Trending
গতকালই আমাদের একটা প্রতিবেদনে বলেছিলাম আমেরিকার অর্থনীতি প্রায় ভেঙে পড়ার মুখে। এই আশঙ্কা মাথায় নিয়েই অনেক দেশ ডলারের পরিবর্তে সোনা মজুদের পথে হাঁটছে। সেই তালিকায় রয়েছে ভারত নিজেও। আজকের প্রতিবেদনে খোলসা করব, কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার মজুদ থাকলেও কোন ভয়ে সোনা মজুদের কথা চিন্তা করছে ভারত। শোনা যাচ্ছে, টন টন সোনা ভারত সরকার ইতিমধ্যেই মজুদ করার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। কেন সোনা ডলারের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠছে, আজকের প্রতিবেদনে আলোচনা সারা যাক এই টপিক নিয়ে।
আমরা সকলেই জানি, যে দেশ নিজের ফরেক্স রিজার্ভে ডলার মজুদ করবে সেই দেশ ততই ইকোনমিকালি শক্তিশালী হবে। দাদাগিরি দেখাবে সেই দেশ। গ্লোবাল মার্কেট রুল করবে সেই। ভারতে ডলারের রিজার্ভ খুব একটা কম নেই। বর্তমানে ভারতের কাছে ডলার মজুদ রয়েছে ৫৮৬.৪১২ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ঐ- কথায় বলে যে, পরিস্থিতি সারাজীবন একই জায়গায় আটকে থাকে না। পরিস্থিতির বদল হয়ই। সেই ফাঁপরে এবার পড়েছে আমেরিকা। আমেরিকার বর্তমান পরিস্থিতি কী, তার জন্য আই বটনের লিঙ্কে ক্লিক করেই দেখতে পারবেন, সেখানে পুরো ডিটেলে প্রতিবেদনটি বলা রয়েছে।
তাও ছোট করে দু’এক লাইনে বিষয়টা বলে দিই। আমেরিকার ধার বর্তমানে ৩১ ট্রিলিয়ন ডলার হয়ে গিয়েছে। এটা হায়েস্ট। ট্রেজারি সেক্রেটারি মনে করছেন, এখনই কোন দুর্দান্ত স্ট্র্যাটেজিক কোন পথ না-বের করলে, আমেরিকা ঋণখেলাপি হতে পারে। এবার বলি, আজ আমেরিকা সর্বসমক্ষে এটা বলছে। কিন্তু কূটনৈতিক স্তরে একেবারে ওপরে এই খবরগুলো চাপা থাকে না। তার জন্যই তো আগে থেকে বিভিন্ন রকম স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করে দেশগুলো। তারই একটা এক্সটেন্ডেড ফর্ম বলা যেতে পারে এই সোনা রিজার্ভ। এখন আপনি প্রশ্ন করতেই পারেন যে ডলারের থেকেও কি বেশি ভরসার জায়গা হয়ে উঠছে সোনা?
তাহলে উত্তরে বলতে হবে, হ্যাঁ সেটা কিছুটা ঠিকই। এমনিই আমেরিকার ধানাইপানাই অনেক। ওদের সঙ্গে কূটনৈতিক স্তরে বন্ধুত্বের বন্ডিং ধরে রাখাটা বেশ কঠিন। কারণ আমেরিকার সঙ্গে যে হাত মিলিয়েছে, সেই হাজারো ডিম্যান্ড, হাজারো শর্ত মেনেই হাত মিলিয়েছে। আমেরিকার ঐতিহ্য হচ্ছে, আমেরিকা যদি না-চায় তাহলে হাত সরিয়ে নিতে তারা বিন্দুমাত্র ভাবে না। আর যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, মানে আমেরিকা যদি পাশ থেকে সরে দাঁড়ায় তাহলে কিন্তু নিজের দেশে, বাইরের দেশে যত ডলার থাকবে সবই দিনের শেষে ভ্যালুলেস হয়ে পড়বে, স্রেফ ছাপা কাগজ ছাড়া আর কিই?
রাশিয়ার অবস্থা দেখুন না! ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর কিভাবে আমেরিকা রাশিয়ার যাবতীয় ডলার নির্ভর কাজকম্মো একেবারে থমকে দিয়েছে। রাশিয়া তো চাইলেও আর ডলার ব্যবহার করতে পারবে না। সুতরাং ব্যাঙ্কের ভল্টে পড়ে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এবার আপনি একটা বিষয় ভাবুন। আমেরিকার এই চোখ রাঙ্গানি, আমি যা বলছি সেটাই মানতে হবে গোছের এই মানসিকতা সবসময় কি খাটে? আর খাটলেও সবাই মেনে নেবে কেন? মার্কিনী প্রশাসন মনে হয় মাঝেমধ্যে ভুলে যায় যে, বিশ্ব অর্থনীতি একা আমেরিকা চালায় না।
আমেরিকার অর্থনীতিতে কোনদিন অশনি সংকেত দেখা দেবে না, এমন মনে করাটা কিন্তু ভুল। আজ শুধু আমরা নই, যারা ইন্টারন্যাশনাল অর্থনীতি নিয়ে কিছুটা ওয়াকিবহাল, তারা প্রত্যেকেই স্টেট ইকোনমির কালো দিন নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু করে দিয়েছে। আমেরিকার জন্য আসতে চলেছে খুব খারাপ দিন। কিন্তু মার্কিনী প্রশাসন এমনভাবে নিজেদের প্রভাব ছড়িয়ে রেখেছে যে, আজ চাইলেও কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। সত্যিই…
ইদানিং একটা বিষয় খুব সামনে আসছে। আর সেটা হল ডি-ডলারাইজেশন। অর্থাৎ শুধু ডলারের ওপর একটা দেশের ইকোনমির ফিউচার ডিপেন্ড করবে না। অতএব, প্রয়োজন সেকেন্ড ওয়েআউট। তাই ডি-ডলারাইজেশনের জন্য কী করতে হবে? কিছুই না। ডলারের বিকল্প খুঁজে নিতে হবে। আর ডলারের বিকল্প হতে হবে সোনা। ভারতের ফরেক্স রিজার্ভে প্রায় ৮০০ টন সোনা রয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে এই সোনা মজুদের পরিমাণ ছিল ৭৬০.৪২ টন মতন। এই অর্থবর্ষে আরও ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে সোনা মজুদের পরিমাণ। আর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া পরিকল্পনা করছে যে, দিনে দিনে সোনা মজুদের পরিমাণ এখন শুধুই বাড়ানো হবে। একটাই কারণ, ডলারের আসা যাওয়া ঠিক করে যেমন হোয়াইট হাউজ। তেমনই সোনার দাম ডলারের ওপর নির্ভরশীল নয়। সোনার দাম নির্ভর করে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে সোনার ডিম্যান্ড এবং তার ফ্লো-এর ওপর। আর যে কারণেই স্বর্ণ সঞ্চয় অনেকটা বেশি নিরাপদ বলে মনে করছে ভারত। বর্তমানে ৮০০ টন সোনার দাম কত হতে পারে? প্রায় ৩ লক্ষ ৭৩ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা মতন। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৩৪ টনের বেশি সোনা কিনেছিল আরবিআই। আর এখন মার্কিন মুলুকের যা অবস্থা, তারপর স্রেফ ডলারের ওপর ডিপেন্ডেন্ট থাকাটা চরম বোকামি হবে। তার চেয়ে বরং সোনা মজুদের দিকে বেশি নজর দিলে আখেরে লাভবান হবে ভারত নিজেই। কারণ ডলার ডুবলেও অর্থনীতির ক্ষত সারাতে পারবে একমাত্র সোনাই।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ