Daily
প্রগতিশীল কৃষকদের নিত্য নতুন প্রযুক্তি এবং ভাবনাচিন্তা যে কৃষিক্ষেত্রে বেশ আলোড়ন তৈরি করে, তার প্রমাণ আগেও বেশ কয়েকবার আমরা পেয়েছি। কিন্তু যে জমিতে যে ফসল হওয়াটাই দস্তুর, আজ জমির চরিত্র বদল হলেও ফলনে কোনরকম ঘাটতি দেখা যাচ্ছে না। বরং ফলনের বহর কৃষকের হাসি চওড়া তো করছেই, সঙ্গে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বুদ্ধির প্রয়োগ ঠিকঠাকভাবে করলে আর ভাবনা চিন্তার জায়গাটা খোলা রাখলে অসাধ্য সাধনও সম্ভব।
সাধারণত বালি মাটিতে তরমুজের চাষ হয়ে থাকে। প্রধানত নদীর চরে তরমুজের ফলন হয় সবথেকে ভালো। কৃষকরা এভাবেই তরমুজ ফলিয়ে সংসারের ঘানি টানছেন বছরের পর বছর ধরে। কিন্তু জমির চরিত্রে বদল এনেও যে কার্যসিদ্ধি সম্ভব সেটা মনে হয় কোন কৃষকের মাথাতেও আসেনি। আর যে কারণে দোআঁশ মাটিতে তরমুজ ফলিয়ে বেশ হইচই ফেলে দিয়েছেন আলিপুরদুয়ার জেলার এক প্রান্তিক কৃষক। আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রাম ব্লকের চকচকার প্রগতিশীল কৃষক প্রতাপ বিশ্বাস। দোআঁশ মাটিতে পলি মালচিং পদ্ধতির ব্যবহার করে দেখিয়ে দিয়েছেন তরমুজ ফলানো তেমন একটা অসাধ্য কোন বিষয় নয়। ফলে প্রচারের আলোয় আসতেও সময় লাগেনি তাঁর। এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, দোআঁশ মাটিতে তরমুজ হলে কি তার গুণগত মান বা স্বাদ একই থাকবে? নাকি সেখানেও পরিবর্তন আসবে? শুনে নিন, কী বলছেন তরমুজ চাষি প্রতাপ বিশ্বাস।
দোআঁশ মাটিতে তরমুজ ফলানো নিয়ে প্রথম থেকেই মনে একটা ভয় ছিল প্রতাপবাবুর। তবু এক বন্ধুর কাছ থেকে ঝুঁকি নিয়েই বীজ সংগ্রহ করে তরমুজ ফলাতে শুরু করেন তিনি। ফলন যে ধরবে সেই নিয়েও তাঁর সংশয় ছিল। কিন্তু আশ্চর্য হওয়া তখনও বাকি ছিল প্রতাপবাবুর।
প্রায় ২০-২১ বছর হয়ে গেল কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত প্রতাপবাবু। এমন ঘটনার সাক্ষী তিনি নিজেও আগে কোনদিন ছিলেন না। কিন্তু উৎপাদিত ফসল দেখে তিনি খুব খুশি। তাঁর জমিতে তরমুজের ফলন দেখতে চলে আসছেন অন্যান্য কৃষকরাও। প্রতাপবাবুর কাছে জানতে চাইছেন চাষের ব্যপারে। তবে হ্যাঁ, প্রথাগত ভাবে চাষ করা তরমুজ আর এই তরমুজের ফারাক নজরে পড়বে শুধু তার আকারে। বালি মাটির তরমুজ যেখানে ৭ থেকে ৮ কেজি পর্যন্ত হতে পারে সেখানে এই পদ্ধতিতে চাষ করা তরমুজের ওজন হয় ৩ থেকে ৩.৫ কেজি পর্যন্ত। ব্যাস, এটুকুই। এছারা স্বাদ এবং গুণাগুণে কোন পার্থক্য নেই। তাই প্রতাপবাবুর পরিশ্রম সার্থক। কারণ দিনের শেষে লাভের অঙ্কটা খুব খারাপ আসবে না বলেই তাঁর বিশ্বাস।
অভিজিৎ চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার