রাশিয়াকে মদত! রাশিয়ার সেনাদের সঙ্গে ব্যবসা! এসব করলে কোপ পড়তে পারে ভারত, আমেরিকার ব্যবসায়। এমনকি সব ধরণের আর্থিক সাহায্য আমেরিকা বন্ধ করে দিতে পারে বলেও এসেছে হুঁশিয়ারি। এই মর্মে চিঠি পাঠিয়েই এবার সতর্ক করল বাইডেন প্রশাসন। আমেরিকার অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, ভারতের যে ব্যাঙ্কগুলো রাশিয়ার সেনাদের সঙ্গে ব্যবসা করছে তারা ভবিষ্যতে আর্থিক সাহায্য নাও পেতে পারে। ভারতের কাছে এই চিঠিই পাঠিয়েছেন মার্কিনী সহকারি অর্থসচিব ওয়ালি আদেয়েমো। কিন্তু চিঠিতে কি এমন বলা আছে যা বেশ চিন্তায় ফেলবে ভারতকে? চলুন সেই প্রতিবেদনের দিকেই নজর দেওয়া যাক ডিটেলে।

আমেরিকার অর্থমন্ত্রক চিঠি পাঠিয়েছে ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশন এবং ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন বা ভারতীয় শিল্প সমিতিকে। সেই চিঠিতে কড়া ভাষায় কিছুটা হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে আমেরিকা। বলা হচ্ছে, রাশিয়ার সেনাবাহিনী মাইক্রো ইলেকট্রনিক্স সহ মেশিন টুলসের মত বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে থাকে। আর আমদানি করার জন্য তাদের প্রয়োজন লেনদেনের জায়গাটা সহজ রাখা। তাই রাশিয়ায় থাকা বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মস্কোকে নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। তাহলে কি এবার ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলোর ওপর পড়তে চলেছে খাঁড়ার ঘা? ২০২২ সাল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আমেরিকা মনে করছে এই সংঘাতের মাস্টারমাইন্ড খোদ রাশিয়া। তাই রাশিয়ার সঙ্গে যে যে দেশগুলোর সম্পর্ক মজবুত, সেই সেই দেশগুলোকে ভালো চোখে দেখছে না আমেরিকা। যদিও এসবের কোন কিছুই ভারত করে নি। বরং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক যত দিন এগিয়েছে, তত গভীর হয়েছে।

আমেরিকার চোখ রাঙানিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দীর্ঘ সাক্ষাৎ সেরেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে। বহু জল্পনা তখন মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। আমেরিকা ভালো চোখে না দেখলেও ভারত সাফ জানিয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে ভারত ব্যবসাকে আরও কতদূর সমৃদ্ধ করতে পারে এখন সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। ভারত যখন এভাবেই রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখা নিয়ে ডোন্ট কেয়ার মেন্টালিটি বজায় রাখছে, তখনই আমেরিকার অর্থ মন্ত্রক থেকে উড়ে এলো সতর্কবার্তা। খেয়াল রাখবেন, রাশিয়া যাতে আর্থিক ভাবে ভেঙে পড়ে তার জন্য সবরকম চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে আমেরিকা। ফলে রাশিয়ান সেনাদের সঙ্গে যে সকল বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা করছে, তাদের ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিনী প্রশাসন। একইসঙ্গে আমেরিকা খুঁজতে শুরু করে রাশিয়ার সেনাদের সঙ্গে কোন কোন বিদেশি ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরেই কিন্তু ভারতের কাছে উড়ে এলো এই চিঠি।

তবে হ্যাঁ, একটা বিষয় ঠিক। ভারতের এখন যা পজিশন তাতে আমেরিকাও ভালো করে জানে, চাইলেই আমেরিকা ভারতের ব্যাঙ্কগুলোকে কিছুই করতে পারবে না। কারণ প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকশনে লড়ার জন্য ভয়ঙ্কর সাপোর্ট করেন আমেরিকায় থাকা প্রবাসী ভারতীয়রা। তাঁদের একটা অর্থ সরকার তৈরির পিছনে অন্যতম চাবিকাঠি। তাই ভারতের কাছে মার্কিনী হাওয়ায় উড়ে আসা সতর্কবার্তা যে খুব বড় কোন ইস্যু নয় সেটা বলাই যায়। ভারত এই বিষয়টা নিয়ে খুব যে উদ্বেগে রয়েছে এমনটা কিন্তু নয়। কারণ আমেরিকা ঐ চিঠিতেই আবার জানিয়েছে যে, ভারতের সঙ্গে আমেরিকা কিভাবে নিজেদের আর্থিক জায়গাটা মজবুত করবে সেই বিষয়ে এখনো রয়েছে তাদের অসীম আগ্রহ। মার্কিনী সহকারি অর্থসচিব ওয়ালি আদেয়েমো জানিয়েছেন, গত এক দশকে আমেরিকা এবং ভারতের ব্যবসা পৌঁছে গিয়েছে ১১০ শতাংশে। দুটো দেশই একে অপরের বৃহত্তর ব্যবসা বাণিজ্যের অংশীদার। কিন্তু আমেরিকার চোখের বালি রাশিয়া। তাই যেভাবে হোক এখন রাশিয়ার রফতানিকে আটকে দিয়ে তাদের অর্থনীতির ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে চাইছে তারা। আর তাই রাশিয়ার সেনাদের সঙ্গে ব্যবসা করা নিয়ে এক মিঠে কড়া চিঠি এসেছে ভারতের কাছে। ৩০ দিনের মধ্যে ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিক্রিয়াও জানতে চেয়েছে তারা। তারা বলেছে, রাশিয়ার সেনাদের সঙ্গে বৈঠক সারলেই আর্থিক সাহায্য হারাতে পারে ভারত। তবে এই বিষয়ে ভারত এখনো কোন প্রতিক্রিয়া দেয় নি। আপনারা কি মনে করেন যে ভারতের অর্থনীতি মনে হলেই আমেরিকা পঙ্গু করে দিতে পারে? জানান কমেন্ট বক্সে।

বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ