Trending
এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না- লিখেছিলেন নবারুণ। কিন্তু গাজা বা ইজরায়েলের মানুষ বাধ্য- এই মরন ফাঁদে জর্জরিত দেশকে নিজেদের দেশ মেনে নিতে। সাধারণ মানুষের কাছে কোন উপায় নেই। বিশ্ব অর্থনীতিতে সংকট। ভারতের স্ট্যান্ড পয়েন্ট নিয়ে সংকট। সর্বোপরি জি২০-তে ঢাকঢোল পিটিয়ে ইকোনমিক করিডোর নিয়ে যে ঘোষণা হয়েছিল, সেখানে নামল সংকট। তাহলে কি এবার নতুন করে ভারতীয় অর্থনীতি ধাক্কা খেতে চলেছে ভালোরকম? ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনের সংঘর্ষের আবহে কি এবার ভারতের একটি পদক্ষেপ প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করল নতুন ইকোনমিক করিডোর নিয়ে? মানে করিডোর তৈরির স্বপ্ন শুরুতেই শেষ? আজকের প্রতিবেদনে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব আমরা।
ওরা শুরু করেছে, শেষ আমরা করব। হামাসের অতর্কিত আক্রমণের পর ইজরায়েলের রোষ প্রকাশ পেল। কথাটা বলেছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ইতিমধ্যে হামাসকে সবক শেখাতে একে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে দুই দেশে এখন শুধু রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, বাতাসে ভাসছে বারুদের গন্ধ, চারিদিকে ছিন্নভিন্ন মানুষের মৃতদেহ। ইজরায়েল ইতিমধ্যে যেভাবে গাজায় আক্রমণ শানিয়েছে তারপর নতুন করে প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে। চারিদিকে শুধু বিধ্বংসী অবস্থা। ইজরায়েল এবং গাজায় মৃত্যু সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এরই মধ্যে আমেরিকা নতুন করে নাকটি গলিয়ে দিয়েছে। তারা ইজরায়েলকে সামরিক দিক থেকে সবরকমের সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে। যা দেখে কার্যত ফুঁসে উঠেছে ইরান সহ কয়েকটি দেশ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রয়েছেন প্যালেস্তিনীয়দের পাশে। রয়েছে চিন। আর এখানেই অকস্মাৎ প্লট পরিবর্তন করে সটান ইজরায়েলের পাশে দাঁড়াল ভারত। যে ভারত দীর্ঘদিন ধরে প্যালেস্তিনীয়দের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ইজরায়েলের এই ভূমি দখলের তীব্র বিরোধিতা করেছিল, আজ আকস্মিক এই বদলের কারণেই আশঙ্কা করা হচ্ছে, জি২০-তে মোদী যে ইকোনমিক করিডোর নিয়ে একটা দুর্দান্ত এজেন্ডা তৈরি করেছিলেন তার স্বপ্ন শুরুতেই শেষ হতে পারে।
পশ্চিম এশিয়া নিয়ে ভারত দীর্ঘদিন ধরেই কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখেছে। কিন্তু এমন যুদ্ধের আবহে হঠাৎ করে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়ালেন কেন প্রধানমন্ত্রী? এই প্রশ্নের উত্তর এখনো কেউ পায় নি। এমনকি দেশের অভ্যন্তরে কিছুটা অবাক হয়েছে মুখ্য বিরোধী দল কংগ্রেস। সোশ্যাল মিডিয়ায় ১৯৭৭ সালের একটি ভিডিও ফিরে এসেছে জোর চর্চায়। যেখানে দিল্লির একটি সমাবেশে বক্তৃতা দিয়েছিলেন বাজপেয়ী। সেই বক্তৃতায় বাজপেয়ী সাফ নিন্দা করেছিলেন ইজরায়েলিদের বিরুদ্ধে প্যালেস্তাইন, লেবাননে দখলদারির ভূমিকা নিয়ে। তিনি বলেছিলেন, ইজরায়েলের দখল করা ভূখণ্ড খালি করে দিতেই হবে। তাঁর বক্তৃতায় এটাও উঠে এসেছিল যে, সরকার বদল হলেও দিল্লি কূটনৈতিক ভাবে প্যালেস্তিনিয় জনতার পাশে থাকবে। খেয়াল রাখবেন, ৭৭-এর লোকসভা ভোটে কংগ্রেসকে হারিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। মোরারজি দেশাই-এর প্রধানমন্ত্রীত্বে বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। দাঁড়িয়েছিলেন দৃঢ় ভাবে। তাহলে মোদীর অবস্থান বদল কেন? আর তার জেরেই বা কতটা ক্ষতির মুখে পড়তে পারে ইকোনমিক করিডোরের স্বপ্ন?
ইজরায়েল ভারতের খুব গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য বন্ধু। বহু ভারতীয় কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে ইজরায়েলে। ইজরায়েলে ভারত বহু জিনিস রফতানি করে। তার মধ্যে যেমন রয়েছে চামড়া, সুতির পোশাক, সুতি, উলের পণ্য, ওষুধ, চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, পালিশ করা হিরে তেমনই আমদানি করে কৃষিকাজের নানান যন্ত্র, প্রতিরক্ষার সরঞ্জাম, জল শোধনের নানান যন্ত্রাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের দিকে নজর ঘোরালে দেখব, দুই দেশের বাণিজ্যের অঙ্কটা পৌঁছে গিয়েছে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকায়। এদিকে ইজরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ভালো রাখার তাগিদ থেকেই যেভাবে ইজরায়েলের পাশে প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়েছেন তারপরেই প্রশ্ন উঠল তাহলে কোথায় যেতে পারে ইকোনমিক করিডোরের স্বপ্ন? কারণ ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে যেমন ভারত ছাড়া আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স বা জাপানের মত দেশ, তেমনই আবার প্যালেস্তিনিয়দের পাশে দাঁড়িয়েছে তুর্কি, ইরান, মিশর, জর্ডন, আলজেরিয়া, ইয়েমেনের মত একাধিক দেশ। স্বাভাবিকভাবেই সৌদি আরবও এই সংঘর্ষের আবহে প্যালেস্তিনীয়দের পাশে রয়েছেন। আর এই সব দেখেই আশঙ্কা তাহলে হয়ত ভারত-পশ্চিম এশিয়া-ইউরোপ ইকোনমিক করিডোর বুঝি গোঁত্তা খেতে পারে।
কারণটা আর কিছুই নয়। সৌদি আরবের সঙ্গে ইজরায়েলের সম্পর্ক যাতে স্বাভাবিক হয়, সেদিকেই মধ্যস্থতা করেছিল আমেরিকা। এই ইকোনমিক করিডোর সেই চেষ্টার একটা দুর্দান্ত মাধ্যম হয়ে উঠত বলা যায়। চুক্তি অনুযায়ী নিরাপত্তার দিকে সৌদি আরবকে সবথেকে বেশি সাহায্য করত আমেরিকাই। এমনই খবর জোদপ্যা গিয়েছিল। ইকোনমিক করিডোরের প্রকল্প শুরু হলে সৌদি আরব রেল লাইন পাতার জন্য যাবতীয় সাহায্য পেত পশ্চিমা দেশগুলির থেকে। আমেরিকা এবং ইউরোপ এই ইকোনমিক করিডোর নিয়ে আশাবাদী ছিল কারণ এই করিডোরের মাধ্যমেই ইজরায়েলের নাগাল পেয়ে যেত তারা। কিন্তু পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তারপর কার্যত এই স্বপ্নটাই না অধরা থেকে যায়। মনে করা হচ্ছে, ইজরায়েল এবং প্যালেস্তিনীয়দের মধ্যে যুদ্ধ সহজে মেটার নয়। আর এই যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদী হলে কার্যত পশ্চিম এশিয়ার ব্যবসা বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়বে। এমনিতেই অশোধিত তেলের দাম ফের বাড়তে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে। ফলে ভারতে আবার মূল্যবৃদ্ধির ছেঁকা লাগতে পারে। এমনকি ভারতের সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে যে বাণিজ্যিক স্থিতাবস্থা ছিল সেটাও নষ্ট হতে পারে।
গাজার সাধারণ মানুষগুলোর কথা ভাবুন। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্ত সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, গাজার মানুষের মাথায় চরম বিপদ ঘনিয়ে আসছে। সেটা করেও ফেলেছেন তিনি। জল, খাবার, বিদ্যুৎ সমস্ত পরিষেবা বন্ধ। শুধু বোমা আর বারুদের শব্দ, লাশের পাহাড় জমছে এখানে-ওখানে। ইজরায়েল সরকার এবং হামাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের কারণে সাধারণ মানুষের প্রাণ চলে যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে পশ্চিম এশিয়ার এই যুদ্ধ যদি দীর্ঘমেয়াদী হয় তাহলে বিশ্ব জুড়ে নতুন করে সংকট ঘনিয়ে আসবে। যুদ্ধ পরিস্থিতি ছড়িয়ে পড়বে দুই দেশের সীমারেখা পেরিয়ে। কোথায় যাবেন সাধারণ মানুষ, কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বিশ্ব অর্থনীতি? আপাতত সেদিকে কোন দিশা দেখা যাচ্ছে না। আজকের প্রতিবেদন এখানেই শেষ করছি। যুদ্ধ থামুক। শান্তির আবহ ফিরে আসুক। সমৃদ্ধ হোক অর্থনীতি। লাইক করুন, শেয়ার করুন। আর নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। আর শেষে একটা কথা, ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের যুদ্ধ হঠাৎ বাঁধে নি। তার পিছনে রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস। বন্ধুরা, আপনারা যদি সেই বিষয়ে জানতে আগ্রহী হন তাহলে কমেন্ট বক্সে জানান। এই নিয়ে প্রতিবেদন আমরা করব। ভালো থাকুন, দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ