Daily
টাটা গ্রুপের কাছে তিনি ছিলেন একজন ‘ভিশনারি লিডার’। পেয়েছেন নাইটহুড সম্মান, পেয়েছেন পদ্মভূষণ। বলা হয়, তাঁর সময়কালেই টাটা স্টিলের ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। আর যে কারণে তিনি পরিচিত দ্য স্টিল ম্যান অফ ইন্ডিয়া নামে। তিনি জামশেদ জিজি ইরানি। ভারতীয় শিল্পপতিদের মধ্যে অন্যতম নক্ষত্র। যার মৃত্যুতে শেষ হল একটি অধ্যায়ের। কিন্তু কে ছিলেন জামশেদ জিজি ইরানি? কিভাবেই বা জড়িয়ে পড়লেন টাটা গ্রুপের সঙ্গে? আসুন, সেই ছোট্ট ইতিহাসটাই আজ শেয়ার করব আপনাদের সঙ্গে।
১৯৩৬ সালের ২ জুন, ইরানি পরিবারে জন্মগ্রহন করেন জামশেদ জিজি ইরানি। নাগপুর সাইন্স কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় গ্র্যাজুয়েশন পাশ করার পর মাস্টার্স-এর জন্য তিনি ভর্তি হন নাগপুর ইউনিভার্সিটিতে। এরপর সেখান থেকে ১৯৫৮ সালে তিনি জিওলজি নিয়ে মাস্টার্স কমপ্লিট করেন। তারপর তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য জে.এন.টাটা স্কলার হিসেবে পৌঁছন ইংল্যান্ডের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন মেটালার্জিতে। এরপর গবেষণা শেষ করেন ১৯৬৩ সালে। এরপর ব্রিটিশ আয়রন অ্যান্ড স্টিল রিসার্চ অ্যাসোশিয়েশনে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। যোগ দেন সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে। এরপর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ফিরে আসেন দেশে। তারপর যোগদান করেন টাটা স্টিলে। প্রথমে সহকারি ডিরেক্টর, তারপর জেনারেল ম্যানেজার এবং অবশেষে কোম্পানির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার সামলান। পরে অবশ্য তিনি শুধু টাটা স্টিলে নয়। টাটা গোষ্ঠীর বিভিন্ন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তিনি সামলেছেন।
টাটা স্টিলে যখন তিনি যোগ দিয়েছিলেন, তারপর তাঁর লক্ষ্য ছিল এমন ভাবে স্টিল ইন্ডাস্ট্রিকে বৃহত্তর করা যা আগে কোনদিন হয়নি। ৯০-এর দশকে শুরু হল অর্থনীতিতে উদারীকরণ। সুযোগ হাতছাড়া করলেন না তিনি। ইরানির লক্ষ্য ছিল, স্টিল এমনই হতে হবে যা খরচসাপেক্ষ যেমন হবে না, তেমনই কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজে দেওয়া হবে সমান জোর। অর্থাৎ তিনি কম দামে বিশ্ব মানের স্টিল ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে নজর দিয়েছিলেন। এর আগে বেশ কয়েকবার টাটা স্টিল বা তৎকালীন টিসকো-কে ন্যাশনালাইজ করার চেষ্টা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী থেকে শুরু করে জর্জ ফারনান্ডেজ। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি। বরং ১৯৯০ সালে টাটা স্টিল উদারীকরণের পর নিজেদের ব্যবসা যেভাবে ছড়াতে পেরেছিল গ্লোবালি, সেটা টাটা গ্রুপের জন্য হয়ে উঠেছিল সবচেয়ে ভরসাযোগ্য ক্ষেত্র। ড. ইরানির লক্ষ্য ছিল একেবারে কম দামে স্টিল প্রোডিউস করে সেটা আন্তর্জাতিক বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া। হলও তাই। সাফল্যের সঙ্গে সেই কাজটা করতে পারল টাটা স্টিল। আজ টাটা স্টিল বছরে ৩৪ মিলিয়ন টন স্টিল উৎপাদন করে বিশ্বের অন্যতম সর্ববৃহৎ স্টিল প্রোডিউসার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। চলতি বছরে টাটা স্টিলের রেভিনিউ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩১ বিলিয়ন ডলারে। আর এই পুরোটাই সম্ভব হয়েছে ড. ইরানির দক্ষ পরিচালনায়। তাঁর মৃত্যু টাটা গ্রুপের জন্য তো বটেই, গোটা দেশের শিল্পমহলের জন্য নিয়ে এলো দুঃসংবাদ। একইসঙ্গে ইরানি রয়ে গেলেন, ভারতীয় শিল্পজগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবেই। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ দেশের শিল্পপতিরা।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ