Market
হয়ত আর কয়েক বছর। তারপরেই বিদেশের রাস্তায় দেখা যেতে পারে ভারতে ম্যানুফ্যাকচারিং হওয়া গাড়ি। এখন ইন্ডিয়ার অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি বিশ্বে ফোরথ পজিশনে রয়েছে। আর কয়েক বছরের মধ্যে ভারত হয়ত সেকেন্ড পজিশনে চলে যাবে শুধুমাত্র এই ইন্ডাস্ট্রির ওপর নির্ভর করেই। কিন্তু ইন্ডিয়ার অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি কেন এভাবে ছড়িয়ে পড়ছে জানেন? তার অন্যতম কারণ হল কমপ্যাক্ট কার্স। মানে আমেরিকা, ইউরোপ এবং আফ্রিকার মতন জায়গায় বড় বড় গাড়ি কোম্পানিগুলো হয়ত ইন্ডিয়ার কমপ্যাক্ট কার্সে কনসেনট্রেট করছে। জাপানে হয়ত আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ভারতে তৈরি কমপ্যাক্ট কার্স লঞ্চ হতে পারে। আর যেভাবে ইন্ডিয়ার অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি গ্লোবাল মার্কেটে নিজের ছাপ রাখছে, তাতে এটা পরিষ্কার যে কয়েক বছরের মধ্যেই ইন্ডিয়া অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে বড় একটা বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করে নেবে গোটা বিশ্বে। কেন জানেন? আসুন, আজ মার্কেট ব্যাটলে তুলে ধরব কিভাবে ইন্ডিয়ার অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ধীরে ধীরে অন্যান্য জায়ান্ট কার কোম্পানিগুলোকে পিছনে ফেলে দিচ্ছে। শুরু করা যাক আজকের প্রতিবেদন।
একটু পেছনদিকে তাকানো যাক। দেশ স্বাধীন হবার আগে যদি তাকানো যায়, তখন দেখা যাবে ইন্ডিয়ায় অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি বলে কিছু ছিলই না। কারণ, তখন শুধু গাড়ি মেনটেনেন্স করা ছাড়া তেমন কিছু ছিলই না। আর আপনি যদি ১৯৪৭ থেকে কাট টু ২০২২ –এর দিকে তাকান, তাহলে দেখতে পাবেন, ৭৬ বছরে কিভাবে ইন্ডিয়া অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপ করেছে। আর কিভাবে নিজের জায়গা ধীরে ধীরে গ্লোবাল মার্কেট দখল করতে চলেছে। বর্তমানে ভারত ১২৫টি দেশে গাড়ি এক্সপোর্ট করছে। কিন্তু তার জন্য সাধুবাদ জানাতেই হয় হিন্দুস্তান মোটরসকে। কারণ হিন্দুস্তান মোটরস প্রথম অ্যাম্বাসাডর গাড়ি তৈরি করে ভারতে অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রির চাকা প্রথম ঘোরাতে সাহায্য করে। এখন কলকাতা ছাড়া বাইরের রাজ্যে অ্যাম্বাসাডর গাড়ি তেমন একটা দেখা না-গেলেও একেই যে গোটা ভারতের অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রির ফাদার-মাদার বলা যায়, সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই সময় অ্যাম্বাসাডর গাড়ি তৈরি করার জন্য যে যে পার্টসের প্রয়োজন পড়ত, সেই সকল পার্টসগুলোকে ইমপোর্ট করা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকত না। কিন্তু আজ বদলেছে সময়। এখন আর পার্টস ইমপোর্ট করার প্রয়োজনই পড়ছে না। কারণ সবই এখন তৈরি হচ্ছে ভারতে। তার মানে সময় বাঁচছে, অন্যদিকে খরচও হচ্ছে অনেকটাই কম। ফলে ভারত এখন কমপ্যাক্ট কার্স তৈরি করতে খুব একটা ঝামেলার মধ্যে পড়ছে না। গ্লোবালি অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে ডমিনেট করার জন্য আত্মনির্ভর ভারতের এটা প্রথম ধাপ আমরা ইজিলি বলতে পারি। এবার বলি, কমপ্যাক্ট কার্স বলতে ঠিক কি বোঝায়? কমপ্যাক্ট কার্সের প্রথম ফিচার হল, কম জ্বালানি। আমাদের দেশে যে সকল গাড়ি ম্যানুফ্যাকচার করা হয়, সেই গাড়ির জন্য জ্বালানি খরচ কম হয়। অন্যদিকে বিদেশি গাড়িগুলোর দিকে যদি নজর দিই, তাহলে দেখব, যত তার বাহার তত জ্বালানি খরচা। আর যেভাবে গোটা বিশ্বে জ্বালানির দাম বাড়ছে, তারপর ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা বা জাপানের মত দেশগুলো কমপ্যাক্ট গাড়ির কথাই ভাবনাচিন্তা করছে। এর ফলে জ্বালানির পাশাপাশি কমবে দূষণের মাত্রা। কেন্দ্রীয় সরকার ২০২০ সালে বিএস সিক্স ইঞ্জিন বাধ্যতামূলক করে দেয়।
কিন্তু শুধু এই দুটো কারণ নয়। জ্বালানি এবং পলিউশন ছাড়া জ্বালানি সাশ্রয়, লাগজারি, আর সেফটির দিকটাও নজরে রাখা উচিৎ। বিদেশি গাড়িগুলো এই তিনটে ফিচারের দিকে অনেকটাই নজর রাখে। কিন্তু ইন্ডিয়ান গাড়ি এগুলো ছাড়াও নজর দিচ্ছে খরচের দিকে। তার অন্যতম কারণ, এখানকার জনসংখ্যা, এখানকার রাস্তাঘাটের অবস্থা। আর যে কারণে একটা তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, শুধু মারুতি ২০২১ সালে ২ মিলিয়নের বেশি গাড়ি এক্সপোর্ট করেছে। ভেবে দেখুন, একটা বিদেশি গাড়ির জন্য যেখানে শুধু প্রতি বছর সার্ভিস কস্ট পড়ে যায় ৮০ হাজার টাকার কাছাকাছি, সেখানে দেশে ম্যানুফ্যাকচারিং হওয়া গাড়ির সার্ভিস কস্ট পাঁচ বছরের জন্য নেমে আসে ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকায়। কিন্তু কখনই ভাববেন না যে, দামে কম তাই ভারতে তৈরি গাড়িগুলো মানেও অনেকটা কম হচ্ছে। কারণ, ভারতে যে গাড়িগুলো তৈরি হয় সেগুলোয় স্টিলের বডি থাকে। এখানকার পথঘাটের অবস্থার কথা জানেনই তো। স্টিলের বডি থাকার কারণে অ্যাক্সিডেন্ট হলেও ভারতীয় গাড়ির অবস্থা দুর্ঘটনা সামাল দিতে পারে। এছাড়াও ব্যবহার করা হচ্ছে:
-অ্যান্টি লক ব্রেকিং সিস্টেম (ABS)
-ইলেকট্রনিক ব্রেক ফোর্স ডিস্ট্রিবিউশন (EBD)
-ইলেকট্রনিক স্টেবিলিটি কন্ট্রোল (ESC)
-স্পিড ওয়ার্নিং (SW)
-টাইপ প্রেশার মনিটরিং সিস্টেম (TPMS)
আর এই প্রত্যেকটি ফিচারস দিচ্ছে ইন্ডিয়ান কার্স, একইসঙ্গে অন্যান্য বিদেশি জায়ান্ট কার কোম্পানিগুলো। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, যেখানে একটা মাহিন্দ্রা এক্সইউভি ৭০০ গাড়ি এই সব ফিচার দিয়ে দাম রাখছে ২৭ লক্ষের মতন, সেখানে মারসেডিজ বেঞ্জ প্রায় এই সবকটা ফিচার দিয়ে দাম রাখা হচ্ছে ২.৭১ কোটি টাকা। এমনকি এয়ারব্যাগের জন্য যেখানে আলাদা খরচা দিতে হচ্ছে বিদেশি গাড়িগুলোকে, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকার বাধ্যতামূলক করেছে মিনিমাম ৬-৭টা এয়ারব্যাগ। এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার আরও বেশ কিছু পলিসি এনেছে। তার মধ্যে ইমপোর্ট ডিউটি, স্ক্র্যাপেজ পলিসি, প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেন্টিভ স্কিম।
দিনের শেষে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের নজরকাড়া উদ্যোগের কারণে দেশে অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি দুর্দান্ত বুম করতে পেরেছে। তারও একটা পরিসংখ্যান দিয়ে আজকের প্রতিবেদন এখানেই শেষ করব। একটি তথ্য বলছে, ২০২১ সালে মানে গেল বছর জার্মানির মত বিগ অটোমোবাইল মেকারকে পিছনে ফেলে দিয়ে ইন্ডিয়া উঠে এসেছে চার নম্বরে। এমনকি মারুতি যেখানে প্রতিদিন আগে ৩ হাজার গাড়ি ম্যানুফ্যাকচার করত, এখন প্রতিদিন ৩২০০ গাড়ি ম্যানুফ্যাকচার করছে। আর এই সকল পরিসংখ্যান থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার হচ্ছে যে, আজ ইন্ডিয়ার অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ধীরে ধীরে গ্লোবালি ডমিনেট করার মত জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে। মার্কেটে ফরেন গাড়ি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রির কাছে হেরে যাচ্ছে বিদেশি কোম্পানিগুলো।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ