Trending
রেকর্ড উচ্চতায় নিফটি। শেয়ার বাজারে জোয়ার আনছে সেনসেক্সও। বিগত কয়েকদিন ধরেই ইনভেস্টরদের ভরিয়ে দিচ্ছে শেয়ার বাজার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের শেয়ার বাজার এখন সর্বকালের সর্বচ্চ উচ্চতায় দাঁড়িয়ে। সেনসেক্স ছুঁয়েছে ৬৭ হাজারের ঘর। ১৯,১১১ পয়েন্টে রিচ করে সকলকে তাজ্জব বানিয়ে দিয়েছে নিফটি। আপনিও কি ইনভেস্ট করেছেন? তাহলে আপনাকে অভিনন্দন। যান, এবার হাসি হাসি মুখে নিজের পোর্টফলিওটা একবার চেক করে আসুন। কিন্তু শেয়ার বাজারের এই আকস্মিক উত্থান কেন? ঠিক কি কারণে তড়তড় করে বাড়ছে শেয়ারের সূচক? এটা কি বিনিয়োগের সঠিক সময়? ভারতের ইকোনমিতে এর কেমন প্রভাব পড়তে পারে? জানতে হলে চোখ রাখুন সম্পূর্ণ প্রতিবেদনে।
শুরু করা যাক শেয়ার বাজারের এই আকস্মিক গতি সম্বন্ধে দু-চার কথা বলে। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্সক্লুসিভলি ফরেন ইনভেস্টমেন্টের জন্যই শেয়ারে সূচক বাড়ছে হু হু করে। মার্চ থেকেই সেই সূচকের গতি ঊর্ধ্বমুখী। ঘরে এসেছে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট। এপ্রিল থেকে জুনে হিসেব করলে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার ফরেন ইনভেস্টমেন্ট এসেছে ভারতে। মানে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার করে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে পছন্দের বাজার হয়ে উঠেছে ভারত। কিন্তু কেন? পরিস্থিতি তো এমন ছিল না। করোনা অতিমারির পরেও যখন বাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল তখন বিদেশী বিনিয়গকারিরা চিনের বাজারে কেনা জিনিস বিক্রি করছিল ভারতের বাজারে। বাট এখন সিচ্যুয়েশন একদম উল্টো। ভারত থেকে কিনে তারাই এখন বিক্রি করছে চিনের বাজারে। কেন? কারণ ভারত হচ্ছে শিক্ষিত আর কর্মদক্ষ যুবসমাজের আঁতুড়ঘর। বিদেশী ইনভেস্টররা এর ফায়দা নেবেন না?
দেখুন আমেরিকার ফিনান্সিয়াল রিপোর্ট প্রকাশ করার পর যে শেয়ার মার্কেট বুল রান নেবে সেটার আঁচ পাওয়া গিয়েছিল। আর তেমনটাই হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মাথাব্যাথা এখন অনেকটাই থিতু। কারণ আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ জানিয়েছে যে গত জুনে যে ইনফ্লেশন রেট ছিল ৯.১% সেটাই এই বছর জুনে কমে এসে দাঁড়িয়ে ৩%-এ। ফলে বিনিয়গকারিরা চিন্তামুক্ত। উপরি পাওনা হিসেবে মিলেছে দেশের ব্যবসায়ীদের প্রকাশিত রিপোর্ট কার্ড। ফার্স্ট কোয়ার্টারে তারা কতটা আর্ন করেছে বা লস করেছে, সেই সংক্রান্ত একটা রিপোর্ট প্রকশিত হয়েছে। যার পারফরম্যান্সে আশার আলো দেখছে দেশীয় বাজার। আর এই দুই কারণেই ছুটছে শেয়ার সূচক, মত বিশেষজ্ঞদের।
প্রচুর ফরেন ইনভেস্টমেন্ট, আমেরিকার ফিনান্সিয়াল রিপোর্ট এবং দেশীয় ব্যবসায়ীদের ফার্স্ট কোয়ার্টারে প্রকাশিত রিপোর্ট- ভারতের বাজারকে দুর্ধর্ষ গতিতে চুটিয়ে নিয়ে চলেছে, এটুকু ক্লিয়ার। কিন্তু সবার আগে এটা ক্লিয়ার হওয়া প্রয়োজন, যে মার্কেট এই সময় বুল রানে রয়েছে। এটা কি ইনভেস্টমেন্টের সঠিক সময়? একেবারেই না। বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়ে রীতিমত ওয়ার্নিং দিয়ে বলছেন, এই সময়টা শেয়ার কেনার একেবারে সঠিক সময় নয়। দেখুন শরীরে অ্যাড্রিলানিনের মাত্রা বেশি হলে কি হয়? আপনি অনেক বেশি এনারজাইজড থাকেন? তারপর আসতে আসতে সেই মাত্রা কমতে শুরু করলে আনার এনার্জি কমতে থাকে। শেয়ার মার্কেটে এখন আড্রিনালিন মাত্রা বেশি- তাই ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে সূচক। কিন্তু এই সুখ খুব বেশিদিনের নয়। শীঘ্রই একটা অস্থিরতা তৈরি হবে। তবে, ভালো লাভের অঙ্ক ঘরে তুলতে চাইলে শেয়ার বিক্রি করতেই পারেন। কিন্তু এখানেও রয়েছে একটা সমস্যা। বুল রান দেখে সবাই লাভের গুড় ঘরে তুলতে গেলে সমস্যা। একনাগাড়ে সবাই শেয়ার বেচতে শুরু করলে খুঁটি নড়বরে হবে। চুরমার হয়ে যাবে শেয়ার মার্কেটের রেকর্ড। হুমড়ি খেয়ে পড়বে সূচক। আর এখান থেকেই যে প্রশ্নের উত্তরটা ক্লিয়ার হওয়া প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে এটা ভারতীয় ইকনমির জন্য ঠিক কীরকম ইঙ্গিত দিচ্ছে?
শেয়ার মার্কেটের এই ওঠানামা ভারতের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। বুল রানের সময় শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে ইনভেস্টরদের আত্মবিশ্বাস। হাই রিস্ক থাকা দেশের বাজারের উপর বাজি ধরে হিউজ অ্যামাউন্টের টাকা ইনভেস্ট করতেও তারা পিছু পা হন না। সেটা দেশের ইকোনমিক ডেভল্পমেন্টের জন্য একটা পজিটিভ সাইন। কিন্তু অনেক সময়ই এই ধরনের রিস্ক ব্যাকফায়ার করে। সেটাই কি হতে চলেছে ভারতের বাজারের সাথে?
এই বছরের মধ্যেই ফাস্টেস্ট গ্রোইং ইকোনমির দেশগুলোর তালিকায় নাম লেখাতে চলেছে ভারত। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল আউটপুটও বেশ ভালো। মোটের উপর ভারতের বাজার সমন্ধে যে পূর্বাভাস রয়েছে তা বেশ ভালোই। আর ঠিক সেই কারণেই বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ব্রাইট স্পট হিসেবে দেখছে ভারতকে। ভারতের বাজারকে নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী বিনিয়োগকারীরা। এবার তাদের এই ভরসার জায়গাটা যাতে অক্ষুন্ন থাকে সেটা এনসিওর করার দায়িত্ব সরকারের। সুযোগের সদব্যবহার করে লাভের অঙ্ক ঘরে তুলতে হবে। আর তেমনটা না হলে, তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে শেয়ার বাজার। মার্কেটের বুল রান ইন্ডিয়ান ইকোনমিতে কী প্রভাব ফেলতে পারে বলে আপনার মনে হয়? জানান কমেন্ট বক্সে। লাইক ও শেয়ার করুন। দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।