Trending
একদিকে দেশে ইন্ডিয়া বনাম বিজেপির রাজনৈতিক সংঘাত তুঙ্গে। আবার অন্যদিকে বিদেশে ইউপিআই-এর জয়জয়কার। যার প্রধান মুখ নান আদার দ্যান আমাদের প্রধানমন্ত্রী মিঃ মোদী। ইউপিআই-এর সাফল্য দেখে নাকি মার্কিনী প্রশাসনও খানিক ভিড়মি খেয়েছিল। অবশ্য ওরা ইউপিআই-কে এখনো পর্যন্ত এন্ট্রি দেয় নি। তবে ইউরোপের মধ্যে সর্বপ্রথম ফ্রান্স, তারপর ইউএই, সিঙ্গাপুর। আর এবার আমাদেরই পড়শি দেশ শ্রীলঙ্কা। চালু হয়ে গেল ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস বা ইউপিআই। শ্রীলঙ্কায় ইউপিআই চালু হওয়া মানে বুঝতে পারছেন? না-পারলে প্রতিবেদনটি দেখুন। জলের মত সহজ হয়ে যাবে।
শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া। এখন তাদের প্রয়োজন শক্তিশালী কোন হাত। যাকে ধরে আবার বিশ্ব বাজারে ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করবে দেশটা। চিন আগে থেকেই থাবা বাড়িয়ে রেখেছিল। তবে চিনের ব্যাপার-স্যাপার তো…কখন কাকে যে মুশকিলে ফেলে দেবে কেউ বলতে পারে না। অগত্যা, শ্রীলঙ্কার হাতে উপায় বলতে একমাত্র ভারত। আর সত্যি বলতে কি, দেশটা এমনিতেই ছোট। বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি, কোটি কোটি কর্মসংস্থান, ঝাঁকে ঝাঁকে শিল্প- এসব শ্রীলঙ্কার ভাগ্যে তেমন একটা ঘটেনি কোনদিন। শ্রীলঙ্কা মূলত পর্যটন এবং চাষাবাদে মন দিয়েছিল। সেখান থেকেই তাদের আয়ের বড় একটা অংশ উঠে যেত। এরপর অবশ্য শ্রীলঙ্কা নেতৃত্বের কিছু হঠকারী মনোভাবের শিকার হতে হল দেশের সাধারণ মানুষকে। সর্বস্বান্ত হতে হল গোটা দেশটাকে। এখন আবার ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। কিন্তু হাত ধরবে কে? অগত্যা, শ্রীলঙ্কার বিপদে-আপদে সবসময় পাশে দাঁড়ানো, একটু বিগ ব্রাদারের মতন আর কী, সেটা ভারত। সদ্য ভারত সফর করে গেছেন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহে। শুক্রবার দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউজে মুখোমুখি বৈঠক করেন মোদী, রনিল- দুই রাষ্ট্রনেতা। আর সেই সময়ই ইউপিআই চালু নিয়ে উন্মুখ থাকতে দেখা যায় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টকে। তবে শ্রীলঙ্কায় কিন্তু চিনের বিনিয়োগ ভালোই ছিল। তারপরেও শুধু ভারতের প্রতি অগাধ বিশ্বাস কেন?
চিনের বিনিয়োগ প্রচুর রয়েছে শ্রীলঙ্কার মাটিতে। কিন্তু সেই বিনিয়োগ কখন হয়েছিল যখন শ্রীলঙ্কার সুখের সময় ছিল। আর ঐ যে বলে, সুখের সময় নয় বিপদের সময় যে পাশে দাঁড়ায় সেই প্রকৃত বন্ধু হয়। মুশকিল হল, শ্রীলঙ্কা যখন দেউলিয়া হয়ে গেল তখন শ্রীলঙ্কার মাথারা হয়ত আশা করেছিলেন এই সময় চিনের কাছ থেকে কোনরকম সাহায্য তারা পাবে। যেভাবে পাকিস্তান পেয়ে থাকে। কিন্তু পাকিস্তানের আয়রন ব্রাদার হলেও শ্রীলঙ্কার দিক থেকে একেবারে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিলেন জিংপিং। আর সেই সময় শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে ভারত। যত রকম সাহায্য করা সম্ভব, প্রতিশ্রুতি পালন করে ভারত। আর যে কারণে দেউলিয়া শ্রীলঙ্কার জন্য সবচেয়ে ভরসা জুগিয়েছে ভারত। তাই ভারতমুখী শ্রীলঙ্কা। মনে করা হচ্ছে, ইউপিআই সিস্টেম চালু হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও গভীর হল। তবে এখানেই শেষ নয়। পেট্রোলিয়ামের পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে দুই দেশের মধ্যে। একইসঙ্গে শ্রীলঙ্কার উপকূলে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের আটকের ব্যপারটা নিয়েও আলোচনা হয়।
মোদী সরকারের যে অনেকগুলো অ্যাজেন্ডা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ইউপিআই সিস্টেমকে বিদেশের মাটিতে ছড়িয়ে দেওয়া। এর ফলে ভারতীয় মুদ্রার কদর যে অনেকগুণ একধাক্কায় বৃদ্ধি পাবে সেটা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্য সহ যে-কোন আর্থিক কর্মকাণ্ডের সময় অনেকটাই কমে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই ইউপিআই সিস্টেম সেক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে। ফ্রান্সে ইউপিআই সিস্টেম চালু হওয়া ভারতের জন্য একটা মাস্টারস্ট্রোক ছিল। তারপর ইউএআই, সিঙ্গাপুরের তরফ থেকে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়াটা বিশ্ব বাজারে ইউপিআই-কে অনেকটা ফ্রন্টফুটে রেখেছে। এবার শ্রীলঙ্কা। যত ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড হবে আর আপনি যদি ভারতীয় হন তাহলে ইউপিআই দিয়েই সব মুশকিল আসান হয়ে যাবে। বিশ্বব্যাপী যদি একের পর এক দেশ যদি সত্যি ইউপিআই চালু করে, তাহলে বিদেশের মাটিতে আরও জোরালো হবে আর্থিক ব্যবস্থা। এমনিতেই দেশের ফরেক্স রিজার্ভ ৬০০ বিলিয়ন ক্রস করে গেছে। মোদীর ঘুঁটি শক্ত। সে দেশের মধ্যে যতই ‘ইন্ডিয়া’ তৈরি করে বিজেপি বিরোধী আসরে নামার চেষ্টা করা হোক। একবার ভেবে দেখুন তো, পাকিস্তান যদি চিনের বোড়ে হয়, তাহলে কি শ্রীলঙ্কা ভারতের মোক্ষম চাল হতে পারে না? আপনারা কি বলেন? এই বিষয়টা নিয়ে আরেকদিন প্রতিবেদন করার ইচ্ছে রইল
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ