Trending
ইউরোপ করছে ওপর চালাকি। আমেরিকার কাছে আপাতত ব্রাত্য তারা। কিন্তু মস্কো টলে যাবার পাত্র নয়। তার জন্য দায়ী কি ভারত এবং চিনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকাটা? জনসংখ্যার নিরিখে এই দুটো দেশই বিশ্বের সর্ববৃহৎ। আর যে কারণে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পরেও পুতিনের মুখে হাসি এবং আস্ফালন দুইই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একটা বিষয় পরিষ্কার। বিশ্ব অর্থনীতির চাকা চিন ছাড়া অচল। চিনের দাদাগিরি যে কারণে আমরা হামেশাই লক্ষ্য করে থাকি। তাই আমেরিকা, ইউরোপ এবার ভারতের সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটছিল। কিন্তু ভারত নিজেও যে বিশ্ববাজারে দাদাগিরি দেখানোর পথে। বিদেশমন্ত্রী এস.জয়শঙ্কর তাই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এবার গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হতে চলেছে ভারত। আর এটা রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এতটাই মজবুত করবে, যা আগে কোনদিন হয়নি। এই নিয়ে আশাবাদী মস্কো। এই নিয়ে আশাবাদী দিল্লি। কিন্তু বাণিজ্য কিসে হবে রুপি-রুবলে?
সম্প্রতি দু’দিনের জন্য ভারত সফরে এসেছিলেন রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং শিল্প-বাণিজ্যমন্ত্রী ডেনিস ভ্যালেন্টিনোবিচ মান্তুরভ। দেখা করেন বিদেশমন্ত্রী এস.জয়শঙ্করের সঙ্গে। দুই তরফের মধ্যে ভারত এবং রাশিয়ার বাণিজ্য নিয়ে কথা হয়। যার অনেকটাই ভারতের জন্য যেমন পজিটিভ, রাশিয়ার জন্যও তেমনই পজিটিভ। তার কারণ দুই তরফ থেকেই আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে যে ভারত এবং রাশিয়া দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের অঙ্ক আগামীতে আরও বৃদ্ধি পাবে। এখানে অবশ্য রাশিয়ার একটা ইন্টারেস্ট রয়েছে। মোদীর দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য অবশ্য ইউরোপ, আমেরিকাই দায়ী। আপাতত রাশিয়ায় ভালোরকম বাণিজ্য ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেই ঘাটতি কিছুটা হলেও মেটাতে পেরেছে চিন এবং অবশ্যই ভারত। ২০২২-এর মার্চ থেকে ২০২৩-এর মার্চ পর্যন্ত ভারত রাশিয়ার থেকে তেল কিনেছিল ৪৬ বিলিয়ন ডলারের একটু বেশি। সেই সময় ইউরোপ এবং মার্কিনী প্রশাসনের সকল রক্তচক্ষু, শাসানি উপেক্ষা করে ভারতের শিরদাঁড়া সোজা রাখার বিষয়টা দেখে অনেক দেশই তাজ্জব বনে যায়। ভারতের ফরেন পলিসি যে এখন আর আদুরে পলিসি নেই, সেটা টের পেয়ে গেছিল বহু দেশ। অর্থাৎ, ভারত এখন নিজের মত চলবে। এই হচ্ছে মোদ্দা কথা।
ভারতের এই একরোখা স্ট্যান্ডপয়েন্ট দেখে পুতিনের হাসি আরও চওড়া হয়। ভারতের সঙ্গে নিজেদের আরও জড়িয়ে ফেলার জন্য পলিসিতেও কিছু পরিবর্তন আসে। আর এবার ভারতের সঙ্গে সমস্ত রকম পণ্য আমদানি রফতানিতে হ্যাঁ তো বলেই দিয়েছে মস্কো। একইসঙ্গে জানিয়েছে, তারা এখন ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট করতেও আশাবাদী। আর যে কারণে সব ধরণের সেক্টর মারফৎ রাশিয়া এবং ভারতের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হোক এটাই তো কাম্য। অবশ্যই, আর যে কারণে মস্কো তাকিয়ে রয়েছে দিল্লির দিকে। আর এই সুযোগ কাজে লাগাতে চেয়েছে ভারত। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, দুই দেশের মধ্যে যদি বাণিজ্য হয় তাহলে সেটা রুপি-রুবলেই হতে পারে। কিন্তু এখনো কি রাশিয়া সত্যি রুপি-রুবলে আগ্রহী?
আমরা সকলেই জানি, বিশ্ব বাজারে ব্যবসা করার জন্য দেশের অর্থভাণ্ডারে ডলার বা পাউন্ডের পুঁজি থাকাটা প্রয়োজন। রাশিয়ার কাছে যা এখন তলানিতে এসে ঠেকছে। এই মুহূর্তে তাই রাশিয়ার পরিত্রাতা হয়েছে চিন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য জটে কাবু রাশিয়া তাই বেজিং-এর মতন একই পথে হাঁটছে নিউ দিল্লির সঙ্গে। কিন্তু রুপি-রুবলের ভবিষ্যৎ কিছুটা হলেও রয়ে গেল ধোঁয়াশায়। রাশিয়ার সঙ্গে চিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক যথেষ্ট মজবুত। দুই দেশের মধ্যে ২০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার ট্রেড রিলেশন এই অঙ্কে পৌঁছয়নি। চিনের সঙ্গে বিপুল অঙ্কের বাণিজ্য হবার কারণে দুই দেশের মধ্যে সেই ব্যালেন্সটা রয়ে গিয়েছে। আর যে কারণে চিনা মুদ্রায় লেনদেন করছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে আজ এই বিপুল অঙ্কের ট্রেড হচ্ছে না। তাই মস্কো মনে করছে, রুপি-রুবলের আদানপ্রদান হতেই পারে, কিন্তু তার জন্য চিনের মতন ভালোরকম ভারসাম্য আসা দরকার দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে। সেই জন্যই কি বিদেশমন্ত্রী এস.জয়শঙ্কর মস্কোর কাছে বার্তা পৌঁছে দিলেন, ভারত এবার গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হতে চলেছে? আপনার মতামত শেয়ার করুন কমেন্ট সেকশনে। প্রতিবেদনটি লাইক করুন এবং সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ