Trending
ভারত এখন বিশ্বগুরুর পথে। সেই দিন আর নেই। যখন ভারত নিজের সামরিক শক্তিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য অন্য দেশ থেকে ইমপোর্ট করাটা চালিয়ে যাচ্ছিল। আজ উল্টে গেছে পাশা। আজ অন্য দেশ ভারতের কাছ থেকে হাতিয়ার কেনার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে। আর এটার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে হতে চলা ভারতের অন্যতম বড় ডিফেন্স ডিল। এই ডিল ১০০ কোটি বা ২০০ কোটির নয়। এই ডিলের অঙ্ক ছুঁতে পারে ২০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত। তাহলে কি ভারত এবার ধীরে ধীরে ডিফেন্স এক্সপোর্টারের জায়গা দখল করতে চলেছে?
ব্রহ্মোস মিসাইলের নতুন অর্ডার পেয়েছে ভারত। ফিলিপিন্সের পর এবার ইন্দোনেশিয়া এই মিসাইল কেনার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে। এই বছরের শেষেই, ইন্দোনেশিয়া এই মিসাইলের অ্যান্টি শিপ ভ্যারিয়েন্ট কিনতে চাইছে। ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেসের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার কাছে ব্রহ্মোস মিসাইল বিক্রির ব্যপারে কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল- যা ভারত এবং রাশিয়া একযোগে তৈরি করেছে। এই ডিল আগেই হতে পারত। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি তেমন একটা ভালো নয়। আর যে কারণে, এই ডিল কমপ্লিট হবে বছরের শেষে। তারপরেই ইন্দোনেশিয়া এশিয়ার দু’নম্বর দেশ হবে, যে ভারতের কাছ থেকে সামরিক অস্ত্র কিনবে। ইন্দো-রাশিয়ান ভেঞ্চার ব্রহ্মোস এরোস্পেস ইন্দোনেশিয়াকে এই ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল বিক্রি করার জন্য প্রস্তুত। ফিলিপিন্সের সঙ্গে অস্ত্র সরবরাহ করার এক বছরের মধ্যে। তারপরেই শুরু হয়েছে যাবতীয় চর্চা। তাহলে কি এবার ভারতডিফেন্স এক্সপোর্টেও দাদাগিরি দেখিয়ে যাবে?
একটা সময় ছিল যখন ভারত শুধু অস্ত্র আমদানিই করত। কিন্তু ভারত এখন অস্ত্রনির্মাণকারী অন্যান্য দেশের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে অ্যাডভান্সড অস্ত্র বানানোর কাজে হাত লাগিয়েছে। আর যে কারণেই ইন্দোনেশিয়া ভারতের থেকে অস্ত্র কিনতে চাইছে। তার কারণ, ইন্দোনেশিয়া এখন নিজের সামরিক ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার ব্যপারে উঠেপড়ে লেগেছে। দুই দেশের মধ্যে কথাবার্তা অনেকটাই এগিয়েছে। ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির ব্যাপারেও জানানো হচ্ছে ইন্দোনেশিয়াকে। জানা যাচ্ছে, সেই সূত্র ধরেই এই বছরের শেষে বা সামনের বছরের শুরুতেই এই ডিল ফাইনাল হয়ে যাবে। এখানেই উল্লেখ করা প্রয়োজন, ব্রহ্মোস মিসাইল কেনার ব্যপারে ইন্দোনেশিয়া ২০১৮ সাল থেকেই উদগ্রীব ছিল। তারই মধ্যে প্রথম ফিলিপিন্স, যে দেশ ভারতের থেকে ব্রহ্মোস ক্রুজ মিসাইল কেনার জন্য ভারতের সঙ্গে ৩০.৭৫ কোটি ডলার অঙ্কের চুক্তি করে। এমনিতেই তেজস বিমানের দৌলতে মালয়েশিয়া এখন নিজেদের সামরিক ক্ষমতার দিক থেকে একটু শক্তিশালী হল বলেও মনে করা হচ্ছে। কারণ মালয়েশিয়া নিজেদের ব্যবহার করা পুরনো বিমানগুলো পাল্টানোর কথা অনেকদিন ধরেই ভাবছিল।
তবে এখানেই শেষ নয়। ফিলিপিন্স নিজেদের সামরিক ক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্য অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার কেনার ব্যপারেও ভাবনা-চিন্তা করছে। আসলে দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের সঙ্গে ফিলিপিন্সের একটা কলহের আবহ অনেকদিন ধরেই রয়ে গিয়েছে। মেনলি- সেটা হল টেরিটোরিয়াল ডিসপুট। আর যে কারণে ফিলিপিন্স সরকার নিজের সেনাদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র তুলে দেবার কথা ভাবছে। আর যে কারণে ফিলিপিন্স নিজেদের পুরোনো হেলিকপ্টারগুলো পাল্টে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা গিয়েছে, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব ছড়ানোর জন্য ভারতের ব্রহ্মোস এরোস্পেস ইন্দোনেশিয়া সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ২০০ মিলিয়ন ডলারে বেচার জন্য প্রস্তুত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ডিফেন্স এক্সপোর্ট ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে অঙ্কটা ৫ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাবার টার্গেট দিয়েছেন। আর যে কারণে এক্সপোর্ট বাড়ানোর জন্য সেদিক থেকে প্রস্তুত রয়েছে ব্রহ্মোস কর্পোরেশন। মূলত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং আরব রাশিয়া এবং ভারতের যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই ব্রহ্মোস মিসাইল কেনার ব্যপারে খুবই আগ্রহ দেখাচ্ছে। আর যে কারণে মনে করা হচ্ছে, ভারতের জন্য ইন্দোনেশিয়া ডিফেন্স সেক্টরে খুব গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতার ভূমিকা পালন করবে। তবে হ্যাঁ, এই ধরণের ডিল কিভাবে হচ্ছে তার খুঁটিনাটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি ঠিকই। আর শুধু ব্রহ্মোস নয়, শোর বেসড মিসাইল কেনার ব্যপারেও দেখা যাচ্ছে উৎসাহ। সেক্ষেত্রে কেনার খরচ ২০০ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার ছুঁতে পারে।
এবার প্রশ্ন করতে পারেন, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপিন্সের এতো সামরিক অস্ত্র কেনার কারণ কি? আর কিছুই নয়। দক্ষিণ চিন সাগরে যত দিন যাচ্ছে, ততই চিনের আগ্রাসী মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠছে। চিনের উপস্থিতি তাই এই দুটো দেশের জন্য বেশ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপিন্সের মতন দেশগুলি এখন সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধির দিকেও নজর দিচ্ছে। আর এই সব দেখেই আবারও প্রমাণ হচ্ছে যে, ভারত অস্ত্রশস্ত্র তৈরির ব্যপারে আর পরনির্ভর হতে চায় না। তাই আত্মনির্ভর ভারত হবার জন্য অন্যান্য সেক্টরের পাশাপাশি নিজের ডিফেন্স সেক্টরেও ভালোরকম ছাপ রাখার ব্যপারে উঠেপড়ে লাগে মোদী সরকার। আর সেই উদ্দ্যেশ্য যে পূর্ণ হবার পথে, সেটা হয়ত এতক্ষণে আপনাদের কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ