Market
মহাভারতের অভিমন্যু চক্রব্যূহে প্রবেশের কৌশল জানতেন। জানতেন না চক্রব্যূহ থেকে বের হতে হবে কিভাবে? ভারতের ব্যবসায়ীরা জিএসটি চক্রব্যূহে সরকারিভাবে প্রবেশ করলেও অনেকে আবার বেরিয়ে এসেছেন নিঃশব্দে, নীরবে। জিএসটির জাল কেটে।
২০১৭ সালের পয়লা জুলাই রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় মধ্যরাতে সংসদে স্বাধীনতার ঘোষণার মত ঘন্টা বাজিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেন এক দেশ, এক কর নীতি। ২০১৭ থেকে ২০২১ এই চার বছরে জিএসটি কাউন্সিলের সভায় কার্যকরী হয়েছে হাজারও সংশোধন।
আসমুদ্রহিমাচল ভারতে ব্যবসায়ীদের জিএসটিতে যোগদান নেহাতই মন্দ নয়। দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন রীতিমতো পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়েছেন, ভারতে জিএসটি হোল্ডারদের সংখ্যা প্রায় ১.২৮ কোটি। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। জিএসটির চার বছর পূর্তিতে অর্থমন্ত্রী যে তথ্যটি প্রকাশ্যে আনেননি সেটি হল এই চার বছরে জিএসটি নাম্বার ছেড়ে দেওয়া ব্যবসায়ীদের সংখ্যাটাও নেহাতই কম নয়। প্রায় ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ব্যবসায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে ছেড়ে দিয়েছেন জিএসটি নাম্বার।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা তো শুধু হিমশৈলের চূড়া মাত্র। এর বাইরে লক্ষ লক্ষ ব্যবসায়ীরা আছেন যাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যারা কোনভাবেই মান্থলি কিংবা কম্পোজিট কোন স্কিমেই জমা করছেন না জিএসটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীদের মতে, হুট করে জিএসটি নাম্বার ছেড়ে দিলে তা রিফ্লেক্ট করছে ব্যবসায়ীদের সিবিলে। সিবিল খারাপ হওয়ার ভয়ে অনেকেই নামকাওয়াস্তে ধরে রেখেছেন জিএসটি। বেড়ে যাচ্ছে ফাইন এর উপর ফাইনের পাহাড়।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, জিএসটি চালুর ক্ষেত্রে সরকার বড্ড বেশি তাড়াহুড়ো দেখিয়েছে। এমনকি চালুর পরেও ব্যবসায়ীদের জন্য সেভাবে কোনরকম ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ শিবির পর্যন্ত ব্যবস্থা করতে পারেনি। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তো প্রথম দিন থেকেই জিএসটি নিয়ে সম্মুখ সমরে নেমেছেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। গতকাল যখন দিল্লিতে অর্থমন্ত্রী জিএসটির ঢাক পেটাচ্ছেন ঠিক তখনই বিজেপি সমর্থিত ব্যবসায়ীদের সংগঠন সিএআইটি কার্যত নস্যাৎ করে দিলেন অর্থমন্ত্রীর দাবিকে।
অধিকাংশ ব্যবসায়ী সংগঠনের বক্তব্য, এর থেকে পরোক্ষ কর ব্যবস্থা অনেক বেশি ভালো ছিল। এমনকি জিএসটিতে যাদের লেনদেন ৪০ লাখের কম তাদের ক্ষেত্রে সুবিধা হলেও মাঝারি কিংবা বড় ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই জিএসটি।
কর সরলীকরণের কথা বলে দেশে জিএসটি চালু হলেও প্রতিদিনই প্রায় নিত্যনতুন সংশোধন আনছে কাউন্সিল। ফলে করের হারও পরিবর্তিত হচ্ছে প্রায় প্রতি মাসেই। ব্যবসায়ীদের আরও অভিযোগ, জিএসটি পরিষদের আধিকারিকরাও নিজেরাও জানতে পারছেন না পরিবর্তনগুলি।
চার বছরের জিএসটির বর্ষপূর্তি সত্যিই ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্যকে কতটা মসৃণ করেছে তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে তেমনি প্রশ্ন থাকছে ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত জীবনে জিএসটি জনিত সিবিল কতটা প্রভাব ফেলছে।
ব্যুরো রিপোর্ট