Trending
দুর্ধর্ষ ১৫ মিনিট। থমথমে গোটা ভারত। থেকে থেকে পীঠ দিয়ে বয়ে চলেছে ঠাণ্ডা স্রোত। কোটি কোটি চোখ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে বেঙ্গালুরুর কন্ট্রোল রুমের স্ক্রিনে। ৪০ কিলোমিটার । ২০ কিলোমিটার। ১০ কিলোমিটার। এবং ফাইনালি জিরো। চাঁদের মাটি ছুঁল বিক্রম ল্যান্ডার। অ্যান্ড ইট ওয়াস আ গুসবাম্প। হ্যাটস অফ ইসরো।
প্রথম যা কিছু, তাই আনন্দের। তাই একটা তিরতিরে চাপা উত্তেজনা ছিলই। প্রতি মিনিটে সেই উত্তেজনার পারদ চড়ছিল। ২০১৯ এর অভিশপ্ত ইতিহাস কাটিয়ে এবং বন্ধুদেশের সদ্য ব্যর্থ হওয়া মিশনের ক্ষত সামাল দিয়ে ওঠা হয়ে ওঠেনি তখনও। কাজেই কি সাংঘাতিক মানসিক চাপ ওই বিজ্ঞানীরা ফেস করছিলেন, সেটা আন্দাজ করা যায়। নাহ! আজ সেসব পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে লাভ নেই। আজ বাঁধভাঙা খুশির দিন। আনন্দ, গর্ব এবং উত্তেজনার একটা মিশ্র অনুভূতি।
দুর্বার ইসরো। অচেনা চাঁদ ছুঁয়েছে ইসরো। চাঁদের দক্ষিণ মেরু ছুঁয়েছে চন্দ্রযান-৩। চাঁদ ছুঁয়েছে আপামর ভারতবাসী। কাজেই চাঁদের ওই অন্ধকার ঘুটঘুটে, রুক্ষ-রুষ্ট মেরুটা অজ্ঞাত নয়। কারণ, সেখানে ভারতের একটা রোভার রয়েছে। একেবারেই তাই। চাঁদের সেই অজানা প্রান্তের সঙ্গে পৃথিবীর পরিচয় করাবে ভারত। একমাত্র ভারত।
বাইটঃ ইসরোর কারেন্ট চেয়ারম্যান
৬ হাজার কিলোমিটার পার আওয়ার গতিবেগে ছোটা একটা বস্তুকে পৃথিবী থেকে কন্ট্রোল করে চাঁদে ল্যান্ড করানো Was not that easy. But ISRO did it. তাও আবার নামমাত্র বাজেটে। একেবারেই তাই। আপনারা সকলেই জানেন যে চন্দ্রযান-৩ তৈরিতে সর্বসাকুল্যে বাজেট ধরা হয়েছিল ৭৫ মিলিয়ন ডলার। যা কি না Interstellar বা gravity-র মত হলিউড সিনেমার বাজেটের ২/৩।
চন্দ্রযান-৩ শুধু একটা মিশন নয়। এটা একটা লেসন। নামমাত্র অর্থবরাদ্দে আকাশছোঁয়ার শিক্ষা। গোটা বিশ্বের কাছে এটা একটা ইন্সপিরেশন। বিশেষ করে, ইউএস বা সোভিয়েত ইউনিয়নের মত দেশ, যারা স্পেসকে একটা হাইবাজেটের খেলার মাঠে পরিণত করেছে, তাদের সেই স্টিরিওটাইপ ভাবনাচিন্তাকে ভেঙে গুরিয়ে দিতে চন্দ্রযান-৩ একটা সপাট জবাব তো বটেই।
মোদীর বাইটঃ
অপ্রতিরোধ্য ইসরো। বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্টের থেকেও ট্যালেন্ট, এক্সপার্টিজ এবং কনফিডেন্স থাকাটা যে বেশি জরুরী সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ইসরো। হাজারটা বাধা পেরিয়ে আজ সফল ইসরো। পুঁজির অভাব, টেকনিক্যাল সাপোর্টের অভাব, পলিটিক্যাল বাধা, ম্যানপাওয়ার- লিস্ট অনেক লম্বা। কিন্তু দিনশেষে এই সবটা ইসরোকে আরও বেশি করে স্ট্রং করে তুলেছে। বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার এবং এই প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের রাতজাগা পরিশ্রমের নাম চন্দ্রযান-৩।
মিশন অ্যাকমপ্লিশড! চাঁদের বুকে ল্যান্ড করেছে বিক্রম। রুদ্ধশ্বাস এই জার্নির ধকল সামলে শীঘ্রই কাজ শুরু করবে প্রজ্ঞান। খুঁজবে চাঁদের মাটিতে জলের অস্তিত্ব। খবর দেবে ইসরোকে। আর এই সব কাজটাই হবে চাঁদের হিসেবে মাত্র একদিনে। মানে পৃথিবীর হিসেবে ১৪ দিন। এমনকি, নিজের যাত্রাপথে চাঁদের মাটিতে খোদাই করবে ভারতের নাম। ছয়চাকার প্রজ্ঞানে খোদাই করা আছে ভারতের অশোকস্তম্ভ এবং ইসরোর লোগো। যে রাস্তা দিয়ে প্রজ্ঞান যাতায়াত করবে সেখানে ফুটে উঠবে ভারতের নাম। চাঁদের না আছে ক্ষয় না আছে বাতাস। সুতরাং চাঁদের মাটিতে এই ছবি থেকে যাবে দীর্ঘ সময়ের জন্য। হয়তো, যতদিন চাঁদ থাকবে, ততদিন তার মাটিতে ভারতের নাম থাকবে।
বাইটঃ ইসরোর চেয়ারম্যান।
সায়েন্টিস্টদের এক্সপেরিমেন্টের খিদেই বলুন, বা বিজনেস লিডারদের বসতি স্থাপনের প্ল্যানিং অথবা চাঁদমামার গান গেয়ে বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানোর ইমোশন-চাঁদের প্রতি এই দুর্বলতাটা জাতীয়। আর সেই চাঁদকে হাতের কাছে এনে দেওয়ার জন্য, ইসরোর ধৈর্যকে স্যালুট। ভারতকে এমন একটা উপহার দেওয়ার জন্য বিজ্ঞানীদের ধন্যবাদ।
একদিনে না হোক। একদিন হবেই। আজ সেইদিনটা। সাইকেল থেকে শুরু হওয়া এই যাত্রা এখন চাঁদে। নাহ! তাই বলে শেষ হয়নি। আরও অনেক বড় কিছু প্ল্যান করছে ইসরো। ২০২৫-এ মহাকাশচারি পাঠানোর অ্যানাউন্সমেন্ট ইতিমধ্যেই সেরেছে ইসরো। রয়েছে মিশন মঙ্গল। রয়েছে মিশন সূর্য। ইসরোর আরও অনেক এক্সাইটিং প্রজেক্ট উপহার পেতে চলেছে ভারত তথা গোটা বিশ্ব।
ট্রামে, বাসে মেট্রোয় অফিস ফিরতি যখন কানে আসে ইসরো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, চন্দ্রযান-৩ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এবং ফুটবল বা ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতার মত এক্সাইট্মেন্ট নিয়েই আলোচনা হচ্ছে, তখন গর্ব হয়। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে যে, ‘ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে’। কে বলতে পারে? ইসরোর হাত ধরেই হয়তো সেই শ্রেষ্ঠত্ব ফিরে পাওয়ার যাত্রা শুরু!
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ