Trending
কথিত আছে, তাঁর ভাণ্ডারে সম্পদের পরিমাণ যেমন অগাধ, তেমনই তা দুর্মূল্যও বটে। রয়েছে বেশ কিছু বিষধর সাপ। যারা দিবারাত্র প্রভুর সেই অগাধ সম্পদ পাহাড়া দিতে মত্ত। অন্ধকার কুঠুরির সেই বহুমূল্য সম্পদের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলে নাকি চোখ অন্ধ হয়ে যায়। তাই এত বছর সেই রত্নভাণ্ডারের কপাট বন্ধই ছিল। কিন্তু এবার ৪৬ বছর পর খুলে গেল সেই রত্নভান্ডারের সিংহদুয়ার। অজানা নগরী অন্ধকার কুঠুরির ভিতরে কী কী রয়েছে, শুনলে গায়ে কাঁটা দিতে পারে আপনারও।
পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরের রত্নভাণ্ডার নিয়ে এখন চারিদিকে টানটান উত্তেজনা। একপ্রকার রাজনৈতিক অঙ্গুলিহিলনেই দীর্ঘ চার দশক পর খুলে গেল সেই রত্নভাণ্ডারের দরজা। আর সেই দরজা খুলতেই… অপূর্ব এক স্বপ্নসম, লাগতেছিল চক্ষে মম। ঘুটঘুটে সেই অন্ধকার কুঠুরির ভিতর থেকে সিন্দুকবন্দী হয়ে একে একে বাইরে আসতে থাকে বহুমূল্যবান হিরে, জহরত, মণি, মানিক্য ইত্যাদি। প্রশ্ন হচ্ছে, এত বছর পর এমন কী প্রয়োজন পড়ল যে প্রভু জগন্নাথের রত্নভাণ্ডার চর্চায় উঠে এল? এই দুর্মূল্য এবং বহুমুল্য সম্পদের ভবিষ্যৎটা কী?
সেটা বলব। তবে তার আগে, বিগত হিসেব অনুযায়ী এই ভাণ্ডারের সম্পদের পরিমাণ কত? সেটা বরং জেনে নেওয়া যাক। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের এই রত্ন ভাণ্ডারে রয়েছে মোট তিনটি কুঠুরি। প্রতিটি কুঠুরিতেই সোনা-দানা ঠাসা। প্রথম চেম্বার বা কুঠুরিতে রয়েছে ৫০ কেজি ৬০০ গ্রাম সোনা এবং ১৩৪ কেজি ৫০ গ্রাম রুপো। দ্বিতীয় কুঠুরিতে ৯৫ কেজি ৩২০ গ্রাম সোনা এবং ১৯ কেজি ৪৮০ গ্রাম রুপো। একদম শেষের কুঠুরিতে রয়েছে ৩ কেজি সোনা এবং ৩০ কেজি রুপো। যা বরাবরই অব্যবহৃত।
দেখুন, যে মন্দিরের ভাণ্ডারে রাশিরাশি, সোনাদানা ঠাসাঠাসি, সেই মন্দির যে চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হবে- তা তো নতুন করে বলার কিছু নেই। জানা যাচ্ছে, ৪৬ বছর আগে ১৯৭৮ সালে শেষবারের মতো এই রত্নভাণ্ডার খোলা হয়। এরপর নাকি চাবি হারিয়ে যাওয়ার কারণেই খোলা যায়নি। কিন্তু সরকারী নিয়ম অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন মন্দিরের রত্নভাণ্ডারের হিসেব থাকা প্রয়োজন। প্রয়োজন অডিটের। যেমন দক্ষিণের তিরুপতি মন্দিরের রত্নভাণ্ডারের হিসেব করা হয়েছিল, ঠিক তেমনই। সমস্ত হিসেব নিকেশ শেষে বিশেষ ভল্টে সেগুলিকে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। আর যেহেতু সেই রত্নভাণ্ডারর রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বে রয়েছে আরকিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। তাই এবার সেই রত্নভাণ্ডারের সংস্কারের কাজও এবার তারা শুরু করবে।
উড়িষ্যার বিজেডি দল এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েককে ক্ষমতাচ্যুত করতে পুরীর রত্নভাণ্ডার নিয়ে মোক্ষম চাল চেলেছিল বিজেপি। আর সেই চাল তাদের কাজেও দিয়েছে। বিজেডি-কে হারিয়ে এখন উড়িষ্যায় শুরু হয়েছে বিজেপি রাজ। আর কথামত, জোরদার তোরজোড়ের সঙ্গে খোলা হল সেই রত্নভাণ্ডারের দরজা। চাবি হারিয়ে যাওয়ার কারণে বা অজুহাতে যে দরজা দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে বন্ধই ছিল। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর সেই দরজা খুলল ঠিকই। কিন্তু দরজা খুলতেই সামনে এল রত্নভাণ্ডারের বিরাট বিরাট ফাটল। অবিলম্বে এই ফাটল মেরামতির কাজ শুরু না করলে যেকোনো দিন নাকি গর্ভগৃহ ধসে পড়তে পারে, বলছেন আরকিওলজিস্টরা।
যদিও জেলা প্রসাশকের প্রতিনিধিত্বে, আরবিআই-এর অফিসারদের সাহায্যে এবং আরকিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এই রত্নভাণ্ডার খোলা হয়। উপস্থিত ছিলেন পুরীর মন্দিরের সেবাইতেরাও। স্নান সেরে শুদ্ধ হয়ে কোমরে গামছা বেঁধে তবেই এই রত্নভাণ্ডারের ঢোকার নিয়ম। আরবিআই অফিসার থেকে শুরু করে এএসআই কর্মকর্তা- প্রত্যেকের জন্যই একই নিয়ম। তাই সেভাবেই পুরীর মন্দিরের রত্নভাণ্ডারে ঢোকা হয়। বাইরের এবং ভিতরের- দুই রত্নভাণ্ডার থেকেই বের করে আনা হয় সেই বিপুল রত্নের সম্ভার। তবে, স্বয়ং বিষধর সাপেরা যেখানে পাহাড়াদার, সেখানে জান হাতে করে যেতে সকলেরই যে বুক ঢিপ ঢিপ করবে- সেটা বলাই যায়। তা সে যত বড়ো জাঁদরেল অফিসারই হন না কেন। আর যাই হোক। জান সে প্যায়ারা কুচ নেহি।
এবারে অডিটের পর সম্পদের সাম্প্রতিক পরিমাণ জানা যাবে। তারপর তা রাখা হবে বিশেষ ভল্টে। তারপর শুরু হবে রত্নভাণ্ডার সংস্কারের কাজ। তবে, সেই সম্পদ কবে কোথায় কতদিনের জন্য সেই বিশেষ ভল্টে থাকবে? সেই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু ধোঁয়াশা হিসেবেই থেকে গিয়েছে।
সঙ্গে থাকুন দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।