Trending
পর্যটনপ্রেমীদের কাছে জম্মু-কাশ্মীর স্বর্গোদ্যানের থেকে কম কিছু নয়। প্রতি বছর এখানে দেশব্যাপী বহু মানুষের পা পড়ে। বিদেশ থেকেও অনেকে আসেন জম্মু-কাশ্মীরের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। তবে একটা সময় ছিল, যখন এখানে ঘুরতে এলেও সেই নিশ্চিন্দির ঘোরাটা যেন হত না। মনের মধ্যে ভয় কাজ করত। কিন্তু মোদী সরকারের একের পর এক পদক্ষেপ নেবার কারণে জম্মু-কাশ্মীরের হালচাল শুধু যে বদলেছে, তাই নয়। একইসঙ্গে বছর বছর পর্যটকদের আরও পা যে এই অঞ্চলে পড়বে সেই কথা নিশ্চিন্তে বলাই যায়। জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে ভারত সরকার বেশ কিছু মেগা প্রোজেক্ট শুরু করেছে, যেটা লাদাখ পর্যন্ত বিস্তৃত। স্মার্ট সিটি, ইনফ্রাস্ট্রাকচারে দুর্দান্ত ডেভেলপমেন্ট, বিদেশি বিনিয়োগের সদিচ্ছা- এই সব মিলিয়েই আজ ভোল বদলাতে চলেছে জম্মু-কাশ্মীরের। আজকের প্রতিবেদনে বলব, কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু-কাশ্মীরের জন্য কী কী মেগা প্রোজেক্টে হাত দিয়েছে যা জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখের মানুষদের আর্থিকভাবে খুব বড় সাপোর্ট দিতে চলেছে, একইসঙ্গে সতর্কবার্তা দিতে চলেছে পাকিস্তান এবং চিনকে?
AIIMS
প্রথমেই বলা যাক এইমসের কথা। অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এইমসের ক্যাম্পাস তৈরি হতেই থাকে। এবার সেই লিস্ট থেকে বাদ নেই জম্মু-কাশ্মীর। কাশ্মীরের আওয়ান্তিপুরে ২২১ একর জমির ওপর তৈরি হচ্ছে এইমসের ক্যাম্পাস। মনে করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে এই ক্যাম্পাস তৈরি হয়ে যাবে। মোট ৫৭টি বিল্ডিং থাকবে এই ক্যাম্পাসে। তৈরিতে খরচ হচ্ছে আনুমানিক ১৮২৮ কোটি টাকা। একইসঙ্গে এইমসের আরেকটা ক্যাম্পাস তৈরি হচ্ছে জম্মুর বিজয়পুরে, প্রায় ২২৬ একর জমির উপরে। এখানকার ৯৫% কাজ কমপ্লিট হয়ে গেছে। বাকি আর কয়েক মাসের মধ্যেই খুব দ্রুত হয়ে যাবে। এইমসের এই দুটো ক্যাম্পাস তৈরি হয়ে গেলে তখন জম্মু-কাশ্মীরের মানুষদের আর চিকিৎসার জন্য বাইরের রাজ্যে ট্র্যাভেল করতে হবে না। বরং এখানেই তারা নিজেদের সম্পূর্ণ চিকিৎসা করাতে পারবেন।
KIRU HYDRO ELECTRIC PROJECT
জম্মু-কাশ্মীরের অন্যতম মেগা প্রোজেক্ট হতে চলেছে কিরু হাইড্রো ইলেকট্রিক প্রোজেক্ট। চেনাব নদীর ওপরে ১৩৫ মিটার উচ্চতায় তৈরি হচ্ছে এই প্রোজেক্টটি। যার রিজারভয়ার হবে ৬.৫ কিমি লম্বা। এই পাওয়ার প্রোজেক্টটি কমপ্লিট হয়ে গেলে এলাকার মানুষদের আর বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে কোন চিন্তা করতে হবে না। মনে করা হচ্ছে, গ্রামীণ এলাকায় এই পাওয়ার প্ল্যান্ট বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবে। একইসঙ্গে এনার্জির অল্টারনেট সোর্স হয়ে উঠবে। এছাড়া ট্রান্সপোর্টেশন, এডুকেশন, মেডিক্যালের জন্য যে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জোগানের প্রয়োজন, সেটাও দেবে এই কিরু হাইড্রো ইলেকট্রিক প্রোজেক্ট।
ZOZILA TUNNEL
জোজিলা পাশের কথা ইতিমধ্যেই আমরা অল্পবিস্তর সকলেই জেনে গেছি। জম্মু-কাশ্মীরের আপকামিং মেগা প্রোজেক্টগুলোর মধ্যে অন্যতম এটি। হিমালয়ান রিজিয়নে ১৪.২ কিমি লম্বা এই জোজিলা পাশ চলে যাবে শোনমার্গ থেকে লাদাখের কার্গিল ডিসট্রিক্টের দ্রাস পর্যন্ত। নিউ অস্ট্রিয়ান টানেলিং মেথড ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে এই টানেল। দুই লেনের এই টানেলে থাকবে কিছু অত্যাধুনিক ফিচার। তার মধ্যে অন্যতম সিসিটিভি, রেডিও কন্ট্রোল, ভেন্টিলেশন, এবং বিদ্যুৎ সংযোগ। এই টানেল একদিকে যেমন যাতায়াতের সময় অনেকটাই কমিয়ে আনবে, তেমনই অন্য দিকে পর্যটন এবং অর্থনীতিতে খুব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। একইসঙ্গে মিলিটারি লজিস্টিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে এই টানেল। খরচ পড়ছে ১.০৪ বিলিয়ন ডলার বা ৮,৩০৮ কোটি টাকা।
SRINAGAR SMART CITY PROJECT
বন্ধুরা, এখন যে-কটি স্মার্ট সিটি প্রোজেক্ট হাতে নিয়েছে ভারত সরকার তার মধ্যে অন্যতম শ্রীনগর স্মার্ট সিটি প্রোজেক্ট। এই প্রোজেক্টের আন্ডারে ঝিলাম ওয়াটার প্রোজেক্টকে আরও ডেভেলপ করা হবে। আরবান মোবিলিটি, রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা- সবকিছুই হতে চলেছে দুর্দান্ত। শহরকে আরও সুন্দর এবং আকর্ষণীয় করে তোলা হবে। তার জন্য স্থানীয় শিল্পীদের সাহায্য নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরের যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে, তাকেও আরও দারুণভাবে তুলে ধরা যাবে। যা আগামীতে পর্যটন সেক্টরে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছাপ রাখতে পারে। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের সুবিধাও এখানে দেওয়া হবে। শোনা যাচ্ছে, এখানেও চালানো হতে পারে ইলেকট্রিক বাস।
EMAAR SRINAGAR MALL
দুবাই-এর এমার গ্রুপের বড়সড় বিনিয়োগ হতে চলেছে এখানে। শ্রীনগরে ৫ লক্ষ স্কোয়ার ফুট জায়গা জুড়ে তৈরি করা হবে শপিং মল। তার জন্য দুবাই সরকারের সঙ্গে ভালোরকম চুক্তি হয়েছে। সেই অর্থে বলতে গেলে, জম্মু-কাশ্মীরে সর্বপ্রথম বিদেশি বিনিয়োগ হতে চলেছে এই এমার গ্রুপের। জানা গিয়েছে, এই প্রোজেক্ট সম্পূর্ণ হলে ভারত এবং ইউএই-র মধ্যে ইকোনমিক পার্টনারশিপ আরও মহবুত হবে। ইউএই থেকে আগামীতে আরও বেশি করে বিদেশি বিনিয়োগ হতে পারে। জম্মু-কাশ্মীরে এমার গ্রুপের এই বিনিয়োগ নিঃসন্দেহে স্থানীয় মানুষদের কর্মসংস্থানের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠবে। একইসঙ্গে এলাকায় অনেকটাই ইকোনমিক বুম হবে।
প্রিয় দর্শক, এখানেই শেষ নয় কিন্তু। জম্মু-কাশ্মীরকে ঢেলে সাজানোর জন্য আরও বেশ কিছু মেগা প্রোজেক্ট কেন্দ্রীয় সরকার যত শীঘ্র সম্ভব শেষ করতে চাইছে। তার মধ্যে রয়েছে উধমপুর-শ্রীনগর বারামুল্লা রেল লাইন, রয়েছে জম্মু মেট্রোলাইট, শ্রীনগর মেট্রোলাইট, রয়েছে জম্মু-শ্রীনগর সেমি রিং রোড প্রোজেক্টের মতন একাধিক আপকামিং মেগা প্রোজেক্ট। আর কয়েক বছরের অপেক্ষা। যে গতিতে গোটা জম্মু-কাশ্মীরের ভোল কেন্দ্রীয় সরকার বদলাতে চলেছে, মনে করা হচ্ছে, এর ফলে জম্মু-কাশ্মীরের ইকোনমি দুর্দান্ত বুম তো করবেই, একইসঙ্গে এলাকার মানুষদের কর্মসংস্থানের অনেকগুলো রাস্তা খুলে যাবে। সবমিলিয়ে একেকটা মেগা প্রোজেক্টের হাত ধরে আপাতত দেশের ইকোনমিক গ্রোথের সাক্ষী থাকছে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ। আপনাদের কি মনে হয়? এই মেগা প্রোজেক্টগুলো ট্যুরিজম সেক্টরে কতটা প্রভাব ফেলবে?
বিজনেস প্রাইম নিউজে।
জীবন হোক অর্থবহ