Trending
সংসদ হাঙ্গামার ছবিটা এখনো দগদগে। প্রশ্ন উঠে গিয়েছে নিরাপত্তা নিয়ে। মোদী সরকার ব্যর্থ- আপাতত এই সুর চড়িয়েছে বিরোধী দলগুলো। এদিকে পাক অধিকৃত কাশ্মীর ফিরিয়ে আনা নিয়ে বিজেপি সরকার কথা বলতে শুরু করে দিয়েছে। তাদের বক্তব্যের রেশ টেনে বিরোধীরা সারকাস্টিক ওয়েতে রিপ্লাই দিয়েছেন। বিষয়টা এমন, হেলে ধরতে পারে না আবার কেউটে ধরার প্ল্যান। মানে সংসদের নিরাপত্তা যেখানে বেআব্রু, সেখানে কাশ্মীর ফিরিয়ে আনা দূর কি বাত। যাই হোক, সেটা একেবারে অন্য প্রসঙ্গ। এই বিষয়ে আবার রাহুল গান্ধী একটু অন্য সুরেই বলেছেন, সিকিউরিটি ব্রিচ তো হয়েছেই। কিন্তু যারা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তাদের সংসদ হানার নেপথ্যে কী কারণ রয়েছে? বলা হচ্ছে নাকি বেকারত্বের জ্বালা থেকেই এই সকল কাণ্ডগুলো ঘটিয়ে ফেলেছেন তারা। সংসদ হানাদারদের নিয়ে এখন তদন্ত চলছে জোরকদমে। তবে, সব প্রশ্নের সেরা প্রশ্ন এখন একটাই। দেশে বেকারত্ব এখন কোন জায়গায়? আলোচনা শুরুর আগে একটা তথ্য। আমাদের সব খবর এখন পেয়ে যাবেন বিজনেস প্রাইম নিউজের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে। ফলো করুন আমাদের বিজনেস প্রাইম নিউজের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল।
সংসদে হানা দিয়েছেন কারা? সাগর শর্মা, মনোরঞ্জন ডি, নীলম আজাদ, অমল শিন্ডে, ভিকি শর্মা এবং ললিত ঝা। গত বুধবার লোকসভায় অধিবেশন চলাকালীন এই পুরো ঘটনাটি ঘটে। দুপুর ১টা নাগাদ এই পুরো ঘটনাটি ঘটে। তদন্তে জোর দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন তাঁরা। তদন্তের স্বার্থে আর মোটিভ জানার জন্য গোয়েন্দা দফতর, পুলিশ সকলেই একযোগে কাজ করছেন। রাজ্যে রাজ্যে ছুটোছুটি করছেন সকলে। পিঁয়াজের খোসার মত একের পর এক লিঙ্ক তাদের হাতে আসছে, সেগুলো তাঁরা খুলছেন তারপর পৌঁছে যাচ্ছেন সেখানে। সংসদে হানার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ললিত ঝা, তার সঙ্গে যোগ রয়েছে আবার বাংলার। সেই নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে বিরোধী দল। বিজেপি সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছে না। খেয়াল রাখবেন, হানাদারদের সকলে কিন্তু এক রাজ্য থেকে আসেন নি। কেউ এসেছেন উত্তরপ্রদেশ থেকে, কেউ এসেছেন কর্ণাটক থেকে, কেউ এসেছেন হরিয়ানা থেকে তো আবার কেউ এসেছেন মহারাষ্ট্র থেকে। এদের অনেকে আবার উচ্চ শিক্ষিত। কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ এমফিল ডিগ্রি নিয়ে বসে আছেন। আর তাঁদের মুখে একটাই কথা বেকারত্ব। পড়াশোনা করেও জোটে নি চাকরি। আর যে কারণে সংসদে হানা। সংসদ হচ্ছে আমাদের গণতন্ত্রের মন্দির। সেই মন্দিরের পুরোহিতরা হলেন সাংসদ। যেখান দিয়ে একটা মাছি গলার সুযোগ থাকার কথা নয়, সেখানে এমন পরিস্থিতি তৈরি হল কী করে? প্রধানমন্ত্রী মোদী কড়া ভাষায় বিষয়টা দেখতে বলেছেন এবং রাজনীতি না করার আর্জি জানিয়েছেন বিরোধীদের। এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে যত যাই হোক, যতই প্রতিবাদ বা আন্দোলন দেখানোর চেষ্টা করা হোক, সেটা সংসদ ভবনে করা একেবারেই অনুচিত। বিজনেস প্রাইম নিউজ এই ধরণের প্রতিবাদের তীব্র বিরোধিতা করছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে যে সত্যিই যদি বেকারত্ব আসল কারণ হয়, তাহলে মোদী জমানায় ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির বেলুন আবার চুপসে যাবে নাতো? কারণ বেকারত্ব যে ভারতে দিনে দিনে আগ্রাসী চেহারা নিচ্ছে।
সরকারি সমীক্ষা থেকে একটা রিপোর্ট হাতে এসেছে। যেখানে বলা হচ্ছে, প্রতি ১০০ জন স্নাতকের মধ্যে ১৩ জন এখন বেকারত্বের জ্বালায় ধুঁকছেন। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রক বলছে, গত বছর জুলাই থেকে এই বছর জুন পর্যন্ত যে সমীক্ষা করা হয়েছে সেখানে লক্ষ্য করা গিয়েছে, স্নাতকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৩.৪ শতাংশ। এক্সপার্টসরা মনে করছেন, বেকারত্ব বা আনএমপ্লয়মেন্ট রেট ১০ ছাড়ালেই সেটা অ্যালার্মিং। সেখানে এই বেকারত্ব যে ভয়াবহ ছবিটাই ফের স্পষ্ট করে দিচ্ছে। গলার পারদ চড়িয়েছে বিরোধীরা। এদিকে বিজেপি সরকার দাবি করছে, ভারতে যে বেকারত্বের হার নেমে এসেছে ৩.২ শতাংশে। আর তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি দখলের লড়াইতে নেমে বিজেপি হাতিয়ার করেছে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিকে। আর সেই কথাটি অনেকের কাছে সেগুড়ে বালির মত ঠেকছে। তার মধ্যে অন্যতম রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। তিনি বরাবরই ইকোনমির টার্মসে মোদী বিরোধী মনোভাব ফুটিয়ে তুলেছেন বলে দাবি করছেন অনেকে। বর্তমান রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যে সকল পলিসি রয়েছে বা নেওয়া হচ্ছে, তার সবকটাই যে আরবিআই-এর এই প্রাক্তন গভর্নরের পছন্দ হচ্ছে তেমনটা কিন্তু নয়। ফলে তিনি বলছেন, ২০২৫ এর মধ্যে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পৌঁছে যাওয়া বেশ কঠিন। তার জন্য বৃদ্ধির হার থাকতে হবে ১২-১৫ শতাংশের কাছাকাছি। কোভিডের আগে থেকে যে বৃদ্ধি ছিল ৪ শতাংশ মতন, সেটা পরবর্তীকালে বেড়ে দাঁড়ায় ৬ শতাংশে। কিন্তু এরপরেও ৫ ট্রিলিয়নের স্বপ্ন সত্যি করা কঠিন।
পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে থেকে একটা তথ্য পরিষ্কার সামনে চলে এসেছে। বিরোধীরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী ২ কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিশ্বাস কুড়িয়ে বসেছেন প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে। কিন্তু বাস্তব ছবিটা যে একেবারে উল্টো হচ্ছে। শিক্ষিত ডিগ্রিধারী তরুণ-তরুণীর হাতে চাকরি নেই। দিনে দিনে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। ফলে মোদী জমানায় বেকারত্ব বেড়েছে একেবারে সর্বোচ্চ গিয়ারে। এদিকে মূল্যবৃদ্ধি আটকাতেও খানিক ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্রের কর্তারা। ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়ছে, খাবার দাবার থেকে ওষুধ সব পণ্যের দাম বেড়েছে বেশ। আর তেলের কথা না হয় বাদই দিলাম। এসব সামাল দেবার জন্য তাই রঘুরাম রাজন সঞ্চয়ে জোর দিতে বলছেন। তাঁর বক্তব্য একটাই। ১৪০ কোটির বেশি মানুষ বসবাস করেন ভারতবর্ষে। এমপ্লয়মেন্ট জেনারেট করতে হবে এমনভাবে যাতে সকলেই দিনের শেষে চাকরি করতে পারেন। কর্মসংস্থানে গতি এলেই বিরোধীদের থোঁতা মুখ ভোঁতা হয়ে যাবে। কিন্তু চাকরির ছবিটাই যে বেজায় অসাম্য। আর শুধু রঘুরাম রাজন নন। প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসুর গলাতেও শোনা গিয়েছে এক সুর।
পড়াশুনো করে চাকরি না পাবার হতাশা আরও অনেকটা বেড়ে যায়। মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। তখন শুরু হয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। বাংলায় যেমন ধর্না চলছে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে, হাজার দিন পেরিয়ে। এক্ষেত্রেও কি তেমনটাই হল? সংসদে হানা দেওয়ার এক এবং একমাত্র কারণ কি শুধুই বেকারত্ব? সংসদে হানা চালিয়ে এভাবে প্রতিবাদ জানানোর ঘোর বিরোধী আমরা সকলেই। আবার এটাও তো ঝেড়ে ফেলে দেবার মত নয় যে বেকারত্বের জ্বালা থেকেই পুরো কর্মকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। সত্যিটা কি সেটা জানা যাবে তদন্ত যত এগোবে। কিন্তু বেকারত্ব যে মোদী ম্যাজিক ক্রমশই ফিকে করছে তার জন্য অপেক্ষার প্রয়োজন নেই। আপনারা কি মনে করেন? মতামত জানান কমেন্ট বক্সে, সঙ্গে লাইক শেয়ার মাস্ট। আর নতুন হলে ভুলবেন না সাবস্ক্রাইব করতে আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ