Trending
মেক ইন ইন্ডিয়া, আত্মনির্ভর ভারত। লক্ষ্য আমদানির অঙ্ক ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা। বিশ্ব বাজারে জোর প্রতিযোগিতা তৈরি করে রফতানির অঙ্ক ক্রমশ বাড়িয়ে তোলা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই স্বপ্ন পূর্ণতা পাচ্ছে ক্রমশ। তার জন্য বিশ্ব বাজারে দেশীয় পণ্যের চাহিদা বাড়াটা খুবই প্রয়োজন। একইসঙ্গে কোনঠাসা করার প্রয়োজন রয়েছে চিনের। বিশ্ব মার্কেটে চিনের দাদাগিরি কমিয়ে আনার সেই লক্ষ্য কিছুটা হলেও ভারত করতে পারছে, কারণ ধীরে ধীরে বিদেশের বাজারে চাহিদা বাড়ছে ভারতীয় খেলনার। বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতীয় খেলনার চাহিদা যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে একপেশে হয়ে যাবে চিনের দাদাগিরি। আপাতত সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যেতে চাইছে ভারত।
সম্প্রতি একটি তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, ভারতের বাজারে খেলনার আমদানি অনেকটাই কমেছে। পরিবর্তে খেলনা প্রস্তুতকারকদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের যে বিশেষ উদ্যোগ এই ব্যপারে নজরে আসছে, সেখান থেকে পরিষ্কার হচ্ছে বিশ্ব বাজারে ভারত এখন দাদাগিরি দেখানোর পথে। কিভাবে? জানা যাচ্ছে, আমেরিকা এবং ইউরোপে নাকি দিন দিন ভারতের তৈরি খেলনার চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী। তারা ভারতীয় খেলনা কিনতে ভালোরকম আগ্রহ দেখাচ্ছে। আর সেটা চিনের খেলনা মার্কেটকে যথেষ্ট কোনঠাসা করে দেবার ক্ষমতা রাখে। এই আগ্রহ তৈরি হয়েছে বলাই যায়, কারণ আমেরিকা সহ ইউরোপের যারা অধিকাংশ খেলনা বিক্রেতা রয়েছে, আজ তারা দেশীয় খেলনা প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে জোর আলাপ আলোচনা চালাতে মুখিয়ে রয়েছে। তার জন্য বিদেশের বাজারে কি কি নিয়ম এবং শর্ত মানা যায়, সেই ব্যপারে দেশীয় সংস্থাগুলির সঙ্গে কথাও বলতে চাইছে।
কোন কোন ধরণের খেলনার প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ তৈরি হচ্ছে? একঃ বিভিন্ন ধরণের বৈদ্যুতিক খেলনা এবং দুইঃ বিভিন্ন ধরণের ইনডোর-আউটডোর গেম। সূত্রের খবর, আমেরিকার একটি সংস্থা ভারতীয়দের কাছ থেকে ৪০ কোটি ডলার খেলনা কেনার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে। ভারতীয় মুদ্রায় অঙ্কটা পৌঁছে যেতে পারে প্রায় ৩২৮০ কোটি টাকায়। আমেরিকার মতন ইতালির একটি সংস্থাও দেশীয় খেলনা কিনতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে অবশ্যই, তার জন্য ভারতীয় খেলনা প্রস্তুতকারকদের বিদেশের বাজারে খেলনা তৈরির মাপকাঠি কী কী রাখতে হবে এবং একইসঙ্গে কোন কোন শর্ত পূরণ করতে হবে, সেই বিষয়ে আরও বিস্তারিত কথা তারা বলতে চায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আমেরিকা বা ইউরোপে যদি খেলনার চাহিদা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হয় তাহলে সেটা দেশীয় খেলনা প্রস্তুতকারকদের জন্য যথেষ্ট পজিটিভ একটা দিক। এর ফলে, বিশ্বমানের খেলনা তৈরি করতে যে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে সেই সব বিষয়গুলো নিয়ে দেশীয় প্রস্তুতকারকদের মধ্যে দুর্দান্ত একটা প্রশিক্ষণ হয়ে যাবে। যা চিনকে টপকে দেবার জন্য ভালোরকম অনুঘটকের কাজ করবে।
২০২১ সালে বিশ্ব বাজারে খেলনার মার্কেট ছিল ৭৩.২ বিলিয়ন ডলার মতন। এর মধ্যে বাজার দখলে এগিয়ে রয়েছে চিন। প্রায় ৬৬.২%। জানা গিয়েছে চিন শুধুমাত্র খেলনা ম্যানুফ্যাকচার এবং রফতানি বাবদ আয় করেছিল ৪৮.৫ বিলিয়ন ডলার। শুধুমাত্র খেলনা রফতানি করে এই বিশাল অঙ্ক কোষাগারে ঢোকাতে এখনো কিছুটা সময় লাগবে ভারতের। তবু চেষ্টার তো কমতি নেই। তার একটা পরিসংখ্যান দিলেই বিষয়টা স্পষ্ট হবে। ২০১৩-১৪ সালে যখন ভারতের খেলনা বাবদ আয় এসেছিল মাত্র ১৬৭ কোটি টাকা মতন, সেখানে ২০২২ সালে খেলনা রফতানি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে খেলনা রফতানির অঙ্কটা পৌঁছে যায় ২,৬০১ কোটি টাকায়। একইসঙ্গে ঐ অর্থবর্ষেই ভারত খেলনার আমদানি প্রায় ৭০% কমিয়ে করে ৮৭০ কোটি টাকা।
বলাই বাহুল্য, আজ চিনের দাদাগিরি কমাতে ভারত সরকার খেলনা প্রস্তুতকারকদের জন্য অনেক সুবিধে করে দিচ্ছে। ভোকাল ফর লোকাল তার মধ্যে একটা টনিক হিসেবে কাজ করছে। ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে সেভাবেই খেলনা তৈরিতে জোর দিচ্ছে সরকার। তার জন্য সরকার একটি ফিসকাল ইনসেনটিভ স্কিম- পিএলআই চালু করেছে। দেখা হচ্ছে, কোয়ালিটি কন্ট্রোলের বিষয়টা। একইসঙ্গে সরকার ২০২০ সালে খেলনা আমদানির জন্য ইমপোর্ট ডিউটি ২০% থেকে ৬০% বাড়িয়ে দিয়েছিল। আর সেটা দারুণভাবে কাজ করেছে, চিনের থেকে খেলনা আমদানি কমিয়ে আনার। স্বাভাবিকভাবেই, খেলনা আমদানিতে এসেছে অনেকটা ধাক্কা। আর যে কারণে দেশীয় প্রস্তুতকারকদের হাত ধরেই আজ বিশ্ব বাজারে ডমিনেট করতে চলেছে ভারত। আপনার কি মনে হয়? বিশ্ব বাজারে খেলনা নিয়ে চিনের যে দাপট সেটা কি অচিরেই কমাতে পারবে ভারতের ম্যানুফ্যাকচাররা? মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন, লাইক করুন এবং অবশ্যই সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ