Trending
দেশের মধ্যে মোদী সরকারের বিরোধিতা যেই করুক না কেন, বিদেশে পা ফেলেই মোদী সকলকে দেখাচ্ছেন কাঁচকলা। অস্ট্রেলিয়ায় মোদীর সফর দেখুন, পাপুয়া নিউ গিনি-তে মোদীর আকাশছোঁয়া বসিজম। সর্বত্র মোদীর হুঙ্কার। ইন্ডিয়ান ইকোনমির জন্য মোদী সরকার যা করছেন, বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধানরা এমনটা নাকি কখনো দেখেন নি। তাই মোদীর জয়ধ্বনি করছে ইউরোপ, আমেরিকা। এছাড়া আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মত প্রতিষ্ঠান। নতুন নতুন ট্যাগ বসে যাচ্ছে কখনো মোদীর পাশে তো কখনো ইন্ডিয়ান ইকোনমির পাশে। এবার সেখানেই নতুন একটা কয়েনেজ ব্যবহার করলেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট বোর্জ ব্রেন্ডে। তিনি ইন্ডিয়ান ইকোনমিকে তুলনা করলেন স্নো বল এফেক্টের সঙ্গে। বিজনেস প্রাইম নিউজের প্রিয় দর্শকদের জন্য বলছি, জানেন এই স্নো বল এফেক্ট-টা কী?
বরফের গোলা যখন ওপর থেকে নিচের দিকে গড়াতে শুরু করে, তখন কী হয়? ভেবে দেখুন। সোজা বিষয়। যত গড়াবে, ততই তুষারের গোলা আরও বৃহৎ হতে শুরু করে। বর্তমান ইন্ডিয়ান ইকোনমির অবস্থা নাকি অনেকটা সেরকমই। বলছেন, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট বোর্জ ব্রেন্ডে। আর এটাই নাকি স্নো বল এফেক্ট। তাঁর বক্তব্য, বর্তমানে মোদী ম্যানিয়ায় ভুগছে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আর ছোট ছোট দেশগুলো। যাদের আশা ভরসা এখন ইন্ডিয়া। ভারত এখন বিশ্ব পুঁজিপতিদের এপিসেন্টার হয়ে উঠছে। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, ডিজিটাল বিপ্লব ঘটে যাবার পর নাকি ভারত একেবারে নতুন চেহারা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। দুর্দান্ত বিজনেস এনভায়রনমেন্ট তৈরি হয়েছে। স্টার্ট আপের সংখ্যা বেড়েছে, যা দেশের অর্থনীতিকে আরও অনেকটা টেনে নিয়ে যাবার কাজটা খুব মসৃণ গতিতে করছে। ইকোনমিক রিফরমেশন এসেছে দেশের অর্থনীতিতে। আর যে কারণে বিশ্ব জুড়ে বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা অনেক অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আর যত বেশি বিনিয়োগ তত বেশি কর্মসংস্থান।
ভারতের ইকোনমি এখন অনেকটাই স্ট্রং। এটা আমার কথা না, বিশ্বের বহু রাষ্ট্রপ্রধানের কথা। তাঁরা বলছেন, ইন্ডিয়ান ইকোনমি আগামী বছরগুলোয় সবথেকে বেশি বৃদ্ধি পাবে। দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক আরবিআই ক্যাপ্টেন শক্তিকান্ত দাস আশাবাদী যে, দেশের ইকোনমিক গ্রোথ পৌঁছে যেতে পারে ৭ শতাংশে। তবে বিশ্ব বলছে অন্য কথা। তারা অতটা না এগোলেও ৬ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে বলেই তাঁদের ধারণা। দেশের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট শুরু হয়েছে কোভিডের পর থেকে। অতিমারি যে সকল দেশে কোপ মেরেছে, সেই দেশের সোশ্যাল এবং ইকোনমিক স্টেবিলিটি একেবারে ছাড়খাড় করে দিয়েছে। তখন অপেক্ষাকৃত একটু শক্তিশালী দেশগুলো এদের সাহায্য করবে বলে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এমন হয়েছে যে, অন্য দেশকে বিপদের সময় সাহায্য করতে গিয়ে একেবারে ধসে গেছে তারা নিজেরাই। ফাঁকা হয়ে গেছে তাদের কোষাগার। কিন্তু ভারতের ব্যপারে খুব পজিটিভ থিঙ্কিং ধরে রেখেছেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট বোর্জ ব্রেন্ডে। তাঁর বক্তব্য, এই সময় মোদী গভর্নমেন্ট এমন দুর্দান্ত কিছু পরিকল্পনা নিয়েছেন যে অন্যকে সাহায্য করেও নিজের ভাঁড়ার দিনের শেষে ফাকা হয়ে যায়নি। হাত পাততে হয়নি অন্য দেশের কাছে। ফলে ঋণের ফাঁদে তো ভারত পড়েই নি, এমনকি অন্য দেশকে সাহায্য করেও নিজের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ধরে রেখেছি আমরা। আর এখন তো বিশ্ব জুড়ে ভয়াবহ মন্দা আসতে শুরু করেছে। সুতরাং ইউরোপের বেশ কিছু দেশ ইতিমধ্যেই প্রমাদ গুনছে। আমেরিকার অবস্থাও কিছুটা তথৈবচ। আর এতো কিছুর মধ্যেও ভারতের ইকোনমিক গ্রোথ অন্য সব দেশের থেকে ভালো হবে, সেটা সত্যিই যেন অভূতপূর্ব ব্যপার।
আইএমএফ বা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মাথারা মনে করছেন, দেশের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্টের জন্য মোদী সরকার বিনিয়োগ করছে হাত খুলে। ভারতের মত সুবিশাল দেশে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে। শিক্ষা থেকে দক্ষতা সবকিছুতেই দুর্দান্ত বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। সত্যিই তো বিনিয়োগ না হলে কি করে নির্দিষ্ট কোন সেক্টরের উন্নতি সম্ভব? কিন্তু মোদী জমানায় সব কিছুই হচ্ছে। অতএব, মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায় গোছের পরিস্থিতি আজ সর্বত্র।
প্রতিবেদনটা এখানেই শেষ করে দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু একটা বিষয় মাথায় এলো বলে কয়েকটা কথা বলে নেওয়া প্রয়োজন। মোদী সরকারের যতই আহ্লাদী প্রশংসা করা হোক, আপনারা কি কখনো ভেবে দেখেছেন, মোদী জমানায় রাইজিং ইন্ডিয়া কিন্তু বিশাল বড় গেম চেঞ্জার হয়ে উঠছে জিও পলিটিক্স এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমির জন্য? সেই চেঞ্জ ভারত আনছে না। আনছে রাশিয়া এবং চিন। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। যখন ইউরোপ এবং আমেরিকা ভারতকে পাশে পাবার জন্য শুধু তারিফ আর তারিফ করে চলেছে, তখন স্ট্র্যাটেজিক্যালি ভারতের ডানা কিছুটা ছেঁটে দেবার চেষ্টা করছে ইন্ডিয়ার জিগরি দোস্ত রাশিয়া। তাও আবার কার সঙ্গে হাত মিলিয়ে? জিংপিং আর পুতিনের মধ্যে এখন দুর্দান্ত ফ্রেন্ডশিপ। একটা তথ্য দিয়ে রাখি, ইন্ডিয়ার থেকেও আরও কম দামে ব্যারেল ব্যারেল তেল প্রতিদিন চিনে পাঠিয়ে দিচ্ছে রাশিয়া। দুই দেশের মধ্যে বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এমন জায়গায় যাচ্ছে যে, আগে কোনদিন যা কেউ দেখে নি সেটাই হচ্ছে ভারতের সঙ্গে। অতিরিক্ত আমেরিকা প্রীতি, ইউরোপপ্রীতিই কি ধীরে ধীরে রাশিয়ার সঙ্গে এই প্রথমবারের মত দূরত্ব তৈরি করে দিচ্ছে ভারতের সঙ্গে? কেন এবং কিভাবে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা যাচ্ছে, কেন রাইজিং ইন্ডিয়ার গতি থামাবার জন্য চিন এবং রাশিয়া একযোগে দাঁড়ালেই সম্ভব সেটা বলব অন্য একটা প্রতিবেদনে। আপনারাই বলুন, ইন্ডিয়ান ইকোনমির এই স্নো বল এফেক্ট ভবিষ্যতে বড় কোন ফাঁড়া তৈরি করবে না তো? কেন আমেরিকা এবং ইউরোপের নজরে এখন শুধুই ভারত
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ