Trending
আপনি কি ওয়ান্ডারলাস্ট? পাহাড়ের শিখর থেকে সীমাহীন সমুদ্, কিংবা ধু ধু বালিয়ারি- কী আপনার হট ফেভরিট হলিডে ডেস্টিনেশন? তাহলে আজকের প্রতিবেদন আপনার জন্যই। সেই ক’বে রবি ঠাকুর লিখে গিয়েছেন,‘ কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, মনে মনে’। হারিয়ে যাওয়ায় যে সীমানা থাকতে নেই, সেই সংকেত তিনি দিয়ে গেছেন বহু আগেই। সে মনে মনে না থাকলেও স্বশরীরে ঘুরতে যাওয়ার বেশ কিছু আইনি নিয়মকানুন থাকেই। বিশেষত বিদেশ ভ্রমনের ক্ষেত্রে। তবে এবার সেই নিয়মের বরফ একটু একটু করে গলতে শুরু করেছে। লঘু হচ্ছে বিদেশ ভ্রমনের রেস্ট্রিকশন। বিদেশ ভ্রমনের ইচ্ছে মনে পুষে রেখে ভিসার জন্য লম্বা অপেক্ষার দিন শেষ। বিশ্বের ৫৭ টা দেশে ভিসা ফ্রি ট্র্যাভেলের গ্রিন সিগন্যাল পেল ভারত। নেপথ্যে একটাই কারণ। আরও শক্তিশালী হল ভারতীয় পাসপোর্ট।
এটা বছরের সেই মুহূর্ত, যখন গ্লোবালি নিজের দেশ কতটা শক্তিশালী হল, সেই সম্বন্ধে একটু জানকারি পায় সাধারণ মানুষ। বিচার হয় পাসপোর্টের নিরিখে। আপনারা অনেকেই হয়তো এতক্ষণে জেনে গেছেন যে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স। যেখানে জাপানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের তকমা এবার সিঙ্গাপুরের দখলে। ওহ! বলা হয়নি। পাকিস্তানের পাসপোর্টটা কিন্তু বিশ্বের চতুর্থ Worst পাসপোর্ট হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তবে, ভারতের জন্যে সুখবর আছে। হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্সের ৮০ নম্বর পজিশনটা ভারতের। তাই জন্যই বিশ্বের ৫৭টা দেশ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতের দিকে। দিয়েছে ভিসা অন অ্যারাইভালের আশ্বাস। তবে এই আশ্বাস ভারতের জন্য আদৌ সুখকর তো? সেই বিস্তারিত আলোচনাই সারব আজকের রিপোর্টে।
তবে সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স কী? কীভাবে এরা গননা করে এবং এই গণনা একটা দেশ সম্বন্ধে কি কি ইনফরমেশন দেয়, সেটা আগে বলে রাখা ভালো। যে দেশের নাগরিকরা ভিসা ছাড়া সবচেয়ে বেশি দেশে ভ্রমনের ছাড়পত্র পান, সেই দেশের পাসপোর্টকেই সবচেয়ে শক্তিশালী বলে ধরা হয়। আর প্রতি বছরই এই সংক্রান্ত একটি তালিকা প্রকাশ করে হেনলি। এইবছরেও তেমনটাই হয়েছে। এই বছর হেনলির ইনডেক্সের এক নম্বর জায়গাটা সিঙ্গাপুরের দখলে। ভিসা ফ্রি ট্র্যাভেলের স্বীকৃতি দিয়েছে ১৯২ টি দেশ। মানে, বিশ্বের ১৯২ টা দেশ সিঙ্গাপুরকে ভরসা করে। আর সেখানে ভারতের জন্য সংখ্যাটা মনে আছে তো? ৫৭। এবার আপনারাই বলুন ১৯২ বড় নাকি ৫৭?
দেখুন সিঙ্গাপুরের এই অ্যাচিভমেন্টটার সাপেক্ষে একটা যুক্তি আছে। সিঙ্গাপুর একটা ট্রাস্টওরদি কান্ট্রি। প্রচুর বিজনেসক্লাস লোকজনের আনাগোনা লেগেই থাকে। চিন, আমেরিকা, রাশিয়া বা অনান্য দেশের ওপর বা সেই দেশ থেকে আসা ট্যুরিস্টকে হয়তো ততটাও বিশ্বাস করা যায়না। তাই সিঙ্গাপুর এখন সবচেয়ে শক্তিশালী, পাসপোর্টের নিরিখে। কিন্তু আমার প্রশ্নটা অন্য জায়গায়। ভারতের সঙ্গে তো অনেক দেশেরই বেশ সুসম্পর্ক। বেশ কিছু দেশের সঙ্গে মাখমাখ বন্ধুত্বও আছে। তাহলে এমনটা হওয়ার কারণ কি? বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম জিডিপি রয়েছে ভারতের। সবচেয়ে বেশি চাষবাস হয় যেই দেশে- তার জন্য ভিসা ফ্রি এন্ট্রি মাত্র ৫৭ টা দেশে?
প্রথমত, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভারতের ব্যাপারে হেলথ অ্যাডভাইজরি জারি করে। ভারত থেকে কোন রোগ যদি সেই দেশে স্প্রেড করে যায়, সেই জন্য আগে থেকেই রেস্ট্রিকশন দিয়ে দেওয়া হয়। যেটা অবশ্যই একটা ভুল সিদ্ধান্ত। দ্বিতীয়ত, ভারতের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া একাধিক টেরর অ্যাটাক। তাই, ইন্ডিয়ান ট্র্যাভেলাররা আদৌ কতটা সেফ সেটা জানতে ট্র্যাভেলারদের বিশেষভাবে সিক্যুরিটি চেক করা হয়। যেটা আবারও একটা ভুল ডিসিশন। তৃতীয়ত, ইল্লিগাল মাইগ্রেশন। দেখুন ভারতীয়দের ইন্টেলেকচ্যুয়ালিটির কদর যে বিশ্বজোড়া সেটা না বললেও চলে। তবু মাঝেমধ্যে এসব পজিটিভ খবর মনে করে নেওয়া ভালো। তাতে মনের জোড় বাড়ে। ট্যালেন্ট এবং এক্সপার্টাইজের জেরে গুগল, মাইক্রোসফট বা অনান্য বড় বড় সংস্থার মাথায় বসে আছে ইন্ডিয়ানরা। সেটা বাকী দেশ মেনে নেবে কেন? আর এই বিষয়টা নিয়ে যে কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি হবে, সেটাও নতুন কিছু নয়। তাই অনেক দেশই মনে করে, ভিসা না পেয়ে ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া সহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে ইন্ডিয়ানদের ইল্লিগাল মাইগ্রেশন হয়।
আর লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট কারণটা হল, কলোনিয়াল হ্যাংওভার। আজ হেনলি ইনডেক্সে ইন্ডিয়ার লো র্যাঙ্কিং-এর অন্যতম কারণ হল এই কলোনিয়াল হ্যাংওভার। আর এই কলোনিয়াল হ্যাংওভার থেকে ভারতিয়রা বেরোতে পারেনি বলেই হয়তো ইংরেজি ভাষার প্রতি মোহোটা জাপটে ধরে রেখেছে দেশবাসীকে। দেখুন, গ্লোবাল ভিলেজের দুনিয়ায় ভারতীয় সংস্থাগুলো যেমন বিদেশের বাজারে ব্র্যাঞ্চ ওপেন করছে, তেমন বিদেশের সংস্থাও তো ভারতের বাজারে আসছে। এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় বিভিন্ন দেশের সংস্থা আসছে। কাজেই শুধু ইংরিজি নিয়ে বড়াই করলে চলবে? বাকী দেশেগুলোর জন্য তো সেই ভাষাও জানতে হবে। এই বিষয়ে জানিয়ে রাখা ভালো, বিশ্বের মাত্র ৬.২% মানুষ ইংরেজি ভাষায় কথা বলে। তাই ইংরেজি জানি মানে আমি বিশ্বজয় করে ফেলেছি- এইধরণের কলোনিয়াল মাইন্ডসেট থেকে বেরোতে হবে। তাতে আখেরে ভারতীয়দেরই লাভ। আর তাছাড়া একাধিক বিদেশী ভাষা জানা থাকলে চাকরি বাজারে কদর বাড়ে। কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডের নানা ধরণের কাজের দরজা খোলে।
যাই হোক, ৫৭ টা দেশে ভিসা ফ্রি ভ্রমণের খবর যাদের আনন্দ দিয়েছিল তাদের বলে রাখি, বাকী ১৭৭ টা দেশ কিন্তু ভারতকে ভিসা ফ্রি এন্ট্রি দিতে রাজি হয়নি। এবং তাদের মধ্যে রাশিয়া বা আমেরিকার নামও রয়েছে। এই দুটো দেশের নাম স্পষ্ট করে বলার কারণ আছে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিচারে তো মোদী মহাশয় এই দুই দেশের নামই করেন বারবার। তাই আর কি! তবে আশা করি, ৮৫ থেকে ৮০ টে যখন র্যাঙ্কিং কমিয়ে আনতে পারা গেছে তখন ভবিষ্যতে পরিস্থিতি বদলাবে। আদৌ বদলাবে তো? আচ্ছা এই র্যাঙ্কিং কমার ক্ষেত্রে চন্দ্রযান-৩ এর সফল উৎক্ষেপণ কী কোন কারণ হতে পারে?
বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।