Daily
আফগানিস্তানে নতুন তালিবান সরকার আসা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবে সময় যেভাবে গড়াবে তালিবান প্রশ্নে ভারতের উদ্বেগের মাত্রাও ততই বাড়বে।
মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ায় আফগানিস্তানের ভৌগলিক-সামরিক অবস্থান এমন একটা পর্যায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে যেখান থেকে ভারতের মাথাব্যথার কারণটা শুরু হয়েছে। কেননা এই আফগানিস্তানের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে ভারতের চিন ও পাকিস্তান সংক্রান্ত বিদেশ নীতি। স্বভাবতই সালমা বাঁধের জল থেকে যে শুধু জলবিদ্যুৎই উৎপন্ন হবে তাই নয়, সেই বিদ্যুতে শক কার গায়ে এসে লাগবে তা এখনই হলফ করে বলতে পারছে না নয়া দিল্লির সাউথ ব্লক। সাউথ ব্লকে মন্ত্রী পরিষদের নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির ঘনঘন সভা সেই সম্ভাবনাকেই জোড়াল করছে বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন।
ভারত খুব ভালো করেই জানে তালিবানরা যদি আমেরিকাতে হামলা না করার প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলে এই অঞ্চলের রাজনীতি নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের কোন মাথাব্যথাই থাকবে না। ভারতীয় কূটনীতিকদের একাংশ মনে করছেন, আমেরিকার যদি মাথাই না থাকে তাহলে মাথাব্যথার ওষুধও লাগবেনা। সেক্ষেত্রে আফগানিস্তান কিন্তু ভারতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ নিরাপত্তা পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্য রাশিয়া এবং চিন যেভাবে তালিবান সরকারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে ভারতের উদ্বেগ কমবে তো নাই উল্টে বাড়বে বলেই ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত।
এ তো গেল রাজনৈতিক আশঙ্কার কথা। ভারত সরকারের মাথাব্যথার প্রধান কারণ সেদেশে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের ভবিষ্যৎকে সুনিশ্চিত করা। অতীতে ভারত আফগানিস্তানকে বিশেষত ২০১১ সালের পর থেকে গত এক দশক ধরে যেভাবে বাণিজ্যিক করিডোর হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে পাকিস্তানকে বাইপাশ করে, সেটা এবার আদৌ থাকবে তো? আর্থিক অস্থিরতা তৈরি হলে তা উল্টে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে নাতো ভারতের কাছে? এমন প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। পাকিস্তান কিংবা চিন তালিবান প্রশাসনকে ব্যবহার করবে নাতো ভারতের বিরুদ্ধে? বিশেষ করে উপমহাদেশে মাদক অর্থনীতির বেশিরভাগটাই নিয়ন্ত্রিত হয় পাকিস্তান থেকেই। সেক্ষেত্রে উত্তরএ কাশ্মীর থেকে পূর্বে আসাম পর্যন্ত আবার তৈরি হবে নাতো অস্থিরতা?
ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর অবশ্য দৌত্য চালানোয় কোন খামতি রাখছেন না। তবে সম্প্রতি ভারতীয় বিদেশমন্ত্রীর মস্কো সফরে ভারতের উদ্বেগকে রাশিয়া যেভাবে ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে, তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশ্লেষকদের একাংশ। তাই হিন্দুকুশ পর্বতে সূর্য উঠলে সেই আলোয় ভারত আলোকিত হবে না অন্ধকারে ডুবে যাবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন।
ব্যুরো রিপোর্ট