেটে নিজেদের ছাপ রাখতে তাই বাংলাদেশ সরকার একের পর এক এমন প্রকল্প গ্রহণ করছে, যার মাধ্যমে বিদেশিদের বিনিয়োগের জায়গাটা ক্রমশই চওড়া হচ্ছে। আর যত বিনিয়োগ, তত কাজের চাহিদা। আর যত কাজের চাহিদা, ততই কর্মসংস্থান, দেশের উন্নয়ন। তেমনই একটি প্রোজেক্ট হাতে তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। যার মাধ্যমে গাড়ি বাজারে একটা বড় মঞ্চ পাবে দেশটি, নিজেদের প্রমাণ করার।
নারায়ণগঞ্জের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একেবারে পাশেই ১ হাজার একর জমিতে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বা স্পেশ্যাল ইকোনমিক জোন। এই জোনেই জাপান কাজ করবে মসৃণভাবে। তবে এই চুক্তি আজকের নয়। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথোরিটি বা বেজা ২০১৯ সালে জাপানি সংস্থা সুমিতোমো কর্পোরেশনের সঙ্গে। এখন এই গোটা এলাকা জুড়ে তৈরি করা হচ্ছে উন্নয়নের একেকটি ধাপ। শুধু রাস্তাঘাট নয়। গ্যাস, বিদ্যুৎ, জল সহ যাবতীয় কাজ চলছে এখানে জোরকদমে। বাংলাদেশ সরকার যে গতিতে কাজ করছে, তাতে করে খুব তাড়াতাড়ি এই উন্নয়নের কাজ করে ফেলাটা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যেই জমি স্পেশ্যাল ইকোনমিক জোনের জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৮০ একর জমি তুলে ধরতে পেরেছে। এবং ভবিষ্যতে বাকি কাজটা যাতে খুব তাড়াতাড়ি হয় সেদিকেও রয়েছে খেয়াল। জানা গিয়েছে, জাপানের হাই প্রোফাইল প্রথম সারির ৪০-টি কোম্পানি এখানে বিনিয়োগ করার ব্যপারে যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছে। শুধুমাত্র স্পেশ্যাল ইকোনমিক জোনে ঢালা হবে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বেজা সূত্রে খবর, এই গোটা এলাকায় ১০ একর করে জমি নির্ধারণ করা হয়। যেখানে জাপানের হুন্ডা কর্পোরেশন এবং মিকা কেমিক্যালসের মধ্যে একটা চুক্তি হয়। বাংলাদেশ সরকার মনে করছে, পরিকল্পনামাফিক কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে, ২০২৩-এর নভেম্বর থেকে উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ চালু হয়ে যাবে। আর কর্মযজ্ঞ চালু হলে যে লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে, সেটা তো আর নতুন করে বলার নেই।
এই জাপানের ইকোনমিক জোনে বেজার শেয়ার রয়েছে ২৪%, জাইকার রয়েছে ১৫% এবং সুমিতোমো কর্পোরেশনের রয়েছে ৬১% শেয়ার। এই স্পেশ্যাল ইকোনমিক জোন এমনভাবেই তৈরি করা হচ্ছে যে, দেশি-বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানি মনে করলেই এখানে বিনিয়োগ করতে পারবেন। আর অবাক লাগবে শুনতে যে, ইতিমধ্যেই জাপানের প্রায় ৩০টি সংস্থা এই এলাকায় বিনিয়োগ করতে চলেছে। এখানে তৈরি করা হবে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার। সঙ্গে তৈরি করা হবে স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। জাপান এবং বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের আদানপ্রদানের ব্যপারে কথা বলতে ২০১৪ সালে জাপান সফর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর বাংলাদেশ সফর করেছিলেন জাপানের সাবেক প্রেসিডেন্ট শিনজো আবে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি বা জাইকা ২০১৬ সালে ইকোনমিক জোন তৈরির একটা তালিকা হাতে নেয়। আর এই গোটা প্রোজেক্টটি ডেভেলপ করছে জাপানের সুমিতোমো কর্পোরেশন। জানা গিয়েছে, এই গোটা প্রকল্পটি হাতে কলমে শিলমোহর পড়তে খরচ হবে আড়াই হাজার কোটি টাকার ওপরে। এর মধ্যে বাংলাদেশের কোষাগার থেকে খরচ হবে ৪৫৪ কোটি টাকার একটু বেশি। আর বাকি টাকার পুরোটাই বেরোবে জাইকা।
জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। জাপান এবং বাংলাদেশের এই যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশেরই আর্থিক উন্নয়ন হবে অনেকটাই। গোটা প্রোজেক্টটি কমপ্লিট হলে বাংলাদেশে কার ম্যানুফ্যাকচারিং এক বড়সড় জায়গায় পৌঁছে যাবে। একইসঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। বাড়বে কাজের বাজার। আর এই সব নিয়েই আপাতত বিশ্ব মার্কেটে নিজেদের ক্যারিশ্মা দেখানোর স্বপ্ন দেখছে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। এখন শেষে একটা প্রশ্ন। জাপানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং অনেকদিনের। তাহলে জাপানের গাড়ি সংস্থাগুলি ভারতের স্পেশ্যাল ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাল না?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ