Tech-Talk
Intro:
জেমস ওয়াটের স্টিম ইঞ্জিন আবিষ্কার, সেটা প্রথম শিল্প বিপ্লব। সাল ১৭৬৩-১৭৭৫।
বিদ্যুতের আবিষ্কার, সেটা দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব। সাল ১৮৭০-১৯১৪।
এরপর কম্পিউটার, তথ্য ডিজিটালাইজেশন, সেটা তৃতীয় শিল্প বিপ্লব। সাল ১৯৬৯।
আর এখন রোবট, অটোমেশন, এআই- এটাই চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। যে বিপ্লবে গা ভাসিয়েছি আমরাও। ভাসিয়েছি নয়। ভাসাতে বাধ্য হয়েছি। না-হলে যে পিছিয়ে পড়তে হবে। তাই না? অতএব, শিল্পের এই বিপ্লব আজ ক্রমশই জড়িয়ে পড়ছে মানুষের জীবনে, সমাজে, সভ্যতা এবং সংস্কৃতিতে। যার মাধ্যমে কমছে এরর, বাড়ছে পারফেকশন। শ্রম এখন শুধু শরীরের নয়। বলা যেতে পারে, শরীরের সেই অর্থে নয়ই। তার চেয়েও বেশি মাথার। ছোট্ট সময়ে অনেক কাজ। আর এটাই ধীরে ধীরে বদলে দিচ্ছে গোটা দুনিয়ার শিল্পের ইতিহাসকে। আসুন, আজ আমরা কথা বলব শিল্প বিপ্লবের এই চতুর্থ অধ্যায় নিয়ে। যাকে ইংলিশে বলা হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন ৪.০। আসুন, আজ আমরা তুলে ধরব বিজনেস প্রাইম নিউজের এই বিশেষ প্রতিবেদন। যেখানে ছোট্ট একটা আলোচনা সারব চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে।
Industrial Revolution process:
প্রথমেই বলা যাক, শিল্প বিপ্লব কেন হয়েছিল? শিল্প বিপ্লব মানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোলিউশন। শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন, বিখ্যাত ইংরেজ ঐতিহাসিক এবং দার্শনিক আর্নল্ড টনিবি। ১৮৮০ সালে তিনি একটি বই লিখেছিলেন। নাম- লেকচারস অন দ্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন ইন ইংল্যান্ড। অনেকেই মনে করেন, শিল্প বিপ্লব হওয়ার অন্যতম কারণ পুঁজির জোগান। যা ব্রিটিশদের হাতে এসেছিল ঔপনিবেশিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র থেকে। জেমস ওয়াটের স্টিম ইঞ্জিনের আবিষ্কার শিল্পে যে বিপ্লব আনতে পারে, সেটা প্রমাণ করে দেয়। মূলত, সুলবে শ্রমিক পাওয়া, উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা, বৈজ্ঞানিক মূলধনের প্রসার, কৃষি বিপ্লবের প্রভাব এই সবই শিল্প বিপ্লবে অনুঘটকের কাজ করে। কায়িক পরিশ্রম আর নয়। পরিবর্তে আসে যন্ত্রের ব্যবহার। এই সময় শ্রমিক শ্রেণির দারুণ একটা উদ্ভব হয়েছিল। এভাবেই যত সময় এগিয়েছে ততই শিল্প বিপ্লব একেকটি করে ধাপ পেরিয়েছে। ১৮৭০ সালে বিদ্যুতের আবিষ্কার তার মধ্যে যেমন অন্যতম। তখন এসে গেল বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতির ব্যবহার। ধীরে ধীরে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘুরে গেল প্রায় দুশো বছর। ১৯৬৯ সালে যখন কম্পিউটার, তথ্য ডিজিটালাইজেশনের সময় এসে পড়ল তখন সেটা হয়ে উঠল শিল্প বিপ্লবের তৃতীয় ধাপ। এরপরেও পেরিয়ে গেল আরও ৫০ বছর মতন। এই সময়, মানে যে সময়ে আপনি এই ভিডিওটি দেখছেন, এখন নিঃশব্দে শুরু হয়ে গিয়েছে শিল্প বিপ্লবের চতুর্থ ধাপ। ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন ৪.০। এখন বিষয় হচ্ছে, কি এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন ৪.০? কেই বা প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করলেন? আর কেনই বা একে শিল্প বিপ্লবের চতুর্থ অধ্যায় বলব?
Industrial Revolution 4.0:
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চেয়ারম্যান ক্লস শোয়াব। তিনি নিজে অবশ্য একজন জার্মান। যিনি নিজে বলেছেন, কিভাবে ডিজিটাল শিল্প বিপ্লব গোটা দুনিয়ার হালহকিকত বদলে দিতে পারে। কিভাবে অর্থনীতির চাকা আরও মসৃণ গতিতে এগোতে পারে। ২০১৩ সালে জার্মানিতে প্রথম এই শিল্প বিপ্লবের চতুর্থ অধ্যায় নিয়ে সুদূরপ্রসারি আলোচনা চলে। কিন্তু কেন এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লব? বন্ধুরা একটা সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, প্রতিদিন ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে ২০ হাজার ৭০০ কোটি মেলের আদানপ্রদান চলে গোটা বিশ্বে। গুগলে একদিনে ৪২০ কোটি বার বিভিন্ন তথ্য খুঁজে দেখা হয়। তার মানেটা স্পষ্ট। এখন আর কায়িক পরিশ্রম নয়। ডিজিটাল নির্ভর জীবন, ডিজিটাল নির্ভর আমাদের ডেলি রুটিন। যেখানে প্রতিদিন কোটি কোটি পুঁজি ঢালা হচ্ছে গোটা বিশ্বে। এই পুঁজি ঢালছে কারা? কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, বিশ্বনেতার দল, প্রযুক্তিবিদদের মেধা এই সবই আজ পৃথিবীকে মুড়িয়ে দিচ্ছে ডিজিটালি। আর এটাই নতুন একটি শিল্প বিপ্লবের জন্ম দিয়েছে। যার নাম হয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন ৪.০। অনেকেই বলেন, এই আই ৪.০ আসলে জার্মান সরকারের হায়ার টেকনোলজি বেসড একটি প্রোজেক্ট। আর এটাই গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিচ্ছে, ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে কম্পিউটারাইজেশনের প্রভাব।
Subjects of Industrial Revolution 4.0:
এবার আসা যাক, এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে কি কি যুক্ত। অবশ্যই উচ্চ প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান সবই। ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট, বায়োটেকনোলজি, ন্যানো টেকনোলজি, অ্যাডভান্সড টেকনোলজি, রোবোটিক্স, এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স, ক্লাউড কম্পিউটিং, ই-কমার্স, সফটওয়্যার টেকনোলজি, নেটওয়ার্ক অ্যান্ড কমিউনিকেশন ম্যানেজমেন্ট, সাইবার সিকিউরিটির মত এমন বহু বিষয় রয়েছে যা ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন ৪.০-র মধ্যে পড়ে। ভেবে দেখুন তো, এর মধ্যে অধিকাংশ শব্দের সঙ্গেই আমরা কমবেশি সকলে পরিচিত। তার অন্যতম কারণ হল, আমরা আজ এই ডিজিটাল বিপ্লবের যে প্রসেস, সেই প্রসেসের মধ্যে ঢুকে পড়েছি এবং সেভাবেই এগিয়ে চলেছি। খুব একটা ভুল হবে না এটা বললে যে, আজ বহু বিশ্ববিদ্যালয় এই ধরণের হাজারো বিষয়কে তুলে ধরেছে। সেই বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশোনা করছেন বহু ছাত্রছাত্রী। উচ্চ মাইনে, হাজারো কাজ তাদের কর্মদক্ষতাকে আরও নিপুন করে তুলছে। ম্যানুয়ালি কাজের কথা এবার হয়ত ভুলে যাবার সময় এসে গিয়েছে। আজ হাজার কাজ করবে একজন। তাও আবার প্রায় জিরো এরর মেথডে। অর্থাৎ আইটি-র অবিশ্বাস্য উত্থান যেন নতুন করে চিনিয়ে দিল শিল্প বিপ্লবের নতুন অধ্যায়কে। এখানেই ছোট্ট করে একটা বিষয়।
Industrial Revolution skills:
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে মূলত কোন ধরণের স্কিল একজন পড়ুয়া বা একজন দক্ষ কর্মীর মধ্যে দেখা হতে পারে? বায়োডেটায় বা আপনার সিভিতে কোন কোন স্কিল থাকা বাধ্যতামূলক যা দেখে একটি প্রতিষ্ঠান আপনাকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের একজন আদর্শ বিপ্লবী বলে মনে করবে? বেশ কিছু রিপোর্ট এবং তথ্য সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে,
প্রবলেম সলভিং স্কিল
ক্রিয়েটিভিটি
ক্রিটিকাল থিঙ্কিং
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট
প্ল্যানিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করার জন্য উপযুক্ত দক্ষতা
ডিসিশন মেকিং
সার্ভিস ওরিয়েন্টেশন
কগনিটিভ ফ্লেক্সিবিলিটি
তবে শুধু এই কয়টি বৈশিষ্ট্য থাকলেই হবে না। আরও বেশ কিছু বিষয় আপনার সিভিতে জ্বলজ্বল করতে হবে তবেই না একজন আদর্শ কর্মী হতে পারবেন। প্রতিষ্ঠান আপনাকে ভরসা করবে।
Positive affect of Industrial Revolution:
এবার বলি শিল্প বিপ্লবের এই যে চার নম্বর ঢেউ উঠল, এর ফলে কি কি প্রভাব পড়তে পারে সার্বিক ক্ষেত্রে। রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, মেশিন লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের মতন প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন কাজকে আরও সহজ করে দেবে। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে চাকরি। মেডিক্যাল সায়েন্স সেক্টর থেকে কৃষিক্ষেত্র থেকে খাদ্য শিল্প। এমনকি সাধারণ বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিও এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ঢেউয়ে পড়ে পৃথিবীর কাজের অভ্যাসকে আমূল বদলে দেবে। বৃহৎ পরিসরে দেখলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন ৪.০ দেবে প্রায় ত্রুটিহীন, ঝুঁকিহীন কর্মব্যবস্থা। যা এক ঘন্টার কাজকে করতে পারবে এক সেকেন্ডে। একশো জনের কাজকে করবে একজন। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি, চতুর্থ ঢেউ আবার অন্যদিকে বহু মানুষকে কর্মহীন করতে পারে? বাড়াতে পারে বেকারত্ব? তখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেই মানুষগুলোর ভবিষ্যৎ? আর শেষ প্রশ্ন- ভারত কি সত্যিই ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশনের এই চতুর্থ ঢেউয়ের ধাক্কা সামলাতে প্রস্তুত? এই সব নিয়েই আলোচনা করব ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশনের পরের পর্বে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ