Trending
সম্প্রতি মুকেশ অম্বানি এমন একটি স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, যা বিশ্ব জুড়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেছেন, ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতের ইকোনমি পৌঁছে যেতে পারে ৪০ ট্রিলিয়ন ডলারে। আবার অন্যদিকে গৌতম আদানি বলেছেন, ভারতের ইকোনমি থামবে ৩০ লক্ষ কোটি-তে। এখন বিষয়টা হচ্ছে, আদৌ কি ভারত এই দুর্দান্ত ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের সাক্ষী থাকতে পারবে? আসুন, আজকের প্রতিবেদনে ছোট্টর পর সেই আলোচনা সেরে নেওয়া যাক।
বর্তমানে ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি, ৩.৪৬৯ ট্রিলিয়ন ডলারের। দেশের ইকোনমিক গ্রোথ হচ্ছে প্রায় ৮.৫ শতাংশের কাছাকাছি। ইন্ডিয়ান ইকোনমি টেক্কা দিয়েছে ব্রিটেনকে। এখন ভারতের সামনে রয়েছে চিন, আমেরিকা, জাপান এবং জার্মানি। মনে করা হচ্ছে, সব অঙ্ক যদি ঠিক থাকে তাহলে ভারতের পক্ষে এশিয়ার অর্থনীতিকে ডমিনেট করা খুব একটা কঠিন হবে না। এবার কথা হচ্ছে কেন আদানি বা অম্বানি এই ধরণের ফোরকাস্ট করলেন, সেটা বলা যাক। অম্বানি এযাবত কাল যে তিনটে বিষয়ে নজর দিয়েছেন, সেগুলি হল ক্লিন এনার্জি, বায়ো-এনার্জি এবং ডিজিটাল রেভোলিউশন। অম্বানি মনে করেন, এই তিনটে সেক্টর ভারতের ইকোনমিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করবে। আজ ভারতের ৬ লক্ষ গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে ভারত। যে কারণে দেশে পার ক্যাপিটা ইলেকট্রিক কনসাম্পশন ৮০০ ওয়াট থেকে বেড়ে পৌঁছে গিয়েছে ১৩০০ ওয়াটে। মনে করা হচ্ছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে ভারতের টোটাল এনার্জি কনসাম্পশন বাড়বে ১২৮%। অর্থাৎ ভারতের প্রয়োজন পড়বে এখনকার থেকে আরও বেশি পরিমাণ এনার্জি রিসোর্স ব্যবহার করার। আর যে কারণে সরকার লক্ষ্য রেখেছে রিনিউয়েবল এনার্জির পরিকাঠামোয়। তার মধ্যে যেমন রয়েছে সোলার পিএলআই স্কিম, তেমনই সোভেরেন গ্রিন বন্ডস। এছাড়াও আরও বেশ কিছু প্রোজেক্ট আসছে, যাদের লক্ষ্য থাকবে শুধুই রিনিউয়েবল এনার্জি। আর যে কারণে রিনিয়েবল এনার্জি সেক্টরে মিঃ অম্বানি বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছেন। কোন দেশ যদি নিজের রিসোর্স এবং তার ভবিষ্যতের শক্তপোক্ত কোন প্ল্যান প্রোগ্রাম তৈরি করতে না-পারে, তাহলে ইকোনমি ডাউন হতে বাধ্য। কিন্তু রিনিউয়েবল এনার্জিকে ভবিষ্যৎ ধরেই এগোচ্ছেন অম্বানি।
এবার আসা যাক ডিজিটাল রেভোল্যুশনের কথায়। ডিজিটাল রেভোল্যুশনের সঙ্গে ভারত নিজের ইকোনমিকে সমৃদ্ধ করছে। এখন, ভারত একমাত্র দেশ যে ডিজিটাল ইকোনমির গ্রোথ সবচেয়ে ভালো রাখতে পেরেছে। অদূর ভবিষ্যতে, ডিজিটাল ইকোনমি পৌঁছে যেতে পারে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে। এমনকি ভারতকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনমি তৈরিতে সাহায্য করবে ডিজিটাল ইকোনমি। তার জন্য সরকার বেশ কিছু রিফর্ম নিয়ে এসেছে। যেমন ওপেন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কমার্স যেমন ইউপিআই। এরই সঙ্গে ডিজিটাল ইনভেস্টমেন্ট আরও বেশি করে বাড়ানো, তার সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের রমরমা বাড়াতে যেভাবে ভারত সরকার কাজ করছে, তাতে ইন্ডিয়ান ইকোনমিতে ডিজিটাল পরিষেবা খুব বড় রোল প্লে করবে। সরকার চাইছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার ১০০ তম বছরে ভারত একটা ডেভেলপড কান্ট্রি হিসেবে নিজের জায়গা তৈরি করে নিক। বুস্ট করুক নিজের ইকোনমিকে বিদ্যুৎ গতিতে। আর এই কারণে আগামী ২৫ বছরকে ভারত সরকার অমৃতকাল বলছে। এছাড়াও ট্যাক্স রেভেনিউ-তে রেকর্ড তৈরি করেছে ভারত। তার জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের পদক্ষেপের প্রশংসা করা হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ট্যাক্স রেভিনিউ ৩৪% বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২৭.০৭ লক্ষ কোটি টাকায়। অতিমারির ধাক্কা খেলেও ভারত জিএসটি-র মাধ্যমে ইকোনমিক গ্রোথ বজায় রাখতে দারুণ ভূমিকা পালন করছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে কর্পোরেট ট্যাক্স ৮.৬ লক্ষ কোটি ছুঁয়েছিল। অর্থাৎ সবদিক থেকে ট্যাক্স রেভিনিউ-এর অঙ্ক ভালো হওয়ার কারণে ইকোনমিকালি অনেকটা গ্রোথ বাড়ছে কেন্দ্রের। ডাইরেক্ট ট্যাক্স কালেকশন যেখানে ৪৯% বেড়ে রেকর্ড তৈরি করেছে, সেখানে ইনডিরেক্ট ট্যাক্স কালেকশন বেড়েছে ২০%। এমনকি আইএমএফ পর্যন্ত ভারতকে ব্রাইট স্পট বলে উল্লেখ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার যদি নিজের প্ল্যান মাফিক এভাবে গ্রোথ ধরে রাখতে পারে তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ ইকোনমি এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ ইকোনমি হয়ে উঠতে পারবে। পিছনে ফেলে দেবে জাপানকে।
এমনিতেই চিনের মার্কেটের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপে চায়নার পজিশন খুব একটা সুবিধাজনক জায়গায় নেই। ফলে চিনের মার্কেট থেকে ধীরে ধীরে ইনভেস্টররা নিজেদের ব্যবসা গোটানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ভারত যদি নিজের সার্বিক ডেভেলপমেন্ট ধরে রাখতে পারে তাহলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতে ইনভেস্ট করতে দ্বিধা করবে না। এমনটাই জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফাইনান্স। একইসঙ্গে দ্য বোস্টন গ্লোব জানাচ্ছে, চিনের মার্কেটের অবস্থা তেমন একটা ভালো নয়। এছাড়াও দেশের সার্বিক সাফল্য আসতে কাজ করছে ইন্ডিয়ার ফরেন রিলেশন এবং জিও-পলিটিক্যাল স্ট্যান্ড। দেশের আরেকটি গ্রোথ লক্ষ্য করা গেছে মোবাইল এক্সপোর্টের ক্ষেত্রেও। এই অর্থবর্ষে ভারত ৪২ হাজার কোটি মোবাইল এক্সপোর্ট করেছে। এমনকি ২২.৯৩ কোটি গাড়ি ম্যানুফ্যাকচার করেও নতুন রেকর্ড গড়েছে ভারত। গাড়ির প্রোডাকশন বেড়েছে ৫,৭০০ গুণ! দেশের বাজারে বেড়েছে গাড়ি কেনার হিড়িক। একইসঙ্গে বিদেশেও এক্সপোর্ট হচ্ছে সেই গাড়ি। আর সব দিকে বিচার করলে দেখা যাচ্ছে, ভারত এখন বিদেশি বিনিয়োগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। ফলে আশা করাই যায়, যে মার্কেট গ্রোথ যদি এভাবেই বাড়তে থাকে তাহলে ২০৪৭ সালে ভারত ৪০ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করলেও করতে পারে। আপনার কি মনে হয়? অম্বানির পূর্বাভাস আদৌ কি কাজে দেবে? আদৌ কি ভারত পারবে ৪০ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি ছুঁতে?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ