Trending
বিশ্বগুরু হবার জন্য চিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে হবে। আর যদি বলি, তার জন্য চিনের পথই অনুসরণ করছে ভারত? অবশ্যই খুব সুদক্ষ বিদেশনীতির পরিচালনায়। খুব কি ভুল বলা হবে?
আপনাদের মনে হতেই পারে, আবার সেই চীন নিয়ে কচকচানি! বিশ্বাস করুন, আজ ভারত এবং চিন নিয়ে কথা বলার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু বিষয়টা শেয়ার না-করলেই নয়। পুরোটাই অনুমান সাপেক্ষ। কিন্তু অনুমান যদি সঠিক হয়, তাহলে বিষয়টা দাঁড়ায়, তোমার রণনীতি দিয়েই তোমায় কাবু করছি গোছের।
চিনের আগ্রাসী ডেভেলপমেন্ট আর সর্বস্তরীয় দাদাগিরি মনোভাব ফ্রান্স থেকে ফড়িয়াপুকুর সকলেই জানে। সব দেশ মেনে নিতে না-চাইলেও বাধ্য হচ্ছে বাস্তব পরিস্থিতি দেখে। এই মেনে নেওয়া বিষয়টা আবার কিছু দেশের জন্য বেশ আপত্তির। তারা দ্বিতীয় রণকৌশল সাজাচ্ছে। তার মধ্যে এক বাইডেন প্রশাসন আর অন্যটি মোদী প্রশাসন। চিনকে ল্যাং মারতে ভারত এবং আমেরিকা জোট বেঁধেছে। সঙ্গে এই জোটশক্তির অভিমুখ যে-দিকে সেটা চিনের দেখানো পথেই। আর দু’তরফ থেকেই ক্ষীরটি খেয়ে যাচ্ছে কে জানেন? ইউনাইটেড আরব এমিরেটস। আজকের প্রতিবেদনে ভারত, চিন, আমেরিকা এবং আরব এমিরেটসের অর্থনীতি এবং রাজনীতির টানাপোড়েন নিয়ে কয়েকটা থটস শেয়ার করব। তাই পুরোটা শুনে মতামত জানানোর অনুরোধ রাখলাম শুরুতেই।
শুরুতেই জনজোয়ার। তারপর স্টার্ট-আপ। চিনের পথেই ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হয়ে ওঠার সিদ্ধান্ত। আফ্রিকার মত মহাদেশে চিনের আধিপত্য কমাতে ভারতের প্রবেশ। আর এবার মিডল ইস্টের মেগা রেলওয়ে প্রোজেক্টে ভারতের বিনিয়োগ। চিনের দেখাদেখি নয়। তবে চিনের থাবা যেখানে, সেখানেই ভারতের ছাপ- সেটা চিনকে একটু ব্যতিব্যস্ত করে দেবে বৈ কি! একটি রিপোর্ট দাবি করেছে যে, আমেরিকা, সৌদি, ইউএই এবং ভারত মিলে এক মেগা রেল প্রোজেক্ট ডেভেলপ করার পথে হাঁটছে। শিপিং লেন মারফৎ এবার ভারত যুক্ত হতে চলেছে আরব রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে। স্বাভাবিকভাবে, এই সিদ্ধান্ত নাকি ভারতকে মিডল ইস্টের এক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে সামনে নিয়ে এলো। এই মেগা রেল নেটওয়ার্ক গালফ এবং আরব দেশগুলোকে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত করবে। সঙ্গে সেটাই টেনে নিয়ে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
এই প্রোজেক্টটি হাতেকলমে করবার জন্য সর্বপ্রথম দাবি তুলেছিল ইজরায়েল। সেটা গত বছর আইটুইউটু-র মিটিং-এ। এই আইটুইউটু গ্রুপটা ঠিক কী? সেটা ছোট্ট করে বলে দিই।
আইটু অর্থাৎ ইন্ডিয়া এবং ইজরায়েল। আর ইউটু হচ্ছে ইউএই এবং ইউএসএ। গ্রুপের এই সদস্যগুলির মূল লক্ষ্য হবে জল, এনার্জি, ট্রান্সপোর্টেশন, মহাকাশ, স্বাস্থ্য এবং খাদ্য সুরক্ষায় একসঙ্গে বিনিয়োগ করা এবং একে অপরের সহযোগিতা করা। গ্রুপের সদস্যরা সর্বপ্রথম ২০২২ সালে একটি সামিট করে। উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইয়ের লাপিড এবং ইউএই-র প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহইয়ান। এই মিটিং-এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ভারত জুড়ে ফুড পার্ক তৈরির জন্য ইউএই ইনভেস্ট করবে ২ বিলিয়ন ডলার। একইসঙ্গে হাইব্রিড রিনিউয়েবল এনার্জি প্রোজেক্ট নিয়ে আসা হবে। গুজরাতে ৩০০ মেগাওয়াট ক্যাপাসিটির হাওয়া এবং সৌর শক্তির ব্যাটারি এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম তৈরি করা হবে।
যাই হোক, মেগা রেল প্রোজেক্টটা কমপ্লিট করার জন্য এবার আসরে নামল খোদ মার্কিনী প্রশাসন। ইউএস ন্যাশনাল সিকিওরিটি অ্যাডভাইসার জেক সালিভান বিষয়টা যাতে তাড়াতাড়ি গতি পায় তার জন্য কথা বলেছেন অজিত ডোভালের সঙ্গে। কথাটা হয়েছে ন্যাসের মিটিং-এ। ন্যাস অর্থাৎ ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ সেক্রেটারিজ অফ স্টেটস। রিয়াধে এই বৈঠকটি ছিল। সেখানেই মেগা রেল প্রোজেক্টটা এগিয়ে নিয়ে যাবার ব্যাপারে উদ্যোগী হতে দেখা যায় আমেরিকাকে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাইডেন প্রশাসন সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জলবত তরলং করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। কারণ সৌদি আরবের রাজপুত্র এবং প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সলমন আল সাউদ-কে বেশ হাসিখুশি দেখা গেছে চিনের সর্বময় কর্তা শিং জিংপিঙের সঙ্গে। এখানেই আসছে এবার চিনের প্রসঙ্গ। চিন একটা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নিয়েছে। চিনের এই বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-কে নতুন সিল্ক রোড বলছে বিশ্ব। ইস্ট এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপ-কে কানেক্ট করার জন্য এক মহাসড়ক তৈরির মহাপরিকল্পনা চিনের। মনে করা হচ্ছে, ধীরে ধীরে ভবিষ্যতে এই প্রোজেক্ট ছড়িয়ে পড়বে আফ্রিকা, ওশানিয়া, লাতিন আমেরিকায়। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপি চিনের ইকোনমিক এবং পলিটিক্যাল ইনফ্লুয়েন্স তৈরি হবে। আর আমেরিকা সেটা চোখের সামনে বসে বসে হতে দেখবে নাকি? অতএব, চিনকে বাগে আনার ট্রোজান হর্স একমাত্র ভারত।
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের জন্য চিনের কাছে মিডল ইস্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। সদ্য এপ্রিলে, সৌদি আরবের মরুভূমি দিয়ে ছুটে গেছে চিনের বুলেট ট্রেন। এছাড়া সবথেকে বড় বিষয় হল, চিনের মধ্যস্থতায় শান্তি চুক্তি হয়েছে তেহরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে। বিশ্ব রাজনীতিতে চিনের এটা একটা মাস্টারস্ট্রোক বলছেন প্রথম সারির কূটনীতিক বিশেষজ্ঞরা। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, সৌদি আরব এবং আমেরিকার মধ্যেকার সম্পর্কটা তেমন মসৃণ নয়। মসৃণ না থাকার একটা কারণ হল, আমেরিকায় মিডটার্ম পোলের আগে সৌদির অঙ্গুলিহেলনে চালিত ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্ত তেলের আউটপুটে কাটছাঁট এবং দ্বিতীয় কারণ হল, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে রিয়াধের রাশিয়ার পাশে দাঁড়ানোটা। ফলে, আমেরিকা এবং সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্কটা এখন তেমন ভালো নয়।
তাহলে কি এবার ভারতের পালা? আমেরিকা এবং সৌদি আরবের ঠাণ্ডা সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে মোদী প্রশাসন? তবেই কি মেগা রেলওয়ে প্রোজেক্ট-টা আরও স্বাভাবিক হবে? তাহলে এখানে তো অনুমান কিছুটা মিলে যাচ্ছে। চিনের পথেই ভারত এখন ঠাণ্ডা সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কাজে নেমে পড়েছে। এতে দুই তরফের পক্ষ থেকেই লাভবান হবে মধ্যস্থতা করছে যে দেশ। আগে হয়েছে চিন, এবার পালা ভারতের?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ